কক্সবাজার জার্নাল ডেস্ক :জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশ সদর দফতর সদস্যদের জন্য ২৪টি নির্দেশনা দিয়েছে। এতে আচরণবিধি মেনে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে।
বলা হয়েছে, নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আচরণবিধি লঙ্ঘন করা হলে যে কোনো পর্যায়ের পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সব মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও রেঞ্জ ডিআইজি ১২ ঘণ্টা পরপর এলাকার তথ্য হালনাগাদ করে তা সদর দফতরে জানাবেন। জেলা পুলিশ সুপার ও বিভিন্ন অঞ্চলের উপকমিশনাররা নিরাপত্তা তথ্য হালনাগাদ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন।
নির্বাচনপূর্ব সময়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে দেয়া হয়েছে কয়েকটি নির্দেশনা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বিধান, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ন্ত্রণ ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রস্তুত করা। এর বাইরেও নির্বাচন উপলক্ষে নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সূত্র বলছে, সাধারণ মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে সে পরিবেশ সৃষ্টিতে কাজ করবে পুলিশ। বৈধ অস্ত্রধারীদের মধ্যে কেউ কেউ গোপনে কোনো অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করছে কিনা, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
নির্বাচনের আগে সাদা পোশাকে কাউকে গ্রেফতার না করতেও দেয়া হয়েছে নির্দেশনা। তবে কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকলে নিরাপত্তা ও জনস্বার্থে অভিযান হতে পারে। নির্বাচনের আগে ফৌজদারি অপরাধ ছাড়া কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা যাবে না। আটকের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট তথ্য ও প্রয়োজনীয় কাগজ থাকতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে, কোনো গোষ্ঠী যেন হামলার সুযোগ না নিতে পারে, পুলিশকে টার্গেট করতে না পারে।
নয়াপল্টনের ঘটনা ছাড়া সার্বিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে জানিয়ে নির্দেশনায় বলা হয়েছে, তবে বিচ্ছিন্নভাবে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে কেউ কেউ জড়িত হতে পারে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালাতে পারে বিশেষগোষ্ঠী। তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। নারী আসামি গ্রেফতারে নারী পুলিশ সদস্যকে অবশ্যই সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে।
পেশাদার অপরাধীদের গ্রেফতারে অভিযানে জোর দিতে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, রাজনৈতিক নেতা বা তাদের ভাড়াটে সন্ত্রাসী ব্যবহার করে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে ব্যবস্থা গ্রহণ, হটস্পট চিহ্নিত করে টহল জোরদার, কোনো বাড়িতে নতুন ভাড়াটিয়া আসলে তাদের তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে পলাতক ও জামিন পাওয়া জঙ্গিদের গ্রেফতারের ওপর। পুলিশকে সীমান্ত এলাকায় কড়া নজর রাখতে বলা হয়েছে, যাতে কোনো গোষ্ঠী অবৈধভাবে অস্ত্র ও গোলাবারুদ আনতে না পারে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নির্বাচনে সম্পৃক্ততা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, চিকিৎসা ছাড়া অন্য কোনো কারণে আশ্রয় শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের বের হওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে থাকতে হবে। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক যুগান্তরকে বলেন, কোনো রোহিঙ্গা সদস্য ক্যাম্প ইনচার্জের লিখিত অনুমতি ছাড়া উখিয়ার বাইরে যেতে পারে না। তবে যারা অসুস্থ তাদের অনুমতি দেয়া হবে।
এ ব্যবস্থা এখন থেকেই কার্যকর রয়েছে, যাতে কেউ কোনো প্রার্থীর হয়ে কাজ করতে বা কোনো অপরাধে জড়াতে না পারে। নির্বাচন বানচাল করতে কোনো কোনো গোষ্ঠী ষড়যন্ত্রে সক্রিয় আছে জানিয়ে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে- মাঠে কাজ করবে এমন সব পুলিশ সদস্যকে নির্বাচন প্রস্তুতিমূলক ব্রিফিং ও প্রশিক্ষণ দিতে হবে (এরই মধ্যে শুরু হয়েছে)। যেখানে জনবল ঘাটতি আছে সেখানে পূরণ, পুলিশ সদস্যদের উজ্জীবিতকরণ, তাৎক্ষণিকভাবে অবকাঠামো সহায়তা, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় ও যোগাযোগ বৃদ্ধি, যে কোনো বিষয়ে তাৎক্ষণিক তথ্য বিনিময়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
এছাড়া গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও আগাম তথ্য সংগ্রহে তৎপরতা জোরদার, কোনো বিরূপ তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রতিরোধ ব্যবস্থার কর্মকৌশল নির্ধারণ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে মাঠের পুলিশকে। জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের এডিশনাল ডিআইজি (ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স) মো. মনিরুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, একটি নির্বাচন সুষ্ঠু এবং অবাধ করতে যে সমস্ত বিষয় নজরে আনা প্রয়োজন, পুলিশের পক্ষে সেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-