বিশেষ প্রতিবেদক : আসন্ন উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারে তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা দলীয় নির্দ্দেশনা উপেক্ষা করেই মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির তরফে প্রতিটি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে স্থানীয় দলীয় নেতাদের বাছাই করে মনোনয়ন দেয়া হলেও এভাবে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়িকে রাজনীতিক সচেতন ব্যক্তিরা ভাল চোখে দেখছেন না। অনেকেই মনে করছেন সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনের পর আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকেও স্থানীয় দলীয় নেতা কর্মীরা দেখছেন ‘যেনতেন’ ভাবে।
যেভাবে এবারের নির্বাচনে একদল কেন্দ্রিক নির্বাচনী প্রতিদ্বন্ধিতার ষ্পষ্ট লক্ষণ দর্শনীয় হচ্ছে তাতে গ্রামে গ্রামে ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সহিংস ঘটনার আশংকা করা হচ্ছে। আশংকা রয়েছে, দলীয় কোন্দল চরম আকার ধারণ করবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রবিবার উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় ব্যাপক প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে।
উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের এদিনের সভায় অনেক তৃনমূল নেতা অনুপস্থিত ছিলেন। এমনকি খোদ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী পর্যন্ত ছিলেন না। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বাইরে দলীয় নেতারা বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায়-গ্রাম পর্যায়ে নানা রসাতœক কথাবার্তাও বলাবলি শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে-নৌকা প্রতীকধারী মনোনীত প্রার্থী হচ্ছেন ‘সরকারি’ আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং বিদ্রোহীরা ‘বেসরকারি’ আওয়ামী লীগের প্রার্থী।
কক্সবাজার জেলার ৭ টি উপজেলায় তৃতীয়ধাপে আগামী ২৪ মার্চ নির্বাচন অনুষ্টিত হবে। এ নির্বাচনের জন্য গতকাল শেষ দিনে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদে ২২ জন মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন। তন্মধ্যে সদর উপজেলায় বিএনপি পন্থী হিসাবে পরিচিত সেলিম আকবর নামের যিনি চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন তিনি কার্যত প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। কিন্তু নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় দাপ্তরিক ঘোষণাটা বাকি রয়েছে।
সাতটি উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ পদে ৪৩ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন ২২ জন প্রার্থী। এসবের মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ পদে ২ জন বিএনপি এবং ২ জন জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী রয়েছেন। বাদবাকিরা সবাই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী। অপরদিকে নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন রয়েছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এবং অন্যান্যরা সবাই আওয়ামী লীগ সমর্থিত।
সমালোচকরা বলছেন, যেখানে কয়েক সপ্তাহের টানাটানি পরিস্থিতিতে রাজধানী ঢাকায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ অফিসে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হয়েছে সেখানে একই দলের এত বিপুল সংখ্যক নেতা কিভাবে বিদ্রোহী প্রার্থী হন ? এ প্রসঙ্গে বিদ্রোহী দলীয় প্রার্থীরা বলেছেন-‘আমাদের দলীয় কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব অনুমতি দিয়েছেন দলীয় নেতৃবৃন্দ যদি কিনা প্রতিদ্বন্ধিতা করতে চাইলে তারা পারবেন। এ কারনেই আমরা প্রার্থী হয়েছি।’
তবে এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা বলেছেন, দলীয় মনোনীত প্রার্থীর বাইরে মনোনয়ন দাখিল করে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে তাঁর কোন সায় নেই। কেননা এ বিষয়ে দলের কেন্দ্রীয় কোন নির্দ্দেশনা ছাড়া তিনি কোন মন্তব্য করতে পারবেন না।
এবারের উপজেলা নির্বাচনে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে-কোন উপজেলাতেই বিএনপি’র স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ অংশ গ্রহণ করছেন না। বরং বিএনপি’র নেতাকর্মীরাই আওয়ামী লীগ নেতাদের জন্য আশির্বাদের পাত্র হয়ে দাঁড়িয়েছেন। কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে গতকাল মনোনয়ন পত্র দাখিল করার আগে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবুল মনসুর চৌধুরী বিএনপি’র সাবেক দলীয় এমপি এবং জেলা বিএনপি’র সভাপতি শাহজাহান চৌধুরীর সাথে সাক্ষাৎ করে দোয়া নিয়ে গেছেন।
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল মনসুর চৌধুরী নিজ ফেসবুক আইডিতে এ সংক্রান্ত ছবিও পোষ্ট করেছেন। জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও সদ্য সমাপ্ত সংসদ নির্বাচনে উখিয়া-টেকনাফ আসনে বিএনপি’র দলীয় এমপি পদপ্রার্থী এবং সাবেক এমপি শাহাজাহান চৌধুরী ও তার ছোট ভাই বিএনপি নেতা শাহকামাল চৌধুরীর সাথে দোয়া চেয়ে সাক্ষাৎ নেয়ার ছবি রয়েছে।
জানা গেছে, বিএনপি’র নেতারা নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা সবাই এখন বিএনপি নেতৃবৃন্দের ঘরে ঘরে গিয়ে এবং মোবাইলে দোয়া চেয়ে নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দরাই নির্বাচনে একে অপরের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্ধিতা করতে গিয়ে রাজনীতির মাঠে চিরপ্রতিদ্বন্ধিতার কথাও ভুলে গেছেন বেমালুম। এমনকি ভোটের সহযোগিতা চেয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের দ্বারস্থ হচ্ছেন।
গতকাল মঙ্গলবার মনোনয়ন পত্র দাখিলের শেষ দিনে কক্সবাজারের প্রায় প্রতিটি উপজেলায় বিএনপি নেতা কর্মীদের কদর বৃদ্ধির দৃশ্য চোখে পড়েছে। বিষয়টি এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। গতরাতে উখিয়ার একজন আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী নিজেই স্বীকার করে বলেছেন, এলাকার বিএনপি-জামায়াতের লোকজনের সাথে তার ভাল সম্পর্ক রয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের ভোট তিনি পাবেন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-