অনলাইন ডেস্ক – মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে থাকা র্যাব চাইছে না তার কোনো কর্মীর মাদক সম্পৃক্ততা নিয়ে বিতর্ক উঠুক। এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে বাহিনীতে কাউকে সন্দেহ হলেই মাদকের পরীক্ষা করা হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা।
সম্প্রতি সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে মাদকের পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ এসেছে উচ্চ আদালত থেকে। তবে র্যাবে যোগ দেওয়ার আগে এমন পরীক্ষা আগে থেকেই চালু আছে। কর্মকর্তারা বলছেন, বাহিনীতে যোগ দিয়ে কারও কারও স্খলন হতে পারে। কিন্তু তারা সবাইকে বার্তা দিতে চান, এমনটি করে কেউ পার পাবে না।
২০১৭ সালের মে মাসে সারা দেশে মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান শুরুর পর মাঠপর্যায়ে সব সদস্যকে এই পরীক্ষা করানোর বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
র্যাবের সহকারী পরিচালক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে জানান, প্রতি মাসেই ব্যাটালিয়ন দরবার শেষে সদস্যদের কাছ থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে পরীক্ষা করানোর জন্য। আর এ বিষয়ে জোর দেওয়ায় কেউ অতীতে মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও তারা সেই অভ্যাস পরিবর্তনে বাধ্য।’
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের বাহিনীর সদস্য নিজেরাই যদি সুস্থ না থাকে, তাহলে কাজ করবে কীভাবে? আর সবার মধ্যে সচেতনতা রাখতে এটা করানো হয়ে থাকে। এই পরীক্ষার ফলে সকল সদস্যের মধ্যে একটা আতঙ্ক থাকে। আবার চাকরি হারানোর ভয়ে অনেকে এমন কিছুর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলে তারা ছেড়ে দিয়েছে।’
র্যাবের একটি ইউনিটের অধিনায়ক বলেন, ‘কিছু লোককে সন্দেহ হলেই আমরা তাদের দাঁড় করিয়ে থাকি। এভাবে প্রতিনিয়ত করা হয়। আর এই ব্যবস্থাটাও চালু রাখা হয়েছে।’
‘অনেকে মাদকে আসক্ত হয়। এটা নিয়ে বিভিন্ন সময় সমস্যাও হয়। এর প্রমাণও মিলেছে। আমি নিজেও ধরেছি। এ জন্য তাদের বাধ্যবাধকতার মধ্যে আনা এবং সতর্কতার জন্য এই পরীক্ষা করানো হয়। বাকি সদস্যদের বলা হয়, কেউ যদি এমন মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে, তাহলে সে ধরা পড়বে এবং শাস্তি পেতে হবে।’
এখন পর্যন্ত কতজন শনাক্ত হয়েছেন, এমন প্রশ্নে ওই কর্মকর্তা বলেন, তিনি সার্বিকভাবে জানেন না, তবে তার ব্যাটালিয়নে মাদকাসক্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ‘র্যাবের যেসব কর্মকর্তা আছেন, তাদের সবাইকে ডোপ টেস্ট করিয়েই বাহিনীতে ঢোকানো হয়েছে। তাই বাহিনীর সদস্যদের আমরা বুঝিয়ে থাকি, আমরা ক্লিয়ার এই বিষয়ে তোমরাও ক্লিয়ার হও।’
জানতে চাইলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘আমরা এটা নিশ্চিত করি। তবে শুধু ডোপ টেস্ট করলেই যে হবে এমন তো নয়, কিছু নিয়ম আছে। ছয় ঘণ্টা আগে মাদক খেলে এটা জানা যাবে না। তাই আমরা এসব বিষয় কঠোরভাবে নিশ্চিত করিÑআমাদের কোনো সদস্য যাতে অপরাধে জড়িয়ে না পড়ে।’
‘মানুষের মধ্যে তো যে কেউ অপরাধ করতে পারে। অপরাধপ্রবণতা বন্ধ রাখতে এবং অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে কি না এই দুটো বিষয় সব সময় নিশ্চিত করি। আর এটার জন্য যা যা করার দরকার, আমরা সব করি।’
পুলিশের বিশেষায়িত শাখা হিসেবে ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ যাত্রা শুরু করা র্যাবের সদস্যসংখ্যা এখন ১০ হাজারের বেশি। জঙ্গিবিরোধী বিশেষ অভিযান ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদের ভূমিকার প্রশংসাও আছে। আর মাদকবিরোধী অভিযানে কার্যত নেতৃত্বে তারাই।
গত ১০ মাসে এই অভিযানে তিন শতাধিক মানুষের প্রাণহানির খবর জানাচ্ছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। এর মধ্যে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে প্রাণহানি ঘটেছে অন্তত ৯৫ জনের।
বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মাদক সেবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার খবর গণমাধ্যমে পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে সচেতন হতে র্যাবের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু হয়।
গত বছরের ১৪ মে মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর আগে র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ মাদকে সম্পৃক্তদের প্রতি পাশাপাশি নিজ বাহিনীর সদস্যদেরও সতর্ক করেন। বলেন, মাদকের সঙ্গে কেউ সম্পৃক্ত থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে এখন পর্যন্ত মাদকাসক্ত কাউকে পাওয়া গেছে কি না, এ বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য দিতে পারছেন না র্যাবের কর্মকর্তারা। বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘র্যাবের কোনো সদস্য মাদক বেচাকেনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, সেটা আমরা নিশ্চিত। তবে অন্যান্য বাহিনীর কেউ জড়িত কি না, সেটা আমরা জানি না।’- ঢাকা টাইমস
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-