মুুহিববুল্লাহ মুহিব :
বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার উপকুলে আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে জলদস্যুরা। মাছ আহরণে গেলেই জেলেদের উপর হামলে পড়েছে তারা। পাশাপাশি চলছে অপহরণ করে মুক্তিপণ বাণিজ্য। এসব জলদস্যুদের কিছু মাছ ব্যবসায়ী অর্থ যোগান দিচ্ছে বলে অভিযোগ জেলেদের।
জেলা ফিশিংবোট মালিক সমিতি সুত্রে জানাযায়, গত দুই মাসে বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, মহেশখালী, টেকনাফ, শাহপরীর দ্বীপ, সেন্টামার্টিন উপকুলে অন্তত শতাধিক ট্রলারে জলদস্যুরা হামলা চালিয়েছে। এসময় ট্রলারে থাকা আহরণকৃত মাছ, জালসহ নানা সামগ্রী লুট করে তারা। যার বাজার মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা। সাগরের প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জলদস্যুরা এ তান্ডব অব্যাহত রয়েছে।
মালিক সমিতি সুত্রে আরও জানা যায়, টেকনাফ-সেন্টমার্টিন এলাকা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারী) একদিনে ১৪টি মাছধরার ট্রলারসহ অন্তত ৫৭ জন জেলেকে অপহরণ করেছে জলদস্যুরা। পরে তাদের মুক্তিপণের বিনিময়ে ছাড়িয়ে আনা হয়েছে। এসব বিষয়ে প্রশাসনের দ্বারস্ত হলেও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না বলে অভিযোগ জেলেদের।
জেলেরা জানায়, জলদস্যু সদস্যরা অধিকাংশই বয়সে তরুণ। বাহিনীর সদস্যরা মূলত কক্সবাজার সদরের কুতুবদিয়াপাড়া, চট্টগ্রামের বাঁশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়ার রাজাখালী, মহেশখালীর শাপলাপুর, ধলঘাটা, মাতারবাড়ি, কালারমারছড়া এলাকার।
কুতুবদিয়াপাড়ার জেলে রফিক উল্লাহ বলেন, একটি ট্রলারের ২৫ জন ছিলাম। কিন্তু কয়েকটি ট্রলার নিয়ে জলদস্যুরা হামলা করে। এসব ট্রলারে প্রায় শতাধিক জলদস্যু ছিল। পরে তারা বেধরক মারধর শুরু করে। ট্রলার মালিককে ফোন দিতে। না দিলেই মারধর করে। কিছু না পেলে অপহরণ আর মালামাল নিয়ে যায়।
সমিতিপাড়ার জেলে জাফর মিয়া বলেন, এখন আর সাগরে যেতে ভয় লাগছে। কয়েক মাস হচ্ছে মাছ আহরণে যাইনি। অভাব অনটনে দিন পার করছি। তবুও যেতে চাচ্ছি না। কারণ জলদস্যুরা যেভাবে অত্যাচার শুরু করেছে তা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত সাগরে যাবো না।
কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানান, গত দুই মাসে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের শতাধিক ট্রলারে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। যাদের কাছ থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকার মালামাল লুট করা হয়েছে। অপহরণের শিকার হয়েছে ৫ শতাধিক জেলে। এভাবে মুক্তিপণ বাণিজ্য চলার কারণে কক্সবাজার জেলায় মাছ আহরণ ৩০% এ নেমে এসেছে। চরম অর্থ সংকটে ভোগছে হাজারো জেলে পরিবার। তাই প্রশাসনের প্রতি জলদস্যুদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
কক্সবাজারে নবগঠিত র্যাব-১৫ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান বলেন, সাগরে ডাকাতির খবর পাচ্ছি। সোনাদিয়া থেকে জলদস্যুদের আমরা নির্মূল করেছি। কিন্তু গভীর সাগরে গিয়ে জলদুস্য দমনের অনুমতি পাওয়া গেলে র্যাব তাই করবে।
কোস্টগার্ড পুর্বজোনের অপারেশন অফিসার লে. কমান্ডার সাইফুল ইসলাম বলেন, জলদুস্য দমনে অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে। কিছু জলদস্যু বাইরের এলাকা থেকে এসে কক্সবাজার উপকুলে হানা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার খবর পাচ্ছি। এরপর থেকে অভিযান জোরদার করা হয়েছে।
র্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক মিমতানুর রহমান জানান, আত্মসমর্পণের পর কিছু নতুন জলদস্যু সাগরে জেলেদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে শুনেছি। তাদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের দমন করা হবে।
উল্লেখ্য যে, গত বছরের ২০ অক্টোবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপকূলীয় এলাকার ছয়টি জলদস্যু বাহিনীর ৪৩ সদস্য। এ সময় ৯৪টি অস্ত্র ৭ হাজার ৬৩৭টি গোলাবারুদ হস্তান্তর করে তারা। কিন্তু আত্মসমর্পণের পরও জলদস্যুদের তৎপরতায় উদ্বিগ্ন জেলেরা।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-