বিনোদন ডেস্ক – ২০১৮ সালের কলকাতা বাংলা ও বাংলাদেশের সিনেমার যদি তুলনা করি। বছর শেষে, কি পেয়েছি এই দুই ইন্ডাস্ট্রি থেকে? কলকাতা ছবির ক্ষেত্রে, মাচো হিরোর দাদাগিরির দিন শেষ। সরু কোমর, টকটকে ফর্সা অপূর্ব সুন্দরী নায়িকাকেও প্রত্যাখান করছে সেখানকার দর্শক। এই সংস্কৃতির অনেকটা কাছে আছে আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রও। শুধুমাত্র নায়ক-নায়িকা নয়, পরিচালক নয়, ছবির বিষয় বা গল্পরই রাজত্ব চলছে।
কলকাতায় প্রায় এক দশক ধরে গল্প নির্ভর ছবি তৈরি করছেন শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং নন্দিতা রায় জুটি। টানা কয়েক বছর ধরে বাংলা ছবির বাণিজ্যে সাফল্য এনে দিচ্ছে তাঁদের সিনেমা। ২০১৮ সাল থেকে তাদের ছবি প্রতিবছর থাকে আলোচনায়। এখনতো ব্যবসায়িক দিক থেকেও পাচ্ছে তুমুল জনপ্রিয়তা। গত বছর তারই ধারাবাহিকতায় ‘হামি’ ব্লকবাস্টার। স্টার নয়, এই হিটের পেছনে আছে একটা গল্প। তারা মনে করেন, এতদিনে মানুষ কনটেন্টের গুরুত্ব বুঝেছে। শহরের দর্শক, গ্রামের দর্শক সবাই দেখছে।
সিনেমা দু’প্রকার। হিট এবং ফ্লপ। এমন ছবি আমাকে তৈরি করতে হবে যা রিকশাওয়ালা দেখবেন, আবার একজন অধ্যাপকও দেখবেন। বাংলা চলচ্চিত্রের ধারাটা একটা সময় এমনটাই ছিল। মাঝে কি হলো, তুমুলে চর্চা চলেছে মসলাদার সিনেমা বানানো। আর তার জন্য কপি পেস্ট করো তামিল-তেলেগু ছবি। তবে গত বছর ছিল মৌলিক গল্প চর্চার বিষয়। আর সেই সিনেমা ব্যবসাও করে। যার উদাহরণ ‘দহন’।
ভালো গল্প হলে যে শুধু ঈদ আর পূজার দরকার হয় না। সেটাও দুই বাংলা বুঝেছে। বড় বাজেটের বাংলা ছবির মুক্তি ছিল মূলত উৎসব নির্ভর। দুর্গা পুজো, বড়দিন এবং বাংলাদেশে ঈদ। কিন্তু ২০১৮ সেই ক্যালেন্ডারটাই বদলে দিয়েছে। ‘উমা’, ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’, ‘দৃষ্টিকোণ’ কিন্তু কোনও উৎসবের সময় মুক্তি পায়নি। শুধু তাই নয়, এই ছবিগুলো নিজেদের বিষয়ের জোরেই বাজার করে নিয়েছে। আবার বাংলাদেশে ‘দহন’ বা ‘দেবী’ও কোন উৎসবে মুক্তি পায়নি।
শাকিব খান-আরেফিন শুভ-জিৎ-দেব-অঙ্কুশরা কী করবেন তাহলে?
