উখিয়ায় সুপারির বাম্পার ফলন, দামও ভালো

নিজস্ব প্রতিবেদক – উখিয়া উপজেলায় চলতি মৌসুমে সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ ও কোন প্রকার প্রাকৃতিক দূর্যোগ হানা না দেওয়ার কারণে ফলনে ভরপুর সুপারির বাগানগুলো।

বাজারে সুপারির দামও আশাতীত ভাল হওয়ায় কৃষকেরাও খুশি। ব্যবসায়ীরা বলছে সোনারপাড়া, উখিয়া সদর, মরিচ্যা বাজার, কোর্টবাজার ও পালংখালী থেকে ২০ কোটি টাকার সুপারি দেশের বিভিন্ন আড়তে চালান হতে পারে। পরিবহন খরচ বৃদ্ধির কারণে ব্যবসায়ীরা লাভবান না হলেও সুপারি বাগান মালিকেরা তাদের উৎপাদিত অর্থকারী ফসল সুপারি বাজারজাত করণের মাধ্যমে অনেক অস্বচ্ছল পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আসতে পারে বলে সুপারি ব্যবসায়ীদের অভিমত।

গতকাল রোববার এ উপজেলার পান-সুপারি উৎপাদনের অন্যতম ইউনিয়ন জালিয়াপালংয়ে সোনারপাড়া বাজার ঘুরে সুপারি ব্যবসায়ীদের কথা বলে জানা গেছে, প্রতি রোববার ও বুধবার সোনারপাড়া বাজার বসে।এ বাজারে অর্থকরী ফসলের মধ্যে পান-সুপারি লেনদেন অন্যতম।

ইনানীর পাইকারী সুপারি ব্যবসায়ী হামিদুর রহমানের সাথে কথা বলে জানা যায়, ৮০টির একপন সুপারি বেচা কেনা হচ্ছে সাড়ে ৩শ টাকা দরে। সে আরো জানায়, প্রতি হাটের দিন এ বাজার থেকে প্রায় ২০ টন ওজনের ৭/৮ ট্রাক সুপারি দেশের বিভিন্ন আড়তে চালান হয়।

চলতি মৌসুমে সুপারির দাম বেড়েছে দাবী করে ওই ব্যবসায়ী জানান, উখিয়া-টেকনাফে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। তাদের অতিরিক্ত চাহিদার চাপে সুপারির দাম গত বছরের তুলনায় পন প্রতি প্রায় ৭০/৮০ টাকা বেড়েছে।

ইনানী গ্রামের চাষি নাজির হোসেন (৫৫) বলেন, এক কানি (৪০ শতক) জমিতে সৃজিত ৪৫৮টি গাছে সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতিটি গাছে সুপারি ধরেছে ৪০০ থেকে ৫০০টি। এবার সুপারির বাজারমূল্য বেশি থাকায় এই বাগান থেকেই প্রায় পাঁচ লাখ টাকার সুপারি বিক্রির মাধ্যমে আয় করা সম্ভব বলে তার ধারণা।

সে আরো জানায়, সুপারির বাজার দর বৃদ্ধি পাওয়ায় সুপারি চোরের উপদ্রব বেড়েছে আশংকা জনক। তাই বাগান পাহারায় রাখা হয়েছে ২ জন করে পাহারাদার। পাহারাদারের বেতন ভাতা হিসাবে প্রতিমাসে অতিরিক্ত ২০ হাজার টাকা ব্যয় হওয়ার পরেও কৃষকেরা সুপারি বিক্রির মাধ্যমে লাভবান হবে। এবিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। একই গ্রামের চাষি আবদুল মান্নান (৬০) বলেন, ‘গত বছর প্রতিটি কাঁচা সুপারি বিক্রি করেছি দুই টাকায়। এখন বিক্রি করছি প্রায় চার টাকায়। মৌসুমের নতুন সুপারি, তাই দামও বেশি পাওয়া যাচ্ছে।’

সুপারি ব্যবসায়ী সালামত উল্লাহ (৫৫) জানায়, রোববার উখিয়ার সোনারপাড়াসহ সাতটি বাজারে অন্তত ৪/৫ কোটি টাকার সুপারি লেনদেন হয়েছে।

সে জানায়, জালিয়াপালং ইউনিয়নের প্রতিটি বসতবাড়িতে বাণিজ্যিক ভাবে সুপারি বাগান হয়ে থাকে। সুপারি বিক্রি করে লাভবান হওয়ার কারণে দিন দিন বাগানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে সুপারির উৎপাদনও বেড়ে গেছে আশাতীত ভাবে। তাই চলতি মৌসুমে কমপক্ষে উখিয়া উপজেলা থেকে ২০ কোটি টাকার সুপারির ব্যবসা করে পাইকারী, খুচরা ও বাগান মালিকেরা লাভবান হবে।

পাশাপাশি এসব সুপারি যেসব স্থানে চালান হচ্ছে তারাও আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, সোনারপাড়া সুপারি সরবরাহ নেওয়ার জন্য ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, যশোর, খুলনা, রংপুর, রাজশাহী, সিলেট, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আড়ৎদার সুপারি ব্যবসায়ীরা সোনারপাড়া বাজারে আসে।

তারা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে সুপারি লেনদেনে চুক্তি করে আগাম টাকা দিয়ে যায়। সে অনুপাতে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত আড়ৎদারের সুপারির চালান পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এখানকার সুপারি আকারে বড় হওয়ায় এবং সুপারিতে কোন রোগবালাই না থাকার কারণে সুপারির কদর ও চাহিদা প্রচুর বলে মন্তব্য করে স্থানীয় চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী বলেন, এই্ ইউনিয়নের ৯৫ শতাংশ পরিবার পান সুপারি উৎপাদনের মাধ্যমে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ শরিফুল ইসলামের কাছে উখিয়া উপজেলা অর্থকরী ফসল পান-সুপারি উৎপাদনের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, পানের চাইতে উখিয়ায় সুপারি উৎপাদন হয় উল্লেখযোগ্য হারে।

তিনি বলেন, উখিয়ার বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিক ভাবে প্রায় ৪শ হেক্টর ও পারিবারিক ভাবে ৩শ হেক্টর সুপারি বাগান রয়েছে। এছাড়াও পরিত্যক্ত ভূমিতে লাগানো সুপারি গাছে উৎপাদিত সুপারি বাজারজাত করণের মাধ্যমে এলাকার নি¤œ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির পরিবার গুলোর স্বচ্ছলতার মুখ দেখছে।

আরও খবর