ডেস্ক রিপোর্ট:সমুদ্র উপকূলে ‘শুঁটকি মাছ’ উৎপাদনে ধুম পড়েছে। সাগর উপকূলের জেলেরা বিভিন্ন প্রজাপতির মাছ সংগ্রহের পর সেগুলো রোদে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করছেন। আগামী ৩০মে পর্যন্ত শুঁটকি উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করবেন জেলার বিভিন্ন শুঁটকি মহালের শ্রমিকরা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কক্সবাজার ভ্রমণে আসা পর্যটকদের খাবারের তালিকায় থাকে শুঁটকির ভর্তা। এ ছাড়া পর্যটকদের বড় একটি অংশ বাড়ি ফেরার সময় শুঁটকি কেনেন।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, পর্যটন মৌসুমের পাঁচ মাসে (নভেম্বর-মার্চ) শহরের দোকানগুলোতে প্রায় ২০০ কোটি টাকার শুঁটকি বিক্রি হয়। শুঁটকির চাহিদা পূরণ করতে অনেকে ভারত ও মিয়ানমার থেকে শুঁটকি আমদানি করে এখানে বিক্রি করেন।
কক্সবাজার ফিশিং বোট মালিক সমিতির সভাপতি মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, জেলার প্রায় ছয় হাজার ট্রলার সাগরে থেকে ইলিশ, কোরাল, লাক্ষা, চাপা, কামিলা, রুপচাঁদা, পোপাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ সংগ্রহ করেন। এসব মাছের বড় একটা অংশ যাচ্ছে শুঁটকিমহালে। শহরের নাজিরারটেক উপকূলে অন্তত ৫০-৬০টি মহালে (শুঁটকি উৎপাদন কেন্দ্র) উৎপাদিত হচ্ছে শত শত মণ শুঁটকি।
নাজিরারটেক এলাকার একটি মহালে দেখা গেছে, ৩০ জনের বেশি নারী কাঁচা মাছ ধুয়ে পরিষ্কার করছেন। এরপর লবণ মিশিয়ে সেই মাছ বাঁশের মাচায় তুলে রোদে শুকাচ্ছেন।
আকলিমা বেগম নামে একজন শ্রমিক অভিযোগ করে বলেন, সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কাজ করে ২শ’ টাকা পাই। অথচ সমান কাজ করে পুরুষ শ্রমিকরা পায় মজুরি পায় ৪শ’ টাকা।
শুঁটকি শ্রমিক আমান উল্লাহ ও কুলসুম আরা বলেন, নাজিরারটেক এলাকার প্রায় ৬০টির মত মহালে শ্রমিক আছে প্রায় সাত হাজার। এরমধ্যে পাঁচ হাজার নারী ও একহাজার শিশুশ্রমিক। কম টাকায় কাজ আদায়ের জন্য মহালের মালিকরা নারী ও শিশুদের নিয়োগ দেন।
নাজিরারটেক এলাকার একটি মহালের মালিক সব্বির আহমদ বলেন, শুঁটকি উৎপাদনের ভরা মৌসুম হলেও কয়েকদিন ধরে মাছের সংকট চলছে। জেলেদের ধরে আনা বড় মাছগুলো পর্যটকদের জন্য শহরের হোটেলে সরবরাহ করা হয়। আর ছোট মাছ শুঁটকির জন্য মহালে আনা হয়। বর্তমানে প্রতি কেজি ছুরি শুঁটকি বিক্রি হচ্ছে ৩শ’ থেকে এক হাজার ৬শ’ টাকা, চিংড়ি ৮শ’ থেকে দুই হাজার টাকা, রুপচাঁদা ৮শ’ থেকে দুই হাজার ৪শ’ টাকা, মাইট্যা ৬শ’ থেকে ৯শ’ টাকা, লইট্যা ৪শ’ থেকে এক হাজার ২শ’ টাকা, কোরাল ৮শ’ থেকে এক হাজার ৫শ’ টাকা, পোপা ৪শ’ থেকে এক হাজার ৩শ’ টাকা।
ওয়ার্ড কাউন্সিলর আকতার কামাল বলেন, প্রতি সপ্তাহে এ উপকূল থেকে পাঁচ কোটি টাকার শুঁটকি বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। শুঁটকি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত আছে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক।
বাংলাদেশ সল্টেড অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুল শুক্কুর বলেন, নুনিয়াছটা, সেন্টমার্টিন ও টেকনাফে পোপা শুঁটকির ৩৭টি মহাল রয়েছে। গত বছর এসব মহালে উৎপাদিত পোপা শুঁটকি হংকং, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় ২শ’ কোটি টাকার শুটকি রফতানি করা হয়েছে। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে এবছর ৩শ’ কোটি টাকার শুঁটকি রফতানি হতে পারে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-