ডেস্ক রিপোর্ট- আগামী মার্চ মাস থেকে অনুষ্ঠেয় উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি জোট। দলীয় সরকারের অধীনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপি’র অভিযোগে ওই নির্বাচন বর্জন করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে জোট। বিএনপি ও জোটের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বিএনপি ও জোটের কয়েকজন নেতা সমকালকে জানান, একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সংলাপে সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে বারবার ঘোষণা দিলেও নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। ফলে এ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মনোভাব নেই তাদের। অংশ নিয়ে নির্বাচনকে বৈধতা দিতে যাবেন কি-না- এ নিয়ে দল ও জোটের ভেতর চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে।
তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন গতকাল সমকালকে বলেন, এ বিষয়ে তারা এখনও আলোচনা করেননি। জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। সময় হলে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন তারা।
নাম প্রকাশ না করে বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা জানান, দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে বিএনপি জোটের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে ব্যাপক চাপ ছিল। সরকারের পক্ষ থেকেও সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশ্বাস দেওয়ায় তারা নির্বাচনে গিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে বিএনপির আশঙ্কাই সত্য হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচনের ফলাফলেই এটা প্রমাণিত হয়েছে। ফলাফল দেখে দেশবাসী ও বিদেশিরা বিস্মিত।
বিএনপি নেতারা বলেন, বর্তমানে সারাদেশে তাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলায় কারাভোগ করছেন। অনেকে মামলা মাথায় নিয়ে এলাকাছাড়া। যারা প্রকাশ্যে ছিলেন, হুমকি-ধমকির কারণে তারাও নির্বাচনী মাঠে ছিলেন না। কেউ পোলিং এজেন্ট হওয়ার সাহস করেননি। ফলে সারাদেশে বেশিরভাগ ভোটকেন্দ্রে ধানের শীষের পোলিং এজেন্ট ছিল না।
তারা বলছেন, নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের কর্মীরা আবার বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। হামলা-মামলার ভয়ে এখন অনেকে বাড়িছাড়া। এ পরিস্থিতিতে তিন মাসের মধ্যে আরেকটি নির্বাচন দিলেও একই পরিণতি হবে। উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিলে সম্ভাব্য প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের আবার মামলা-হামলার শিকার হতে হবে। জাতীয় নির্বাচনে ‘কারচুপির মাধ্যমে বিপুল বিজয়ের’ পর উপজেলা নির্বাচনেও বিএনপিকে দাঁড়াতে দেবে না ক্ষমতাসীন দল।
সূত্র জানায়, এবারের নির্বাচনও বর্জনের ব্যাপারে চাপ ছিল বিএনপি হাইকমান্ডের ওপর। দলের প্রার্থী ও তৃণমূল নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হাইকমান্ডের ওপর। নির্বাচনের আগে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলুর ফাঁস হওয়া ফোনালাপেও নির্বাচন বর্জনের কথা উঠে আসে। নির্বাচনের আগে বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানীও প্রকাশ্যেই হাইকমান্ডকে ভোট বর্জনের অনুরোধ করেন।
বিএনপি সূত্র জানায়, সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবারও কারচুপির অভিযোগে নির্বাচন বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে নির্বাচন কমিশনকে স্মারকলিপি দেওয়ার আগে দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকেও এসব বিষয় উঠে আসে। বক্তব্য রাখার সুযোগ না থাকার পরও ফ্লোর থেকে বেশ কয়েকজন প্রার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দলীয় প্রার্থীদের নির্বাচন বাতিল, নেতাকর্মীদের মামলা-গ্রেফতার ও নির্যাতনের পরও নির্বাচনে থাকা উচিত হয়নি। নির্বাচনের দু’দিন আগেই বর্জন করলে ফলাফলে এ করুণ চিত্র দেখতে হতো না।
শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, এবারের নির্বাচনে কারচুপির ঘটনা দেখে সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীরা বিস্মিত ও হতভম্ব। নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি না হওয়ায় নির্বাচনে থাকা নিয়েও নেতাকর্মীরা প্রশ্ন তুলছেন। এ পরিস্থিতিতে তিন মাসের মধ্যে আবারও আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ‘ধানের শীষ’ প্রতীক নিয়ে উপজেলা নির্বাচনে যাব কি না- দল ও জোট তা বিবেচনা করবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন মার্চ থেকে উপজেলা নির্বাচন শুরুর ঘোষণা দেওয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা নড়েচড়ে বসেছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরাও এলাকায় তৃণমূল নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছেন। তবে বিএনপি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা উপজেলা নির্বাচন নিয়ে নীরব।
বর্তমানে সারাদেশে ৪৯৪ উপজেলার মধ্যে বিএনপি ও জামায়াতের দেড় শতাধিক উপজেলা চেয়ারম্যান রয়েছেন। ভাইস চেয়ারম্যান রয়েছেন দুই শতাধিক। গত উপজেলা নির্বাচনে বেশিরভাগ এলাকাতে বিএনপি ও জামায়াত পৃথকভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মার্চে উপজেলা নির্বাচন করতে হলে, জানুয়ারি কিংবা ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকেই তফসিল ঘোষণা করতে হবে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই সপ্তাহ পরই উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ছয় ধাপে ওই নির্বাচনের ভোট হয়। সে সময় ছয় ধাপে ৪৮৭টিরও বেশি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে গতবার নির্দলীয়ভাবে উপজেলায় ভোট হলেও এবার হবে দলীয় প্রতীকে। যেসব উপজেলা পরিষদের মেয়াদ জুলাই মাসে শেষ হচ্ছে ওই সব উপজেলার নির্বাচন ৩১ মার্চের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। জুলাইয়ের পরে যেসব উপজেলা পরিষদের মেয়াদ শেষ হবে সেগুলোর নির্বাচন পরে সুবিধাজনক সময়ে ঘোষণা করা হবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-