পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে পক্ষান্তরে পুনর্বাসনেরই সুযোগ পেলেন ইয়াবা গডফাদার আবদুর রশিদ ওরফে রশিদ খুলু (৬০)। অথচ পুলিশের ভয়েই তিনি গত দুবছর ছিলেন দেশছাড়া।
২০১২ সালের ১৮ মে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে ধরা পড়েছিল দেশের সবচেয়ে বড় ইয়াবার চালান, যার মালিক ছিলেন রশিদ খুলু। ২ লাখ ৭০ হাজার ইয়াবার ওই চালানটি আনা হয়েছিল আচারের বস্তায় করে। ২০১৬ সালে মালয়েশিয়া পাড়ি দিয়ে সেখানে বাড়ি ও হোটেলের মালিক হন তিনি। টেকনাফের কয়েকশ চিহ্নিত ইয়াবাকারবারির মধ্যে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ১০২ জন আত্মসমর্পণ করেন। অতিগোপনে টেকনাফ গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন রশিদ খুলুও।
জানা গেছে, পুলিশের বারবার অভিযান এবং একাধিক সহযোগী ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার পর নিজের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে বাড়ি-গাড়ি ফেলে মালয়েশিয়ায় পালিয়ে যান রশিদ খুলু। একসময় সেখানেই ব্যবসা শুরু করেন। তবে দেশে থাকা বিপুল বিত্তবৈভব রক্ষা করতে শেষ পর্যন্ত তিনি ফিরে আসেন। আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে আসায় সেই সম্পদ রক্ষার সুযোগও পাচ্ছেন বলে ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন।
তবে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক আমাদের সময়কে বলেন, ‘ইয়াবাকারবারি যারা আত্মসমর্পণ করেছেন, তারা একটি আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে আছেন। আর স্বাভাবিক জীবনে আসার পর তাদের কর্মকা- আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।’
টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, ‘পুলিশের কাছে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা আত্মসমর্পণ করেছেন। সরকারের আরও অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আয়কর বিভাগসহ ওই প্রতিষ্ঠানগুলো এ ব্যাপারে কাজ করবে। ফলে এখনো অনেক বিষয় রয়ে গেছে।’
জানা যায়, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান সম্পদ রয়েছে। আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের সম্পদ বৈধ করতে চাইলেও কেবল দৃশ্যমানগুলোই করা যাবে। এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ (কালো টাকা) ব্যবহারের সুযোগ পাবেন রশিদ খুলুরা। সেই সঙ্গে নিজেদের প্রতিপত্তি নিয়ে সমাজে ফেরার সুযোগ পাচ্ছেন। রশিদ খুলুর আদি নিবাস মিয়ানমারের মংডু। ভাগ্যের অন্বেষণে একসময় তিনি টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপে আসেন, দিনমজুর হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে সেখান থেকে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে বসবাস শুরু করেন।
২০১২ সালের ১৮ মে খাতুনগঞ্জে ট্রাকভর্তি আচারের ভেতর থেকে ২ লাখ ৭০ হাজার ইয়াবা আটক করেন র্যাব-১ ও র্যাব ৭-এর সদস্যরা। সেই সঙ্গে শ্যালক আতাউর করিম, দুই কর্মচারী সাব্বির ও ইসমাইলসহ প্রথমবারের মতো গ্রেপ্তার হন রশিদ খুলু।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে সাব্বির তখন জানিয়েছিলেন, ইয়াবার চালানটি এসেছিল টেকনাফ থেকে। ওই বছরের ২০ মার্চ বরই ও তেঁতুল আচারের ভেতরে করে আড়াই লাখ ইয়াবার আরও একটি চালান এনেছিলেন রশিদ খুলু। তা তিনি নিরাপদেই বিক্রি করে দেন। তবে এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন তদারকি ছিল না। তা ছাড়া ইয়াবা নিয়ে সচেতনতা তৈরি না হওয়ায় খুব দ্রুত জামিনেও বেরিয়ে আসেন রশিদ খুলু ও অন্যরা। এর পর তিনি আগের মতোই কারবার চালিয়ে যান। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম শহরের হালিশহরের কর্ণফুলী আবাসিক এলাকায় একটি এবং শ্যামলীতে আরও একটি বহুতল বাড়ি নির্মাণ করেন। বাবার পাশাপাশি ছেলে ফয়সাল রশিদও যুক্ত হন ইয়াবা কারবারে। একসময়ের দিনমজুর রশিদ খুলু ও পরিবারের সদস্যরা ব্যবহার করেন বিএমডব্লিউসহ দামি ব্র্যান্ডের গাড়ি।
২০১৫ সালের ১৬ আগস্ট রশিদ খুলু সিন্ডিকেটের আরেক সদস্য জাহিদুল ইসলাম ওরফে আলো র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। বিভিন্ন ব্যাংকে তার ১২ হিসাবে ১১১ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। এর পর পরই মালয়েশিয়ায় পালিয়ে যান রশিদ খুলু। তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানতে পারেন, আলোর চেয়েও বড় ইয়াবাকারবারি রশিদ খুলু।
/আমাদের সময়
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-