কক্সবাজারে চার কেন্দ্রে ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা

মনতোষ বেদজ্ঞ :
কেন্দ্র সচিবসহ পরীক্ষা সাথে সংশ্লিষ্টদের গাফেলতির কারনে কক্সবাজার জেলার চারটি কেন্দ্রে ভুল প্রশ্নপত্র দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। শনিবার এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনের বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষায় এমন ঘটনা ঘটেছে। নিয়ম অনুযায়ী ২০১৯ সালের সিলেবাসের প্রশ্নপত্র অনুসারে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্র সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা ভুলে ২০১৮ সালের সিলবাস অনুসারে প্রণীত প্রশ্নে ২০১৯ সালের পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা গ্রহণ করেন।

ভুল প্রশ্নপত্র দেওয়া চারটি পরীক্ষা কেন্দ্র হলো, পেকুয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, উখিয়া পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, উখিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।

ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আশরাফ হোসেন বলেন, ‘কেন্দ্র সচিবদের ভুলে প্রথম দিনের পরীক্ষায় পেকুয়া ও উখিয়ার তিনটি কেন্দ্রে ভুল প্রশ্নপত্র দিয়ে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। ইতোমধ্যেই পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডকে অবহিত করেছেন। কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটলো তা খতিয়ে দেখবে বোর্ড এবং এ  বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’ তিনি বলেন, ‘এবার বাংলা পরীক্ষা ২০১৯ সালের সিলেবাসের প্রশ্নপত্র অনুসারে হওয়ার কথা। কিন্তু তিন কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্র সচিবরা ২০১৯ সালের সিলেবাসে প্রণীত প্রশ্নপত্র না দিয়ে ভুলক্রমে পরীক্ষার্থীদের মাঝে ২০১৮ সালের সিলেবাস অনুসারে প্রণিত প্রশ্নপত্র বিতরণ করেন।

অর্থাৎ গতবারের পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য যে প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়েছিল সেই প্রশ্নই সাতটি কেন্দ্রে এবারের পরীক্ষার্থীদের ভুলক্রমে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ এদিকে কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের কয়েক জনকে ২০১৮ সালের সিলেবাসে করা প্রশ্নপত্র সরবরাহ করার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা ঘটলে কেন্দ্রে সচিব সেটা জেলা প্রশাসককে জানানোর কথা। কিন্তু বিষয়টি আপনার  কাছেই শুনলাম। যদি এ ঘটনা সত্য হয়ে থাকে তবে বোর্ড ওই কেন্দ্র সচিবকে শোকজ করবে।’

কক্সবাজার পৌর প্রিপ্যারেটরী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক  নুরুল ইসলাম বলেন, ‘কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২০১৯ সালের নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের ২০১৮ সালের প্রশ্নপত্র দিয়ে দায়সারাভাবে পরীক্ষা গ্রহন করা হয়েছে। পৌর প্রিপ্যারেটরী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তুলি দাশ (পরীক্ষার রোল নং প৫৪৬৫৪৮, রেজি নং-১৬১৪৩২০০০৯, বিদ্যালয় রোল-১)  ২০১৯ সালের নিয়মিত পরীক্ষার্থী হওয়া সত্বেও ২০১৮ সালের সিলেবাস অনুযায়ী পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের অবহেলার কারনে একজন সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থীর জীবন নিয়ে এই ধরনের ছিনিমিনি খেলা মেনে নেওয়া যায়না।’

এ বিষয়ে  জানতে চাইলে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সালেহ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২০১৯ সালের নিয়মিত পরীক্ষার্থী হওয়া সত্বেও ২০১৮ সালের সিলেবাস অনুযায়ী পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে বলে আমি শুনেছি। এ বিষয়ে আমি কথা বলেছি কেন্দ্র সচিব নাছির উদ্দিনের সাথে। তিনি আমাকে বলেছেন, পরীক্ষার সময় কেউ বিষয়টি তাকে অবহিত করেনি। এ ধরনের ঘটনা আদৌ ঘটেছে  কিনা তা এখনও নিশ্চিত তিনি হতে পারেননি কেন্দ্র সচিব। আগামীকাল (আজ রোববার) বিষয়টি নিশ্চিত হলে তা বোর্ডকে অবশ্যই অবহিত করা হবে।’

এমন ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে কয়েকজন অভিভাবক বলেন, এতবড় পাবলিক পরীক্ষার ব্যবস্থাপনায় ভুল প্রশ্নপত্র দিয়ে পরীক্ষার বিষয়টি গাফিলতি ও অবহেলা ছাড়া আর কিছুই নয়। এমন গাফিলতির দ্বায় থেকে কেউ পার পেতে পারেন না। এতে শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিবদের কোন সমস্যা না হলেও চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে পরীক্ষার্থীদের। এমন ভুলের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে পরীর্ক্ষার্থীদের সামগ্রিক ফলাফলের ওপর। এমন ভুলের সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।

আরও খবর