আত্মসমর্পণকারী মাদক ব্যবসায়ীদের অন্য ব্যবসায় আর্থিক সহায়তা: প্রধানমন্ত্রী

ডেস্ক রিপোর্ট – আত্মসমর্পণকারী মাদক ব্যবসায়ীদের অন্য ব্যবসার জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কথা জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অপরাধবোধের উপলব্ধি থেকেই আত্মসচেতন হয়ে মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসায়ীরা আত্মসমর্পণ করছে। তারা যাতে নতুন কিছু করতে পারে, সে জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে সরকারি দলের মাহফুজুর রহমানের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এদিন প্রশ্নোত্তরের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘অপরাধবোধের উপলব্ধি থেকেই আত্মসচেতন হয়ে মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসায়ীরা আত্মসমর্পণ করছে। আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে যারা মাদকাসক্ত তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পরিবারকে সহায়তা করা হচ্ছে। আর যারা মাদক ব্যবসায় যুক্ত তারা এই ব্যবসা ছেড়ে যাতে নতুন কিছু করতে পারে, সে জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। আর্থিক সহায়তা পেয়ে তারা যাতে অন্য নতুন ব্যবসা করে ভালোভাবে চলতে পারে, সেই ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা নিচ্ছি।’
জঙ্গি দমনের মতো মাদকের বিরুদ্ধেও সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনসচেতনতামূলক কর্মসূচির কারণে এখন অনেকের মধ্যে উপলব্ধি এসেছে যে মাদক বিক্রি বা পরিবহন অপরাধ। এ কারণে তারা অপরাধবোধ থেকে আত্মসমর্পণ করছে।’
এর আগে মাহফুজুর রহমানের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা জানান, মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও দমন অভিযানে ২০১৮ সালে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এক লাখ ১৯ হাজার ৮৭৮টি মামলা দায়ের করেছে। এসব মামলায় এক লাখ ৬১ লাখ ৩২৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০০৯ থেকে ২০১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাদকবিরোধী প্রচারাভিযানে ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার ৭৯৬টি লিফলেট, এক লাখ ৮৩ হাজার ১৪৮টি স্টিকার, ১০ লাখ ১৭ হাজার ১৭১টি পোস্টার, এক লাখ দুই হাজার ৮০২টি বুলেটিন প্রকাশ ও ৬৪ হাজার ৪৩৬টি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ট্রাফিকের কারণে জনগণের বিড়ম্বনা যেন না হয় সে জন্য তিনি রাস্তায় বের হওয়া একপ্রকার ছেড়েই দিয়েছেন বলে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী সংসদকে জানান। এ-সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি বলতে গেলে তো বের হওয়াই ছেড়ে দিয়েছি। আমি বের হলেই ট্রাফিক আটকায়। এজন্যই অফিস এবং কোথাও যদি কর্মসূচি থাকে সেখানে ছাড়া আর কোথাও যাওয়াই হয় না।’
বহরে গাড়ির সংখ্যা কমানো হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ সালে যখন ক্ষমতায় আসি, দেখি, প্রধানমন্ত্রীর বহরে ৫২টি গাড়ি। আমি তা কেটে আটটি রাখার নির্দেশ দিয়েছি, নিরাপত্তা বাহিনী জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত গাড়ি না থাকে।’
জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘রাজনীতি করি দেশের মানুষের জন্য। নিজের জন্য নয়, মানুষের জন্য কাজ করি। এ কারণে মানুষের কী ভালো, কোনটা ভালো না, তা জানান চেষ্টা করি। সেই অনুযায়ী সমস্যা থাকলে সমাধানের চেষ্টা করি। জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। কাজেই এটাই আমাদের কর্তব্য। দায়িত্বটাকে কর্তব্য হিসেবে নিয়েছি। ক্ষমতাটা ভোগ করার বিষয় নয়, জনসেবা করার বিষয়। এ কারণেই মানুষের কল্যাণে কাজ করি।’
রাস্তায় বেশি সময় সিগন্যাল না দেওয়ার বিষয়ে ফিরোজ রশীদের প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করেন তাদের বলবো, বেশি সময় যেন ট্র্যাফিক আটকে রাখা না হয়।’ ডিজিটাল পদ্ধতিতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ হলে জনদুর্ভোগ কিছুটা কমে আসবে বলেও তিনি জানান।
জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যানজটের সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে আমরা ট্রাফিক রুল মানি না। পাশাপাশি রাস্তা-ফুটপাত দখল করে এখানে-সেখানে গাড়ি থামানো, পার্কিং করাসহ অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। এটা না করে পরিকল্পিতভাবে সবাই চললে হয়তো এত সমস্যা হতো না।’
ঢাকার যানজট বিষয়ে চট্টগ্রাম-৪ আসনের দিদারুল আলমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীর যানজট সমস্যা নিরসনে গত ১০ বছরে বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে খুব শিগগিরই ঢাকা মহানগরী যানজট মুক্ত হবে।’
যানজট নিরসনে গৃহীত পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুব শিগগিরই ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করে অটোমেটিক এবং রিমোর্ট কন্ট্রোলের সমন্বয়ে ট্রাফিক সিগন্যাল লাইট অনুযায়ী যানবাহন নিয়ন্ত্রণ শুরু করা হবে।’
কুড়িগ্রাম-১ আসনের আছলাম হোসেন সওদাগরের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহার করে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল তাদের সম্প্রচার কাজ সম্পন্ন করতে পারছে। এটি ব্যবহার করে বেসরকারি একাত্তর, সময়, বৈশাখী ও এনটিভি সরাসরি সম্প্রচার করছে। এর সাহায্যে আবহাওয়া পূর্বাভাস প্রাপ্তির সুবিধা গ্রহণ করা হচ্ছে।’

আরও খবর