যাঁরা সিঙ্গল স্ক্রিনের উপর নির্ভর করে মশলাদার ছবি করেন, তাঁদের কিন্তু ভাববার সময় হয়েছে। এক্ষেত্রে দুই বাংলায় দেব সবচেয়ে বুদ্ধিমান! সেই কবে ‘বুনোহাঁস’ করেছিল, তারপর একটু একটু করে ‘জুলফিকার’, ‘আরশিনগর’, একটা সময়ে নিজের প্রযোজনায় ‘চ্যাম্প’,‘কবীর’-এর মতো ছবি করছে। সেক্ষেত্রে শাকিব খান নিজে প্রযোজনা করবে করবে বলে করছেন না। কনটেন্টের দিক গুরুত্ব না দিয়ে একের পর এক সেই আগের মতোই ছবিতে অভিনয় করছেন। জিৎ নিজে প্রযোজনা করলেও দক্ষিণী সিনেমা থেকে বের হয়ে আসতে পারছেন না।
কলকাতা বাংলাদেশ হিসেবে করলে বক্স অফিসে আসলেই টিকে থাকতে পারেনি ‘সুলতান দ্য সেভিয়ার’, ‘ভাইজান এল রে’, ‘টোটাল দাদাগিরি’, ‘নাকাব’, ‘চালবাজ’, ‘চিটাগাঙ্গয়া পোয়া নোয়াখালি মাইয়্যা’, ‘সুপারহিরো’, ‘বাঘ বন্দি খেলা’র মতো ছবি। যেসব ছবিতে মসলাদার সব হিরো ছিল।
নায়ক বা নায়িকাদের বাজার দর কী তাহলে নেই?
সময় হয়েছে গল্প আর অনেকক্ষেত্রে পরিচালকের নাম দেখে ছবি দেখতে যাওয়ার। কারণ অভিনয়শিল্পী যা-ই হোক। নির্মাণশৈলী আর নির্মাতা ভালো না হলে যে আর চলেই না। সেটা বলিউডও অনেকটা টের পেয়েছে আমির খানের ‘থাগস অব হিন্দুস্থান’ ও শাহরুখের ‘জিরো’ সিনেমা দিয়ে। গল্পের জন্যই ছবি করার ধাঁচটা ভাঙ্গতে হবে। সুপারস্টারকে ভেবে চিত্রনাট্য লেখার দিন শেষ। গল্পের প্রয়োজনে চরিত্র তৈরি হবে। যেখানে সুপারস্টাররাও নিজেকে বিলীন করে দিবে।
কনটেন্ট যদি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় থাকে তাহলে ‘দৃষ্টিকোণ’-এ ঋতুপর্ণা-প্রসেনজিতের মতো বিগ স্টার কেন? কিংবা ‘দহন’ ও ‘দেবী’র মত চলচ্চিত্রে স্টারকাস্ট কেন?
তারও প্রমাণ দিয়েছে কলকাতা। বিগ স্টার নিলেই ছবি সুপারহিট হয় না। তার প্রমাণ ‘কিশোরকুমার জুনিয়র’। প্রসেনজিতের ছবিটা মোটেও চলেনি।
এই মুহূর্তে দুই বাংলায় যেসব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান মাত করছে তার মধ্যে বাংলাদেশের জাজ মাল্টিমিডিয়া, কলকাতার ভেঙ্কটেশ ও এসভিএফ। তিনটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানই এককথায় কনটেন্টের দিকে ঝুকছে। বাংলাদেশের মত কলকাতার দুই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানও এখন আর শাকিব খান, দেব কিংবা জিততের পেছনে ঘোরেন না। অন্যদিকে ভালো গল্পে পেলে প্রসেনজিৎ অল্প পারিশ্রমিকেও রাজি হন বলে তিনি ব্যস্ত।
তবে অনেকে মনে করেন, শুধু ভাল কনটেন্ট হলেই হবে না। এ অভিযোগটাও কিন্তু মিথ্যে নয়, অনেকে বলে আমার ছবির এত ভাল কনটেন্ট অথচ হল থেকে তুলে দিল। এটা ভুল। এই ভাবনাটা বন্ধ হোক। গল্প থাকলেই হবে না। সাহিত্য থেকে ছবি করলেই হবে না। সেটার প্যাকেজিং না থাকলে লোকে দেখবে না। কনটেন্টের নামে আঁতলামি করলে দর্শক তা দেখবে না।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-