কক্সবাজারসহ নির্বাচনী সহিংসতায় ১৩ জন নিহত

ডেস্ক রিপোর্ট – একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদানকে কেন্দ্র করে কুমিল্লায় এক বিএনপি কর্মীকে পিটিয়ে ও একজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। 

এছাড়া লক্ষ্মীপুরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে একজন, চট্টগ্রামের পটিয়ায় যুবলীগ কর্মী, বাঁশখালীতে জাতীয় পার্টির কর্মী, রাঙ্গামাটিতে যুবলীগ নেতা, রাজশাহীর মোহনপুরে আ.লীগ নেতা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় গুলিতে এক রাজমিস্ত্রি ও টাঙ্গাইলে এক বিএনপি নেতার মরদেহ উদ্ধার ও বগুড়ার কাহালুতে একজন নিহত হয়েছেন। 

এছাড়াও দুপুরের পর নাটোরের নলডাঙ্গা ও নরসিংদীর শিবপুর উপজেলায় ভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে দুইজনের মৃত্যু হয়ছে। বিস্তারিত জাগো নিউজের প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদে।

কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, কুমিল্লা-১০ আসনে (নাঙ্গলকোট) বাচ্চু মিয়া (৪৮) নামে এক বিএনপি কর্মীকে হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। রোববার সকালে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, উপজেলার বরতলী ইউনিয়নের মুরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে যাওয়ার পথে হেলমেট পরিহিত একদল দুর্বৃত্ত তাকে বাধা দেয়। এ সময় বাধা উপেক্ষা করে কেন্দ্রে যেতে চাইলে বাচ্চুকে রাস্তায় হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে আহত করে দুর্বৃত্তরা। পরে নাঙ্গলকোট হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। হামলাকারীরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নাঙ্গলকোট থানা পুলিশের ওসি নজরুল ইসলাম জানান, হামলাকারীদের শনাক্ত করা যায়নি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

এছাড়াও কুমিল্লা-৭ চান্দিনা আসনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষে মজিবুর রহমান (৩৫) নামে এক বিএনপি কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বেলাশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত রয়েছে।

মজিবুর পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন ওই আসনের ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী অ্যাড. রেদোয়ান আহমেদ। তবে চান্দিনা থানা পুলিশের ওসি মো. ফয়সাল বলেন, ময়নাতদন্তের পর বলা যাবে কার গুলিতে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বেলাশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের কর্মীরা ব্যালটে সিল মারছে এমন খবর পেয়ে বিএনপির কর্মীরা সেখানে যায়। এ সময় দু’পক্ষ সংঘর্ষে জড়ালে পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশও স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়ে সেখানে আসে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি ছুড়লে মজিবুর নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন রাহাত ও ফারুক নামে আরও দুজন।

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের বড়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্র এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে অজ্ঞাত এক যুবক (৩৫) নিহত হয়েছেন। এছাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক রাকিব হোসেন ও ১ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জহির গুলিবিদ্ধ হন। নিহত ওই ব্যক্তির নাম ও রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি। আহতদের সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গতকাল শনিবার রাত ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

চট্টগ্রামের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রামের পটিয়ায় দ্বীন মোহাম্মদ (২৮) নামে এক যুবলীগ কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি কুসুমপুরা ইউনিয়নের গুরনখাইন এলাকার বাসিন্দা। উপজেলার কুসুমপুরা ইউনিয়নের গোরনখাইন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত দ্বীন মোহাম্মদ কুসুমপুরা ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের দাবি, ওই ব্যক্তিকে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন কুপিয়ে হত্যা করেছে। তবে বিএনপি বলছে, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও টাকা ভাগাভাগি নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।

এছাড়া চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় ভোটগ্রহণ শুরুর আগেই আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় গুলিতে আহমদ কবীর (৪৫) নামে জাতীয় পার্টির এক কর্মী নিহত হন। রোববার ভোটগ্রহণ শুরুর আগের রাতে বাঁশখালী পৌরসভার কাথারিয়া ইউনিয়নের বড়ইতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী অভিযোগ করেন, রাত থেকে আওয়ামী লীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা কেন্দ্র দখল করে ব্যালটে সিল মারার চেষ্টা করলে তার সমর্থকরা বাধা দিতে গেলে সন্ত্রাসীরা গুলি চালায়। এতে আহমদ কবীর মারা যান। এছাড়া কয়েকজন গুরুতর আহত হন।

বাঁশখালী থানা পুলিশের ওসি কামাল হোসেন জানান, নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। এ ঘটনায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তারা চিকিৎসা নিয়েছেন। বিষয়টির তদন্ত চলছে।

কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, পেকুয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকদের সংঘর্ষে এক যুবলীগ কর্মী নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম আবদুল্লাহ আল ফারুক (২৫)। তিনি রাজাক আলী গ্রামের আবুল কালামের পুত্র।

কক্সবাজার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মাতবরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থকদের হামলায় তিনি গুরুতর আহত হন। এ সময় তাকে কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে তার মৃত্যু হয়।

