সবাইকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা। সত্যি কথা বলতে কী—নববর্ষের এই দিনটি কিন্তু অন্য আর যেকোনো দিন থেকে এতটুকু ভিন্ন নয়। কিন্তু তার পরও প্রতিবছর আমরা আলাদাভাবে এই দিনটি পালন করি। গত বছর যা কিছু ঘটেছে তার মাঝে যা কিছু অশুভ স্মৃতি থেকে সেগুলো ঝেরে ফেলে নিজেকে বোঝাই ভবিষ্যতে আর কখনো এগুলো আমাদের কাছে ফিরে আসবে না! এই দিনটিতে আমরা নতুন করে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করি, নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখি। পৃথিবীর প্রায় সব মানুষের কাছে নববর্ষটি এ রকম কিছু আনুষ্ঠানিকতা বা আনন্দ অনুষ্ঠান থেকে বেশি কিছু নয়।
২০১৯ সালের এই নববর্ষটি কিন্তু আমাদের জন্য সম্পূর্ণ একটি ভিন্নমাত্রা নিয়ে এসেছে। কারণ আমাদের দেশে সদ্য একটা নির্বাচন হয়েছে। এই নববর্ষটি তাই শুধু একটা নতুন বছর নয়, এর সঙ্গে এসেছে আমাদের দেশ পরিচালনার জন্য নতুন একটি সরকার। শেখ হাসিনার ওপর আস্থা রেখে দেশের মানুষ তাঁর দলকে বিশাল একটি বিজয় উপহার দিয়েছে। এই বিশাল বিজয় কিন্তু বিশাল একটি দায়িত্ব, ষোল কোটি মানুষের জীবনের ভালো-মন্দের দায়িত্ব থেকে কঠিন দায়িত্ব আর কী হতে পারে!
এই নববর্ষে নতুন সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশাও কিন্তু আকাশছোঁয়া। আমরা সমাজের আনাচে-কানাচের প্রকাশ্যে বা ঘাপটি মেরে থাকা দুর্নীতিকে চিরদিনের মতো ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে চাই। আজ থেকে পাঁচ বছর পর আবার যখন নির্বাচনের সময় আসবে তখন যেন তারা মাথা উঁচু করে বলে, ‘আমরা কথা দিয়েছিলাম দুর্নীতি দূর করে দেব। এই দেখ দুর্নীতি দেশছাড়া করেছি!’
আগামী পাঁচ বছর আমরা শিক্ষার মাঝেও একটা গুণগত পরিবর্তন দেখতে চাই। এই দেশের সব ছেলে-মেয়েকে স্কুলে নিয়ে আসা গেছে। দেশের একেবারে হতদরিদ্র মানুষটিও জেনে গেছে, সুন্দর একটা জীবন পেতে হলে লেখাপড়া করতে হবে। কিন্তু কিভাবে, কিভাবে জানি লেখাপড়াটা হয়ে গেছে পরীক্ষার সঙ্গে সমার্থক। জিপিএ ফাইভ নামে পুরোপুরি ভুল একটা স্বপ্নের পেছনে আমরা আমাদের ছেলে-মেয়েদের ছুটিয়ে দিয়েছি। এখন সময় হয়েছে তাদের জীবনের সঠিক স্বপ্নটি দেখানোর—তাদেরকে সত্যিকারের লেখাপড়া শেখানো। যখন যে বয়সে তাদের যেটুকু জানার কথা তারা যেন সেটি জানতে পারে। শুধু সংখ্যা দিয়ে সন্তুষ্ট থাকব না, এখন চাই গুণগত মান।
নতুন বছরের এই সময়টি হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক একটি দেশের স্বপ্ন দেখার সময়। আশা করব আগামী পাঁচ বছর নতুন সরকার নতুন প্রজন্মকে পুরোপুরি অসাম্প্রদায়িক হতে শেখাবে। আমাদের চারপাশে এখন অসহনশীল দেশ, অসহনশীল সমাজ, তার ভেতরে আমরা সহনশীল জাতি হিসেবে সারা পৃথিবীর উদাহরণ হয়ে বড় হতে চাই।
পৃথিবী থেকে মানব প্রজাতি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার যে কটি আশঙ্কা রয়েছে তার ভেতর একটি হচ্ছে জলবায়ুর সংকট। আমাদের বাংলাদেশ অনিয়ন্ত্রিত জলবায়ুর কারণে পৃথিবীর মাঝে সবচেয়ে বিপদগ্রস্ত দেশটির একটি হয়ে যেতে পারে। একটা সময় ছিল যখন আমাদের সমস্ত সম্পদ ব্যয় করতে হতো শুধু অন্ন বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা আর চিকিৎসার মতো মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে। এখন আমরা আরো একটু ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে পারি। আমার মনে হয়, আমরা এখন জলবায়ুর বিপদ থেকে দেশকে রক্ষা করার পরিকল্পনা করতে পারি। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মতো বিষয়গুলো যখন আমাদের দোরগোড়ায় হাজির হবে, তখন যেন আমাদের মাথা চাপড়ে হা-হুতাশ করতে না হয়, আমরা যেন আমাদের নিজেদের জ্ঞান-বিজ্ঞান-অভিজ্ঞতা নিয়ে বের করে আনা নিজস্ব প্রযুক্তি নিয়ে প্রস্তুত থাকি!
বাংলাদেশের মানুষ সামগ্রিকভাবে কখনো ভুল করেনি, তাদের দরকার একটুখানি সুযোগ। আগামী পাঁচ বছর এই দেশের মানুষকে সেই সুযোগটুকু দেওয়া হবে, এটাই হোক আমাদের নববর্ষের প্রত্যাশা।
কমরুদ্দিন মুকুল
সম্পাদক– www.Coxsbazarjournal.Com
সাধারণ সম্পাদক-উখিয়া প্রেস ক্লাব
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-