রাত পোহালেই শুরু হবে আত্মসমর্পণ অনুষ্টান

৬ জনপ্রতিনিধিসহ শতাধিক কারবারী আত্মসমর্পনের পথেঃ কোন পর্যায়ে হচ্ছে শাস্তি জনমনে প্রশ্ন?

গিয়াস উদ্দিন ভুলু,কক্সবাজার জার্নাল

দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা জনপদ পর্যটন নগরী টেকনাফের সাধারন মানুষ মাদকের আগ্রাসনে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করে। এদিকে বছরের পর বছর ধরে এই মাদক পাচার প্রতিরোধ করার জন্য আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা নানা কৌশল হাতে নিলেও মাদক কারবারে জড়িতরা বিভিন্ন কৌশলে তাদের এই অপকর্ম অব্যাহত রাখে। অবশেষে সরকার ঘৃন্য এই মাদক পাচার প্রতিরোধ ও কারবারীদের নির্মুল করার জন্য যুদ্ধ ঘোষনা করে। সেই ধারাবাহিকতায় গত কয়েক মাসের মধ্যে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির কথিত বন্দুকযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় প্রায় ৫০ জন ইয়াবা কারবারী। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিও রয়েছে। তথ্য সুত্রে দেখা যায়, চলমান মাদক বিরোধী অভিযানে,

সব চেয়ে বেশী অগ্রনী ভুমিকা পালন করে যাচ্ছে টেকনাফ মডেল থানার (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ। তিনি যোগদান করার মাত্র তিন মাসের সাঁড়াশী অভিযানে,ইয়াবা কারবারে জড়িত প্রায় ৩০জন ব্যাক্তি নিহত হয়েছে। এরপর থেকে টেকনাফ উপজেলা মাদক কারবারে জড়িত ব্যাক্তিদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে আতংক। পাশাপাশি আড়ালে থাকা ইয়াবা কারবারীরা নিজের জীবন বাঁচাতে এবং অন্ধকার জগৎ ছেড়ে আলোর পথে ফিরে আসতে আত্মসমর্পণ করার প্রক্রিয়া হাতে নেয়।

সেই সূত্র ধরে গত এক মাসের মধ্যে কক্সবাজার পুলিশ লাইনের সেফহোমে চলে যায়, প্রায় এক শতাধিক ইয়াবা কারবারী। তবে এদের মধ্যে অনেকেই এই ঘৃন্য ইয়াবা পাচারে জড়িত ছিলনা বলে দাবী করছে তাদের পরিবার। এই সমস্ত পরিবারের সদস্যদের দাবী তাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক শত্রু পক্ষের লোকেরা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তৎকালীন কিছু অসাধু গোয়েন্দার মাধ্যমে মাদকের তালিকায় নাম দিয়ে ইয়াবা কারবারে জড়িত আছে বলে চিহ্নিত অপরাধী বানিয়েছে।

তারা আরো বলেন আমাদের ছেলেরা আইনকে শ্রদ্ধা করে, ইয়াবা ব্যবসাকে ঘৃনা জানিয়ে আত্মসমর্পন করছে। তাদের দাবী সরকার মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদেরকে আইনী সহায়তা প্রদান করে এই অপরাধ থেকে মুক্তি দিবে।
এদিকে আগামীকাল ১৬ ফেব্রুয়ারী শনিবার সকাল ৯টায় টেকনাফ পাইলট উচ্চবিদ্যালয় খেলার মাঠে আইন-শৃংখলা বাহিনীর দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন এবং টেকনাফবাসীর মাথার উপর থাকা বদনাম কিছুটা হলেও কমে আসবে পাশাপাশি বহু আলোচিত দীর্ঘ সাধনার আত্মসমর্পন প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে।

সূত্রে জানা যায়,এই মাদক কারবারীদের আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বিশেষ অতিথি হিসাবে থাকবেন কক্সবাজার চার আসনের এমপি- যথাক্রমেঃ-সাইমুম সরওয়ার কমল,আশেক উল্লাহ রফিক, জাফর আলম ও শাহিন আকতার।

উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর প্রধান (আইজিপি) ড. জাবেদ পাটোয়ারী, স্বরাষ্ট্র সচিব মোস্তফা কামাল, বিজিবির রিজেন্ট কমান্ডার জেনারেল সাজেদুর রহমান, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম (বার) পিপিএম, জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন, ডিজি এফআইয়ের কর্নেল জিএস ইমরান। আরো উপস্থিত থাকবেন কক্সবাজার জেলা পুলিশের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। উক্ত অনুষ্টানে সভাপতিত্ব করবেন কক্সবাজার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসাইন।

এদিকে আত্মসমর্পন প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়ন করার জন্য গত তিন দিন যাবত টেকনাফ মডেল থানার (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশের নেতৃত্বে অত্র থানার চৌকশ পুলিশ সদস্যরা কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। (ওসি) প্রদীপ কুমার অভিমত পোষন করে বলেন, গত তিন মাস ধরে চলমান মাদক বিরোধী অভিযানে আমাদের পুলিশ ও মাদক কারবারীদের মধ্যে গোলাগুলিতে অত্র উপজেলার সক্রিয় ভাবে মাদক কারবারে জড়িত ৩০জন ব্যাক্তি নিহত হয়েছে। পাশাপাশি এই চলমান অভিযানে আমাদের সদস্যরা বিপুল পরিমান ইয়াবা, দেশী বিদেশী অস্ত্র ও,গুলি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। তিনি আরো বলেন সেই সাঁড়াশী অভিযানের সফলতা হিসাবে দীর্ঘদিন আড়ালে থাকা মাদক কারবারীরা নিজের ইচ্ছায় আত্মমসমর্পন করার পথ অনুশরন করছে। অবশেষে আগামীকাল শনিবার সেই প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

তিনি অভিমত প্রকাশ করে আরো বলেন যারা নিজের ভুল বুঝতে পেরে অন্ধকার জগৎ ছেড়ে আলোর পথে ফিরে আসছে তাদেরকে আইনি প্রক্রিয়া শেষ করার পর সু-পথে ফিরে আসার জন্য সুযোগ দেওয়া হবে। তারা যেন পুনরায় কোন অপরাধে লিপ্ত না হয় সেই দিকটাও নজরদারিতে রাখা হবে। ওসি প্রদীপ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যারা এখনো মাদক কারবারে জড়িত রয়েছে। তাদেরকে আইনের আওয়তাই নিয়ে আসার জন্য মাদক বিরোধী চলমান অভিযানকে আরো কঠোর হাতে দমন করা হবে।

আরও খবর