মুহিববুল্লাহ মুহিব :
সময় যতই যাচ্ছে ততই কমে আসছে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তার পরিমাণ। আগের মতো এখন তেমন সাড়া মিলছে না দাতা গোষ্টিগুলোর। যার কারণে সংকট তৈরী হতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, চলতি বছরে রোহিঙ্গাদের খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থানসহ নানা খরচ মেটাতে জেনেভায় যৌথ সাড়া দান পরিকল্পনা তথা জিআরপি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলেও এখনো তার কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। এর ফলে রোহিঙ্গাদের মানবিক সেবা প্রদানে বেগ পেতে হচ্ছে সরকার ও জাতিসংঘকে। তার উপর রোহিঙ্গাদের সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে অপব্যয়ের অভিযোগ তুলেছেন দেশীয় এনজিও সংস্থার কর্মকর্তারা।
রোহিঙ্গাদের আপত্তিতে একদিকে বন্ধ হয়ে আছে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার (প্রথম পর্যায়)। তার উপর আগের প্রায় ১২ লাখের উপর নতুন যোগ হয়েছে ভারত ফেরত হাজারো রোহিঙ্গা। মাঝে মধ্যে নতুন করে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের ঘটনাও ঘটছে সীমান্তের নানা পয়েন্ট দিয়ে। এমতাবস্থায় রোহিঙ্গাদের সংখ্যা, চাহিদা ও সংকট বাড়লেও তাদের প্রতিদিনের চাহিদার যোগান কমে আসছে ক্রমশ। দাতা গোষ্টিগুলোর সেই আগের মতো জৌলস নেই রোহিঙ্গাদের প্রতি, বললেন খোদ রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা এনজিও কর্মকর্তারা।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি) সুত্রে জানা যায়, গত বছর বাজেট ছিল ৯৫১ মিলিয়ন ডলার এ বছর তা কমে দাড়িয়েছে ৯২১ মিলিয়ন ডলারে।
প্রত্যাবাসন সম্ভব না হওয়ায় রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে ২০১৯ সালের জন্য জয়েন্ট রেসপন্স প্লœান সংক্ষেপে জেআরপি বাংলায় যৌথ সাড়া দান পরিকল্পনা তৈরী করে তা জেনেভায় উপস্থাপন করা হয়েছে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারী জেনেভায় এ প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। এ প্রস্তাবনায় চলতি বছরের জন্য লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে নয়শো একুশ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সিভিল সোসাইটি’র আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য, খাদ্যসহ তাদের সবকিছুর ব্যয় বাড়ছে। তবে এখনো আগের মত সাড়া দিচ্ছে না দাতা সংস্থাগুলো। তাই সামনে সংকটের মুখে পড়তে পারে দেশ। কারণ দাতা সংস্থাগুলো যদি সাড়া না দেয় তাহলে সরকারকেই তাদের ব্যয় বহন করতে হতে পারে।
কোস্টট্রাষ্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বিদেশী কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে কেন আমরা কিছু তৈরি করতে পারলাম না। আদৌ কি সে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা আছে। বিদেশী কর্মকর্তার বিলাসীতায় অনেক টাকা খরচ করা হচ্ছে। নিজেদের কর্মকর্তা থাকলে তাহলে বিদেশীদের পেছনে এত খরচ হত না। ২০১৯ সালের শেষের দিকে বড় ধরণের সংকট হতে পারে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপের মুখপাত্র সৈকত বিশ^াস বলেন, রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থদের মান উন্নয়নের বিষয়টি মাথায় রেখে জিআরপি প্রণয়ন করা হয়েছে এবং দাতা গোষ্টীগুলো পুর্বের মতো সাড়া দিবে বলে আশা করছি।
উল্লেখ্য যে, শরণার্থী বিষয়ক কমিশনের হিসেব অনুযায়ী, প্রাথমিক নিবন্ধনে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ১২ লাখের মতো রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। দীর্ঘ দেড় বছরের বেশী সময় ধরে তাদের মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-