আবদুর রাজ্জাক,কক্সবাজার :
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজারের সবচেয়ে গুরুত্ববহ আসনে পরিণত হয়েছে কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসন।
মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে চলছে হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কার্যক্রম। গড়ে উঠছে কয়লা ভিত্তিক একাধিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। স্থাপনের পথে রয়েছে এলএমজি টার্মিনাল। গড়ে উঠবে সোনাদিয়ায় এক্সক্লোসিভ ট্যুরিস্ট জোন। হতে পারে গভীর সমুদ্রবন্দরও।
এসব কারণে দু’দ্বীপ উপজেলা নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-২ আসনটি গুরুত্বপূর্ণ আসন। উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে সামনে রেখে মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনে মাঠে চষে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। জনগণের মন জয়ে তারা ব্যস্ত সময় পার করছে। পিছিয়ে নেই দলীয় টিকিটের লবিংও। গত কয়েক মাস ধরে দলীয় টিকিট কে পাচ্ছে তা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চলছে ‘চুলচেরা’ বিশ্লেষণ।
২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা হামিদুর রহমান আযাদ। এলাকায় তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। দল নিবন্ধন হারানোর কারণে দলীয় টিকিটে নির্বাচন করার সুযোগ না পেলেও ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী হিসেবে তিনি আগামী নির্বাচনে লড়তে পারেন বলে দাবি করছে তাঁর সমর্থকরা।
এছাড়া বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে হামিদুর রহমান আযাদই জোটের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।এ ছাড়া বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন ধানের শীষ টিকিটে দুই বার নির্বাচিত সাবেক এমপি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ।
জেলা রাজনীতির গ্রুপিংয়ের কারণে তিনি অনেকটা কোণঠাসা থাকলেও মহেশখালীর রাজনীতিতে তার শক্ত অবস্থান রয়েছে। তিনি সাধারণ মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়ও।
এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মধ্যে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন,বর্তমান আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, প্রফেসর ড. আনছারুল করিম, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা ওসমান গণি। এর মধ্যে অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা ও ড. আনছারুল করিম অতীতে দলীয় টিকেট পেয়েও নির্বাচনে জয়ী হতে পারেননি।
তবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সিরাজুল মোস্তফা দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। সব দিক বিবেচনায় অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফার অবস্থা এখন অনেকটা সুসংহত। আশেক উল্লাহ রফিক ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন।
তরুণ এমপি হিসেবে ইতিমধ্যে মহেশখালী-কুতুবদিয়ার মানুষের অন্তরে ঠাঁই করে নিয়েছেন। জনপ্রিয়তা এবং মনোনয়ন দৌড়ে তিনি অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন বলে জানান দলীয় নেতাকর্মিরা। অপরদিকে শহীদ পরিবারের সন্তান উপজেলা চেয়ারম্যান হোছাইন মোহাম্মদ ইব্রাহিমের জামাতা সাবেক ছাত্রনেতা ওসমান গনি দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ইতিমধ্যে তিনি এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন। সাবেক ছাত্রনেতা হিসেবে এলাকায় তার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এবারের নির্বাচনে তাকে যদি আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয় তাহলে আওয়ামীলীগের বিজয় সু-নিশ্চত বলে মনে করেন মহেশখালী- কুতুবদিয়ার তৃণমূল পর্যায়ের দলীয় নেতা কর্মিরা।
জাতীয় পার্টি থেকে জনসংযোগ শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ। বিভিন্ন উৎসব,সভা-সমাবেশ ও দুর্যোগে এলাকায় তাঁর সরব উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। তবে পিছিয়ে নেই কেন্দ্রীয় কমিটির আরেক প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক জেলা কমিটির সভাপতি আলহাজ কবির আহমদও। দুঃসময়ে জাতীয় পার্টির হাল ধরেছিলেন এই নেতা। পার্টির চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠজন হিসাবে পরিচিত এ নেতাই দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
মহেশখালী-কুতুবদিয়া তৃণমুল নেতাকর্মি ও সচেতন মহলের অভিমত , মহেশখালী-কুতুবদিয়া এখন আগের মতো নেই। দেশের সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে এখানে। এ কারণে অন্যান্য আসনের চেয়ে এই আসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
তাই প্রতিটি রাজনৈতিক দলের উচিৎ প্রার্থীদের যশ খ্যাতির বিচার বিশ্লেষণ না করে যদি মাঠ পর্যায়ে প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা যাচাই বাচাই ও বিচার বিশ্লেষণ করে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়া হউক।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-