সিভয়েস :কক্সবাজারের কলাতলী চন্দ্রিমা এলাকার পাহাড়ের ভিতরে একটি বাড়িকে ঘিরে স্থানীয়দের মাঝে রহস্য তৈরি হয়েছে।
চারপাশে পাহাড়, সামনে ছোট খাল (চরা) ও পাহাড়ের ঢালুতে তৈরি করা বাড়িটি রহস্যময় বলে মন্তব্য করেছেন এলাকাবাসীরা। গত এক সপ্তাহে গভীর রাতে বেশ কয়েকবার পুলিশও হানা দিয়েছিল ওই বাড়িতে। কিন্তু কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না এলাকাবাসী।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রবিউল আলম নামে এক ব্যক্তি বাড়িটির মালিক।রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তার নিয়মিত যাতায়ত রয়েছে। তিনি মিয়ানমারের বাসিন্দা হলেও দীর্ঘদিন ধরে কলাতলীর আশপাশে বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করে আসছেন।
সর্বশেষ নির্জন চন্দ্রিমা এলাকার পাহাড়ের ভিতরে রহস্যময় বাড়ি নির্মাণ করেছেন তিনি।
ঝিলংজা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড বখতিয়ার ঘোনা হিসেবে পরিচিতি ওই এলাকাটি যাতায়তে দুর্গম পথ। তবে কিছু দূরে কয়েকটি পরিবারের বসবাস রয়েছে। রবিউল আলম মালয়েশিয়া, সৌদি আরব ও পাকিস্তানও সফর করেছেন বলে জানা গেছে।
ইয়াবা, অস্ত্র ব্যবসা ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক জঙ্গি কানেকশনে তার হাত রয়েছে বলেও প্রচার রয়েছে এলাকায়। গত এক সপ্তাহে কয়েক দফায় পুলিশ তার বাড়িতে অভিযান চালালে এলাকাবাসীর মাঝে তার বিষয়ে আরও কৌতুহল তৈরি হয়।
অভিযান পরিচালনাকারী কক্সবাজার সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মাঈন উদ্দিন বলেন, রবিউল আলম নামে ওই ব্যক্তি ব্যবসার সাথে জড়িত। কয়েকদিন আগে তার বাড়ি থেকে ইয়াবার বড় চালান পাচার হচ্ছিল এমন খবর পেয়ে রাতে সেখানে অভিযান চালানো হয়েছিল। কিন্তু একটু দেরি হওয়ায় আমরা কাউকে আটক করতে পারিনি। তাছাড়া এলাকাটি খুবই দুর্গম। সহজে সেখানে যাওয়া যায় না। বিভিন্ন সময় তার বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে। বিগত সপ্তাহে একবার অভিযান চালানো হয়েছে। অস্ত্র ব্যবসা ও জঙ্গি কানেকশনে জড়িত কিনা আমার কাছে তথ্য নেই। তবে সে মাদক ব্যবসায়ী।
পুলিশ পরিদর্শক মাঈন উদ্দিন আরও বলেন, অনেক আগে ডাকাতির প্রস্তুুতি মামলায় রবিউল আলমকে আটকের পর আদালতে প্রেরণ করা হয়েছিল। রবিউল আলমের নিজস্ব একটি গ্রুপ রয়েছে বলে শোনা গেছে। এমনকি তার এক শালাকে ইয়াবাসহ আটকও করা হয়।
বর্তমানে পুলিশের নজরদারীতে রয়েছে রবিউল আলম।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, রবিউল আলমের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে কক্সবাজার বাস টার্মিনালস্থ ইসলামপুর এলাকার আবুল কালাম ওরফে বড়দা’র সাথে। কক্সবাজার শহরে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম আবুল কালাম। একটি গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে আবুল কালাম অস্ত্র ব্যবসায়ী বলেও নাম উঠে আসে। এই আবুল কালামের সাথে রবিউল আলমের যোগসূত্র রয়েছে বলে জানা গেছে। সে নিয়মিত আবুল কালামকে অস্ত্র বিক্রি করে থাকে এমন তথ্য জানা গেছে। আবুল কালাম এসব অস্ত্র বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে এবং সহযোগিদের কাছে মজুদ রাখে বলেও প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গেছে।
এছাড়া রবিউল আলমের সাথে নিয়মিত ইয়াবাসহ অস্ত্র ব্যবসায়ে জড়িত রয়েছে সদর উপজেলা ডিককুল এলাকার মোতালেব ও চন্দ্রিমা ঘোনা এলাকার জমির উদ্দিন। জমির উদ্দিন ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার আটকও হয়েছিল।
এলাকাবাসীরা জানিয়েছে, রবিউল আলমের চলাফেরা রহস্যময়। তার বাড়িতে রাত হলে অচেনা মানুষের আনাগোনা বেড়ে যায়। খালের উপর দিয়ে পাহাড়ের ঢালুতে তার বাসা। সহজে তার বাড়িতে কেউ যাওয়ার সুযোগ নেই। এলাকায় তিনি ইয়াবা ও অস্ত্র ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন বলে শোনা যায়। বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তার চাকরি আছে বলেও জানায় এলাকাবাসী। তবে তার বাড়ি ও চলাফেরা রহস্যময়। গত এক সপ্তাহে তার বাড়িতে বেশ কয়েকবার পুলিশ অভিযান চালায়। কিন্তু কাউকে আটক করেনি। এতে এলাকাবাসীর মাঝে রবিউল আলম আরও রহস্যময় ও কৌতুহলী হয়ে উঠেছে।
রবিউল আলমের শ্বশুর কলাতলী আদর্শ গ্রাম এলাকার নুর হোসেন বলেন, ‘রবিউল আলম আমার মেয়ের জামাই। সে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরি করে। কোনো খারাপ কাজে জড়িত নেই।। পুলিশ তার বাড়িতে গিয়ে নিয়মিত হয়রানি করছে। তাকে মারধরও করেছে পুলিশ। তল্লাশির নামে বাড়ির জিনিসপত্র তছনছ করে চলে যায়। ’
জানতে চাইলে মুঠোফোনে রবিউল আলম বলেন, আমি কোনো মাদক বা অস্ত্র ব্যবসায় জড়িত নই। পুলিশ আমাকে হয়রানি করছে। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে আমার এলাকার লোকজন। আমি বিভিন্ন সময় পাকিস্তানসহ অনেক দেশে ঘুরেছি। এখন ক্যাম্পে চাকরি করি। আবুল কালামের সাথে আমার পরিচয় আছে ঠিক কিন্তু কোনো ব্যবসা নেই।’
তিনি রোহিঙ্গা নাগরিক কি না সেটি জানতে চাইলে কোন উত্তর না মোবাইলের সংযোগ কেটে দেন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-