বিশেষ প্রতিবেদক – উখিয়ার সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে স্বীয়পদে বহাল কর্মকর্তারা বাড়তি জাতীয় নির্বাচন ও রোহিঙ্গা সংক্রান্ত কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে চলমান কর্মসৃজন প্রকল্পের কাজ দেখাশোনা থেকে বিরত রয়েছেন। এমনকি প্রকল্প তদারকির জন্য দায়িত্বরত টেক অফিসারও প্রকল্প পরিদর্শন না করায় যেনতেনভাবে চলছে কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্পের কার্যক্রম। ২৭ অক্টোবর থেকে এ উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ২৬টি প্রকল্পের কাজ শুরু করা হলেও রত্নাপালং ইউনিয়নের ৪টি প্রকল্পের কাজ এ পর্যন্তও শুরু হয়নি।
২০১৮/ ২০১৯ অর্থবছরে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস’ান (ইজিপি) কর্মসূচির আওতায় (১ম পর্যায়) গৃহীত ও অনুমোদিত তালিকা অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ৫টি ইউনিয়নের জন্য ৩০টি প্রকল্প বাস্তবায়নের অনুমতি দিয়েছেন। প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার নির্দেশক্রমে একই দিনে কাজ শুরু এবং নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও উখিয়া উপজেলায় তার ব্যতিক্রম ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রত্নাপালং ইউনিয়নে গৃহীত ৪টি প্রকল্পের কাজ কেন শুরু করা হয়নি, জানতে চাওয়া হলে রত্নাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খাইরুল আলম চৌধুরী জানান, কর্মসংস’ান প্রকল্পের কাজের ওপর তার আস’া নেই। কারণ ২০০ টাকা দৈনিক বেতনে কেউ কাজ করতে চায় না।
কাজ ফাঁকি দিয়ে টাকা উত্তোলন করাটা তার জন্য বেমানান উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করা যায় না। তাই আগামী শনিবার থেকে কাজ শুরু করার প্রস’তি নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি সাংবাদিকদের। এদিকে জালিয়াপালং ইউনিয়নের ৪টি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। যা আগামী ১৯ ডিসেম্বর শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সরজমিন এ ইউনিয়নের ছেপটখালী মেরিন ড্রাইভ রোড় থেকে সিকদার মার্কেট হয়ে নতুন চাকমা পাড়া পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার এবং মনখালী সিকদার পাড়া রাস্তা থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার প্রকল্প ঘুরে দৃশ্যমান কাজের অগ্রগতি দেখা যায়নি।
এ প্রকল্পে ৮০ জন শ্রমিক কাজ করার কথা রয়েছে। ওই এলাকার স্থানীয় রশিদ আহম্মদ, আবুল হোসেনসহ বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, ১০/১২ জন শ্রমিক কয়েকদিন কাজ করে আর আসেনি। এভাবে প্রতিটি প্রকল্পে ন্যূনতম সংস্কার কাজ হয়নি বলে স’ানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ দাবি করেন। এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জালিয়াপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী জানান, তার ইউনিয়নে দৃশ্যমান উন্নয়ন কাজ হয়েছে। এলাকার কিছু মানুষ বিরোধিতার খাতিরে সাংবাদিকদের মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করে বিভ্রান্ত করছে। হলদিয়াপালং ইউনিয়নের ১২ নম্বর প্রকল্প রুমখা বৌ বাজার বাবুল শর্মার বাড়ি থেকে মহাজনপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক রাস্তা সংস্কার কাজ প্রত্যক্ষ করে কোনো শ্রমিকের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ প্রকল্পে ৭০ জন শ্রমিক কাজ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নাম প্রকাশ না-করার শর্তে কয়েকজন গ্রামবাসী জানালেন, এখানে কাউকে সংস্কার কাজ করতে দেখা যায়নি। প্রকল্প সভাপতি স্বপন শর্মা রনি জানান, তার প্রকল্পে শতভাগ কাজ হয়েছে। এ ইউনিয়নে ৯টি প্রকল্প বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এলাকাবাসী ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ তথা সর্বসাধারণের অভিযোগ, নির্বাচনের সুযোগে প্রকল্পের কাজ না করে সংশ্লিষ্টরা টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। পালংখালী ইউনিয়নের ৪টি প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা থাকলেও একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন স’ানীয় চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, থাইংখালী থেকে উপকূলীয় এলাকা ইমামের ডেইল পর্যন্ত একটি সড়ক নির্মানের কাজ চলছে। এ পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। আর ৪ কিলোমিটার কাজ করলে উপকূলের সাথে থাইংখালী পর্যন্ত সরাসরি যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা না থাকায় তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, যেসব প্রকল্পে কাজ হয়নি, সেসব প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ টাকা দেয়া হবে না।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-