পেকুয়া থানার ওসি জাকের হোসেন ভূঁইয়া জানান, তিনি ঘটনা জানতে পেরে ওই এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেছেন। তবে এ ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কোনও মামলা হয়নি।

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি জানান, রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকদের সংঘর্ষে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বাছির উদ্দীন (৩৫) নিহত হয়েছেন। কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।

স্থানীয়রা জানান, সকালে ভোটগ্রহণ শুরুর আগে ইউনিয়নের রাঙ্গিপাড়া এলাকায় নৌকা ও ধানের শীষের সমর্থকের মধ্যে হঠাৎ সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় বাছির উদ্দীনসহ উভয়পক্ষের অন্তত ১১ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে গুরুতর বাছির উদ্দীনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কাউখালী থানা পুলিশের ওসি মঞ্জুর আলম জানান, ভোটগ্রহণের আগে দু’দলের সংঘর্ষে এক যুবলীগ নেতার মৃত্যু হয়। পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত। শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলছে।

রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের মোহনপুর উপজেলায় নির্বাচনে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষে মিরাজ উদ্দিন নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত হন। রোববার বেলা ১১টার দিকে মোহনপুরের পাকুন্দিয়া বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

জেলা পুলিশের মুখপাত্র সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সদর) আব্দুর রাজ্জাক খান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভোটকেন্দ্রে গুলিবিদ্ধ হয়ে ইসরাইল মিয়া (১৯) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। বেলা ১১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই (উত্তর) ইউনিয়নের রাজঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ইসরাইল ওই ইউনিয়নের রাজঘর গ্রামের ছাওয়াল মিয়ার ছেলে। তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রি ছিলেন বলে জানা গেছে।

বেলা ১১টার দিকে রাজঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় ইসরাইল গুলিবিদ্ধ হন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইসরাইলের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

সদর মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) শরিফুল ইসলাম বলেন, দুষ্কৃতকারীরা অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে কেন্দ্র দখলে নেয়ার চেষ্টা করলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের ছত্রভঙ্গ করে। তবে গুলিবিদ্ধ হয়ে কেউ মারা গেছে কি-না সেটা জানা নেই।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার নগদা শিমলা ইউনিয়নের বাইশকাইল গ্রামে আব্দুল আজিজ (৭০) নামে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত আজিজ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বলে স্থানীয়রা জানালেও পুলিশ বলছে তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নয়। রোববার সকালে ওই গ্রামের একটি ধানখেত থেকে আজিজের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। শনিবার এশার নামাজের পর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন।

গোপালপুর থানা পুলিশের ওসি হাসান আল মামুন জানান, মরদেহে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।

বগুড়ার নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, বগুড়ার কাহালু উপজেলার নন্দিগ্রামে বাগইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্বাচনী সহিংসতায় আওয়ামী লীগের কর্মী আজিজুল হক (৩২) নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় নাজমুল হক জুয়েল নামে আওয়ামী লীগের অপর এক কর্মী আহত হন।

রোববার সকাল সাড়ে ১১টায় কাহালু নন্দিগ্রামের বাগইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।

কাহালু থানার ওসি শওকত কবীর জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, জামায়াত-বিএনপির সমর্থকরা আওয়ামী লীগের কর্মী আজিজুল হক ও নাজমুল হককে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। তাদের উদ্ধার করে টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আজিজুল হককে মৃত ঘোষণা করেন। তবে সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে বলেও জানান তিনি।

নাটোর প্রতিনিধি জানান, নাটোরের নলডাঙ্গায় ভোট দিতে যাওয়াকে কেন্দ্র করে বিএনপি সর্মথক ভাতিজা রতন আহমেদের ছুরিকাঘাতে আওয়ামী লীগ কর্মী চাচা হোসেন আলীর মৃত্যু হয়েছে। রোববার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার সমাস খলসি দিয়ারপাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত হোসেন আলী একই এলাকার অছিমুদ্দিনের ছেলে।

জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম ও এলকাবাসী জানান, উপজলোর সমাস খলসি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যায় বিএনপি সর্মথক রতন আহমদে ও তার স্ত্রী। এসময় আওয়ামী লীগ কর্মী চাচা হোসেন আলী তাদের বাধা দেয় এবং পরে বাড়িতে গিয়ে ভাতিজাকে চড় থাপ্পড় মারে। এতে ভাতিজা রতন ক্ষিপ্ত হয়ে ঘরে থাকা ছোড়া দিয়ে চাচা হোসেন আলীর পেটে আঘাত করে। এসময় স্থানীয়রা এগিয়ে গিয়ে আহত অবস্থায় হোসেন আলীকে উদ্ধার করে নাটোর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরির্দশনে যান। তবে পুলিশ ও বিএনপির দাবি পারিবারিক বিরোধের জের ধরে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে।

নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, শিবপুর উপজেলায় মিলন মিয়া নামে আওয়ামী লীগেরর এক কর্মীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার কুন্দলপাড়া ভোটকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।

আরও খবর