লক্ষাধিক ইয়াবাসহ আত্মসমর্পণের পথে শতাধিক কারবারি

শাহরিয়ার হাসান, বার্তা২৪ – পেরিয়ে সকাল হলেই আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছেন কক্সবাজারের শীর্ষ ইয়াবা কারবারিরা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের আইজির উপস্থিতিতে শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তারা আত্মসমর্পণ করবেন।

আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ার সমন্বয়ক ও কক্সবাজার জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এখনো পর্যন্ত আত্মসমর্পণে ১০০ জন মাদক ব্যবসায়ীর নাম চূড়ান্ত হয়েছে। সকালের মধ্যে যোগ হতে পারে আরো পাঁচ থেকে ১০ জন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আত্মসমর্পণের সময় এক লাখ ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র জমা দিতে যাচ্ছেন ইয়াবা কারবারিরা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা তালিকায় শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ৭৩ জন। এদের মধ্যে ৩০ জন আত্মসমর্পণের জন্য পুলিশ হেফাজতে চলে এসেছেন। পাশাপাশি জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সর্বশেষ করা তালিকায় মাদক ব্যবসায়ী এক হাজার ১৫১ জন। এদের মধ্য থেকে এসেছেন ৩১ জন।

আপাতত তালিকায় থাকা বাকি ৩৯ জনের মধ্যে ১৫ জনের মতো রয়েছেন, যারা আত্মসমর্পণের উদ্দেশ্যে বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন। স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আশায় তারা মালয়েশিয়া থেকে দেশে এসেছেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কক্সবাজার জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এখনো পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে যারা এসেছেন। এদের মধ্যে টেকনাফ ইউনিয়নের পরিষদ সদস্য নুরুল হুদার নামে সর্বোচ্চ ২০টি ইয়াবা ও অস্ত্রের মামলা রয়েছে।’

এদিকে কক্সবাজারের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির পরিবারের ১০ জন সদস্যও এই আত্মসমর্পণে অংশ নিচ্ছেন বলে এই পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তিনি জানান, সর্বশেষ আজকে (শুক্রবার) দুবাই থেকে পুলিশের সেফহোমে এসেছেন বদির ছোট ভাই শুক্কুর।

জেলা পুলিশ সূত্র বলছে, একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের চট্টগ্রাম অফিসের প্রতিবেদক এম এম আকরাম হোসেনের মধ্যস্থতায় পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছেন এই ইয়াবা কারবারীরা।

তবে এখন আলোচনা চলছে আত্মসমর্পণকারীদের বিরুদ্ধে কয়টি মামলা করবে সরকার বা কোন প্রক্রিয়ায় এই আত্মসমর্পণে হতে যাচ্ছে।

জানতে চাইলে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এখনো এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সন্ধ্যায় এ ব্যাপারে একটি বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবেন।‘

অন্যদিকে জানা যায়, ইয়াবা কারবারিদের অবৈধ সম্পদের ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এনবিআর তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারিদের ব্যাংক হিসাব দেখে কার কত অবৈধ সম্পদ আছে তার একটি হিসাব তৈরি করেছে।

পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে এবিএম মাসুদ বলেন, ‘চিহ্নিত ইয়াবা কারবারিরা নিজ উদ্যোগে একটি বিশেষ স্থানে, নিরাপদ জায়গায় চলে এসেছেন। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তাদের সাজা ও ইয়াবা ব্যবসা থেকে অর্জিত সম্পদ আদালত দেখবেন।’

গত বছর ৪ মে দেশব্যাপী শুরু হওয়া মাদকবিরোধী অভিযানে এ পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় ২৭ জন মাদক কারবারি নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে টেকনাফে নিহত হয়েছেন ২৩ জন।

এত কিছুর পরেও মাদকের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত  কক্সবাজারে মাদকের প্রভাব কমছে না। শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) কক্সবাজারে নবগঠিত এডহক ভিত্তিতে পরিচালিত র‍্যাব-১৫ এর অভিযানে বঙ্গোপসাগরের গভীর সমুদ্র এলাকা থেকে এক লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।