ওমর ফারুক হিরু, সিভয়েস
সমাজ ব্যবস্থাপনা আর আইনের প্রয়োগ দিন দিন উন্নত হলেও যেন কোনভাবেই বন্ধ হচ্ছে না যৌন নিপীড়নের ঘটনা।
এতে উদ্বিগ্ন অভিভাবক, শিক্ষার্থী, কিশোরি, গৃহপরিচালিকা, কোমলমতী শিশু এমনকি একইসাথে কাজ করা সহকর্মী পর্যন্ত। প্রতিনিয়ত ঘটা যৌন নিপীড়নসহ লোমহর্ষক ধর্ষণের ঘটনায় আতংকিত এই মানুষগুলো। এমনকি হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত ঘটছে। দেখা যায় এই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটছে কাছের আত্মীয় ও পরিচিত জনের মাধ্যমে। এতে করে অনেক সময় কাছের মানুষগুলোও কাছে থেকেও আস্থা হারিয়ে ফেলছে।
ধর্ষকেরা বন্দুকযুদ্ধে নিহতসহ প্রশাসন কঠোর আইন প্রয়োগ করলেও এ অপরাধ বন্ধ না হওয়ার ব্যাপারে সচেতন মহল বলছেন, যথাযথআইনের প্রয়োগ ও অসচেতনতার কারণে আশানুরূপ বন্ধ হচ্ছে না যৌন নিপীড়ন।
তারা বলছেন, এই সচেতনতা প্রথমেই সৃষ্টি হতে হবে নিজ পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু এই জায়গায় বরাবরেই ব্যর্থ রয়েছে। এমনকি অনেকে এখনও জানে না যৌন নিপীড়ন আর ধর্ষণের মধ্যে পার্থক্য কি? এছাড়া বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ কর্মসংস্থান কেন্দ্রে নেই যৌন নিপীড়নবিরোধী কমিটি ও গোপন অভিযোগ বক্স। যার ফলে যৌন নিপীড়নের স্বীকার অনেকে চাইলেও গোপনে অভিযোগ দিতে পারছে না। এছাড়া সচেতনতার অভাবে অনেকে যৌন নিপীড়নের পরেও নীরবে সহ্য করছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০১০ সালের উচ্চ আদালতে যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ যেসব প্রতিষ্ঠানে নারী রয়েছে ওসব প্রতিষ্ঠানে একজন নারীর নেতৃত্বে যৌন নিপীড়নবিরোধী কমিটি গঠন করা হবে। যেখানে নারী সদস্যের প্রাধান্য থাকবে। আর একটি বক্স থাকবে যে বক্সে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ রাখার ব্যবস্থা থাকবে। আর প্রতি ৩ মাস পর পর ওই বক্স খুলা হবে। যদি কোন অভিযোগ পায় উক্ত কমিটি তা তদন্ত করে ব্যবস্থাগ্রহণ করবেন। আইন অনুযায়ী ওই তদন্তের গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। আবার কেউ চাইলে সরাসরি কমিটির কাছে অভিযোগ করতে পারবে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার সৈকত বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমর চন্দ্র দেব নাথ জানান, তার স্কুলে ওই ধরনের কোন কমিটি নেই এবং অভিযোগ বক্সও নেই। তবে কিছু দিন আসে একটি এনজিও এসে নাগরিকের অধিকারের বিষয়ে কাজ করেছিল। তিনি মনে করেন যৌন নিপীড়ন বন্ধে প্রত্যেক স্কুল-কলেজে এই ধরণের কমিটি ও অভিযোগ বক্স বসানো উচিত।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাছির উদ্দিন জানান, একটা সময় যৌন নিপীড়নবিরোধী কমিটি ও বক্স ছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে তা বিলুপ্ত। আর কখনও কোন শিক্ষার্থী বক্সে অভিযোগ ফেলেনি। কেন এমনটা হচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তরে প্রধান শিক্ষক বলেন, বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর মধ্যে এখনও জড়তা কেটে উঠেনি। তবে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থী কাউন্সিলিং করা হয় যৌন নিপীড়ন সর্ম্পকে। তাদের বলা হয় তোমরা প্রয়োজনে নারী শিক্ষকের সহযোগিতা নিতে পার। তবে তিনিও প্রত্যাশা করেন নারী কেন্দ্রীক প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ধরণের কমিটি গঠন করা হউক।
অ্যাডভোকেট সাইমা সেলাতানা জানান, অনেকে মনে করেন কোন নারী ধর্ষিত হলে তাকেই শুধু যৌন নিপীড়ন বলে। কিন্তু ২০০৩ সালের আইন অনুযায়ী নারীর যে-কোন অঙ্গ স্পর্শ করাই যৌন নিপীড়ন। এমনকি নারীর পোষাক ধরে টান দেয়া ধাক্কা দেওয়া এসবও যৌন নিপীড়নের পর্যায়ে পড়ে।
যৌন নিপীড়ন বন্ধে বিশেজ্ঞরা বলছেন, নারী কেন্দ্রীক প্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নবিরোধী কমিটি গঠনের পাশাপাশি সচেতন থাকতে হবে। কখনো কোন অচেনা নারী বা পুরুষের সাথে একা চলাফেরা না করা। কাউকে ভালো লাগলে তার সাথে চট করে ভাব না করা। যতই ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ই হোক না কেন, শারীরিকভাবে ঘনিষ্ঠতা করতে চাইলে সাবধান হওয়া। কেউ যদি কোনো আপত্তিকর বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে সে ক্ষেত্রে ‘না’ বলতে পারার দক্ষাতা অর্জন করা। আগ বাড়িয়ে কেউ সাহায্য বা উপকার করতে এতে ভেবে চিন্তে তা গ্রহণ করা। সমবয়সী কিংবা কিছু বড় ধরণের বিপরীত লিঙ্গের নিকট আত্বীয়দের ব্যাপারে বিশেষভাবে সাবধান থাকা।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-