দেশ বিদেশ রিপোর্ট – রোহিঙ্গা রুহুল আমিন (৪৫) এখন একটি আন্তর্জাতিক এনজিও সংস্থার লিঁয়াজো অফিসার। কুতুপালং শিবিরে তার কর্মকান্ড। তার মাসিক বেতন ৪৫ হাজার টাকা। তিনিই এখন এনজিওটির কর্মচারিদেরই অন্যতম একজন বস। রুহুলের চাকুরি হয় ২০১৭ সালের অক্টোবরে।
বাংলাদেশ সরকারের নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করেই তাকে চাকুরি দেয়া হয় সংস্থাটিতে। এই চাকুরিও রোহিঙ্গা রুহুলকে দেয়া হয়েছিল বড় এক বখশিস হিসাবে। প্রশ্ন উঠেছে-দেশত্যাগি একজন বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা যদি কিনা মাসিক ৪৫ হাজার টাকা বেতনের চাকুরি পায় তারা কেন এদেশ থেকে স্বদেশে ফিরে যাবে ? তদুপরি এরকম হলে বাংলাদেশ সরকারও কিভাবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করাবে ?
কেননা ২০১৭ সালের আগষ্টে রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশমুখি রোহিঙ্গা ঢল নামাতে এই রোহিঙ্গা রুহুলের কোন জুড়ি ছিলনা বলে জানা গেছে। ফলে রুহুলকেই তাড়াহুড়া করে এনজিওটিতে চাকুরি দেয়া হয়। আবার সীমান্তের জিরো পয়েন্টে গিয়ে রোহিঙ্গাদের জামাই আদরে এপারে নিয়ে আসার অভিযোগও রয়েছে এনজিওটির বিরুদ্ধে। রোহিঙ্গা ঢল আনতে এরকম বিশ^স্ত রুহুল আরাকানে এখনো রয়েছে। সীমান্ত বিহীন চিকিৎসা- শ্লোগান নিয়ে এমএসএফ নামের এনজিওটির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে-সরকারি নিষেধাজ্ঞা না মেনে রোহিঙ্গাদের চাকুরি দেয়া হচ্ছে ঢালাওভাবে।
অপরদিকে এনজিওটি স্থানীয়দের ছাঁটাই করছে গনহারে। একদিকে রোহিঙ্গাদের ঢালাওভাবে নিয়োগ এবং অন্যদিকে গনহারে ছাঁটাইয়ের কারনে এক চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে সীমান্ত এলাকায়। এরকম অসন্তোষের পরিণতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটাই এখন বলা মুশকিল। এনজিওটি সম্প্রতি জাকের নামের একজন কালচারাল অফিসারকেও নিয়োগ দিয়েছে। রোহিঙ্গাদেরকে বস ডাকতে হয় স্থানীয়দের। এরকম বিষয় নিয়ে প্রায়শ বিবাদেও সৃষ্টি হচ্ছে।
এমনকি এনজিওটিতে যেখানে স্থানীয় মাত্র ৪ জন রয়েছেন টিম লীডার (মনিটর) সেখানে একই পদে রোহিঙ্গা রয়েছে ৩২ জন। শুধু তাই নয় যেখানে স্থানীয়দের মাত্র ৩৩ জন রয়েছেন আউটরিচ ওয়ার্কার এবং একই পদে রোহিঙ্গা রয়েছেন দেড় শতাধিক। সব মিলিয়ে স্থানীয় আউটরীচ টিম সুপারভাইজারের যেখানে ৪০ জন সেখানে রোহিঙ্গার সংখ্যা ২০০ জনেরও বেশী।
সরকারি নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একটি বিদেশী এনজিও এমন ঢালাওভাবে রোহিঙ্গাদের উচ্চ বেতনে চাকুরিতে নিয়োগের বিষয়ে স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারাও অবহিত নন। গতরাতে রোহিঙ্গা শরনার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল কালামের সাথে এমন বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি এমএসএফ -হল্যান্ডের কথা শুনে হতবাক হয়ে পড়েন। তিনি সরাসরি বলেন রোহিঙ্গাদের কোন ভাবেই এনজিওতে চাকুরি দেয়া যাবেনা। তবে তিনি একথাও বলেন যে, শিবিরের জরুরি পরিস্থিতিতে কিছু রোহিঙ্গাদের লেবার হিসাবে কাজ করার জন্য সাময়িক অনমুতি দেয়া হয়েছিল।
রোহিঙ্গাদের নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি কেবল এমএসএফ নয় ব্র্যাক, কারিতাস, সেভদ্য চিলড্রেন, প্ল্যান ইন্টারন্যাশন্যাল, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, কোডেক, মুক্তি, ডিআরসি, একটেট, ফ্রেন্ডশীপ ইন্টারন্যাশনাল সহ আরো অনেক এনজিওতে রোহিঙ্গাদের মাসিক বেতনে চাকুরি দেয়া হয়েছে।
শুধু রোহিঙ্গা শিবিরের এনজিও নয়-উখিয়া ষ্টেশনের ছয়তারা নামের রাইচ মিলেও রোহিঙ্গাদের চাকুরি দেয়া হয়েছে। রাইচ মিলটি রোহিঙ্গা কানেকশনের যাবতীয় ব্যবসায় জড়িত থাকার সুবাধে মিল মালিক কবির আহমদ সওদাগরের স্বাক্ষরে রোহিঙ্গাকে আইডি কার্ড দিয়ে চাকুরি দেয়া হয়েছে। এরকম রোহিঙ্গা আবদু ছবির আইডি কার্ড সহ প্রমাণ রয়েছে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নিকারুজ্জামান গতরাতে জানান, তিনি নিজেই মিল মালিকের সই করা আইডি নিয়ে রোহিঙ্গা কর্মচারির পরিচয় উদ্ধার করেছেন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-