আলমগীর মাহমুদ
হাতিমোরা। উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের অংশ। উখিয়া কলেজের বরাবর পূর্বে। আরো পূর্বে দরগাবিল বাগান পাড়া।
কলেজ থেকে দেড়ঘন্টার হাঁটাপথ। উখিয়া স্টেশন থেকে টমটম, সিএনজি হাঁটাপথ মিলিয়ে ঐ এলাকায় পৌঁছাতে ঘন্টার কাছাকাছি সময় ধৈর্য ধারণ লাগে।
মধুবন (মিষ্টি খাবারাদির দোকান) মালিক সোলায়মান সাহেব সাতকানিয়া চট্টগ্রাম, মরহুম মুক্তিযোদ্ধা বাংলা নজিরের ছেলে উনার জামাতা মৌলভী সিরাজের মাধ্যমে আনুমানিক ত্রিশ একরের কাছাকাছি জমিতে মৎস্য চাষের প্রক্রিয়া করে শুরু করেন।
রাজাপালং ৮নং ওয়ার্ডের বাগান পাড়ায়। এলাকাটি ছোট ছোট পাহাড়, পাহাড়ের ছা, পাহাড় কেটে সমতল চাষী ভূমি। সবুজের সাম্রাজ্য। লোকজনের বসতি আছে আছে, নাই নাই। মাঝে মধ্যে বসার টংঘর। হাওয়া খানার বেশেই।
জলের সমাগমে সমতল পানির তলায়। পাহাড়, পাহাড়ের ছা –জলে ভাসছে ভাসছে। টিলাগুলো জলে বিচ্ছিন্ন। বিচ্ছিন্ন দ্বীপে যাবার নান্দনিক সাঁকো। সব মিলিয়ে সবুজের খেলাঘরে নান্দনিকতার নির্ঝরিনী। এলাকাবাসীর কাছে পর্যটন স্পটের মতই দরদ পাওয়া শুরু করে বেশ ক’বছর থেকে।
পূঁজার বন্ধ। অভিমানী ছাত্ররা ছেকে ধরে এক কথা একগ্রুপ নিয়ে মঞ্জয় পাড়া ঝর্ণা দেখিয়ে মন জয় পাড়ার মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছেন আমরা কেন আপনার রাজাকারের লিষ্টিতে পড়ে গেলাম স্যার?
আমাদের নিয়েও কোথাও যেতে হবে সবাই আপনার অফিসের মেঝেতে বসে পড়লাম। ভাবলাম ভ্রমনের উঠোনে রাজাকার, মুক্তিযোদ্ধা, মেঝেতে বসে পড়া সামাল দিতে হইবে নইলে গরম পানিতে ঘরপোড়া যাওয়ার সম্ভবনা।
সাথে সাথেই জোসেফ ১ম বর্ষ অনার্স, মিজান, আপেলকে গ্রুপ লিডার করে তিন গ্রুপ করে হাঁটতে রইলাম। ঘোষণা দিলাম। নন্দনের বাগানে মৎস চাষ দেখাব।
হাঁটছে প্রাণের আনন্দে। আর গানের মূহ মূহ টান।হাসির ঝলকে পৌঁছাতেই বিমোহিত হলাম। সবাই পানিতে ঝাপ, ডুব সাতার। আমি হাওয়া ভবনে আছি বসে। জোসেফ মোচার অর্ডার দেয়, জনপ্রতি একটা করে। সাপ্লাইয়ে সময় চায়। অভয় জানিয়ে গেলাম খানিক দেরীতে সমস্যা নাই। বিন্নিভাত, ডিম,মরিচ গুড়া চাটনি,ব্যঙের ছাতা (ওল) রান্নায় হবে মোচা।
হেঁটে চলা পথিককে জানতে চেয়েছিলাম ‘ ভাই এলাকাটির কি নাম? ফিরতি জবাবে “সেন অর ফিশারীঘাট” কইলে এক নামে চেনে। তবে এলাকাটি বাগান পাড়া নামেই পরিচিত শুনেছি। বছর খানেক আগে টেকনাফ থেকে এসে এখানে পি,এফ পাহাড় কিনে আছি। ঢংয়ে বুঝলাম রোয়াইঙ্গা। মুসলমান মালীকের কেন সেন নাম? লোকটি ফিসারীর কোনায় একমাত্র দোকানটি ইশারা দিয়ে কইতে রয় “সেনের ছেলের দোকান উনি জানবে”।
আমি দোকানে পাশে পাঞ্জেখানায় জোহর নামাজের পর দোকানে বসতেই দেখলাম ছোলা ভাজতে তৈরি হচ্ছে হচ্ছে সব রেডি। ভাবলাম অসময়ে কেন ছোলা?
আমি ভাব জমিয়ে গেলাম বসে থাকা আবুল বিড়ির এস.আর মোহাম্মদ আলি তাগাদা দেয় তাড়াতাড়ি স্যারকে ছোলা দাও।
ছোলা চুলায় দিচ্ছে দিচ্ছে.. আরম্ভ করি এইটা ”সেন অর ফিসারিঘাট ” নাম হবার কি কারণ? পাশের বৃদ্ধটি সওদাগরকে দেখিয়ে কয় উনার বাবা।
সেন উপাধি মুসলমানের হইল কেমনে? দোকানী কয় বাবার নাম নজির আহমদ।এলাকায় বাংলা নজির নামেই বেশ নামডাক। বাংলা নজিরের বাড়ি যাব বললে আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দিবে।
মুক্তিযোদ্ধা ছিল। এই এলাকায় আড়াইশত মানুষ উনাকে মানত শ্রদ্ধা করত। দেশ স্বাধীন হবে কি না এলাকাবাসীর সন্দেহ করত। বাবা আশা হারাত না সবাইকে অভয় দিত জয়ের।শুনেছি মুক্তিযুদ্ধে বাবা কোন সেনাপতির বডিগার্ড ছিল। সেই থেকে এলাকায় অনেকে উনার নাম ফুটিয়ে দেন সেন। এটি আবার অনেকটা উপহাসও করত।দেশতো স্বাধীন হবার নয় তারপরও তাদের মতে বেগার কাজের উপহার বনেছিল এই ‘সেন’ উপাধি।
বাংলা নজির কেন? দেশ স্বাধীন হলে যারা সেন বলে উপহাস করত তারাই আবার বাংলাদেশের “বাংলা ” বাবার নামের সাথে জুড়িয়ে দেয়, চিনতে রয় ” বাংলা নজির”।
লেখকঃ- আলমগীর মাহমুদ
বিভাগীয় প্রধান -(সমাজবিজ্ঞান বিভাগ)
উখিয়া কলেজ, কক্সবাজার।
ইমেইল – alamgir83cox@gmail.com
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-