নিউজ ডেস্ক :
বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের গাড়ি আমদানির অভিযোগের বিষয়টি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) তদন্ত করছে। এনবিআরের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার মুখপাত্র পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া কক্সবাজারের বিভিন্ন অফিসের জন্য ৪৬টি গাড়ি আমদানির বিষয়টি প্রকারান্তরে স্বীকার করলেও তিনি দাবি করেন, গাড়িগুলোর নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য সার্বিক বিষয়ে কোনও ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত বছরের জুনে ৫৭টি শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে জাতিসংঘ। তবে মন্ত্রণালয় ওই আবেদন নাকচ করে দেয়। তা সত্ত্বেও গাড়িগুলো আমদানি করে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে খালাস করা হয়। গাড়িগুলো বর্তমানে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ব্যবহার করছে।
এ ঘটনায় বিস্মিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গাড়িগুলো তাদের অনুমোদন ছাড়া কীভাবে বন্দর থেকে ছাড়া পেলো, সেটি তদন্ত করে দেখতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে চিঠি দেয়।
এনবিআরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘চিঠি থেকে এটি পরিষ্কার যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই গাড়িগুলো আমদানি করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে শুল্ক গোয়েন্দা ও চট্টগ্রাম শুল্ককে এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছি।’
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে গত ২১ জানুয়ারি জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থাকে পক্ষ থেকে একটি ইমেইল করা হয়। ওই দিনই প্রায় ৮০০ শব্দের একটি জবাব পাঠান সংস্থাটির মুখপাত্র জোসেফ ত্রিপুরা। তিনি জানান, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কাজে তারা গাড়ি আমদানি করতে চেয়েছিলেন।
জোসেফ ত্রিপুরা তার লিখিত জবাবে বলেন, “গত জুনে ৫৭টি গাড়ি ব্যবহারের জন্য জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। আবেদনে বলা হয়, গাড়িগুলো কক্সবাজারে সরকারের বিভিন্ন অফিসে, যেমন আরআরআরসি, ডিসি অফিস, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, জাতিসংঘ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো ব্যবহার করবে।
কিন্তু আগস্টে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমাদের জানায়, সরকারের কোনও সংস্থা বা জাতিসংঘের সহযোগী সংগঠনের ‘হলুদ নাম্বার প্লেট’ ব্যবহারের অনুমতি নেই এবং এ কারণে তারা এই গাড়ি ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারবে না।”
এখানে উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘের মধ্যে সমঝোতা অনুযায়ী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া কোনও গাড়ি ব্যবহার বা আমদানির সুযোগ নেই।
জোসেফ ত্রিপুরা ইমেইলে আরও বলেন, ‘আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই এবং সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি আমদানির উদ্যোগ বাতিলের পদক্ষেপ নিই। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ততক্ষণে গাড়িগুলো সুমদ্রপথে বাংলাদেশের দিকে রওয়ানা হয়েছিল এবং এর মধ্যে ৪৬টি গাড়ি বাংলাদেশে পৌঁছেও গিয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘এই ৪৬টি গাড়ির শুল্কমুক্ত ছাড় করার জন্য সরকার তখন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়।’
গাড়িগুলো বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জোসেফ ত্রিপুরা বলেন, ‘জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা এবং সরকারসহ যাদের সঙ্গে প্রকল্প অংশীদার চুক্তি আছে সেসব সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসব গাড়ি ব্যবহার করছে।”
তিনি বলেন, “গাড়িগুলোর ‘নিবন্ধনের জন্য আবেদন’ (এএফআর) প্লেট ব্যবহার করছে। কারণ, আমরা সরকারের অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করছি।”
কূটনৈতিক মহলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে শুল্কমুক্ত গাড়ি ব্যবহারের নিয়ম আছে। ‘হলুদ নাম্বার প্লেট’ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরবরাহ করে থাকে।
২১ জানুয়ারি এই জবাব পাওয়ার পরে ২৩ জানুয়ারি আরও কয়েকটি বিষয় জানতে চেয়ে আরেকটি ইমেইল করে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থাকে। এতে সরকারের কোন সংস্থা তাদের শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে, সরকারের কোন সংস্থার অনুমতি নিয়ে তারা গাড়িগুলো ব্যবহার করছে, কোন সংস্থার কাছে তারা নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে এবং সরকারের কোনও সংস্থা তাদের গাড়িগুলো আমদানির জন্য শুল্ক পরিশোধ করতে বলেছে কিনা— এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া হয়।
কয়েকবার তাগাদা দেওয়ার পর জোসেফ ত্রিপুরা পাঁচ দিন পর ২৮ জানুয়ারি এক মেইলে জানান, ‘আমি যখন পারবো তখন এসব প্রশ্নের জবাব দেবো। যেহেতু আপনি একটি সময়সীমার মধ্যে কাজ করছেন, সেহেতু আমি আগে যে তথ্য দিয়েছি সেই তথ্যগুলো ব্যবহার করতে পারেন।’
২৮ জানুয়ারির পর জোসেফ ত্রিপুরা সাংবাদিকদের অন্তত পাঁচটি ইমেইল করেছেন, কিন্তু গাড়িগুলোর আমদানি সংক্রান্ত কোনও প্রশ্নের জবাব দেয়নি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-