নিজস্ব প্রতিবেদক :
দক্ষিন চট্রলার বৃহৎ ঈদগাঁও বাজার যাহা কোটি টাকার উপরেই সরকারি ভাবে ইজারা দেওয়া হয়। উল্লেখ্য শুধু পশুর হাটটি থেকে প্রতিবছর ইজারাদাররা আয় করেন ৭০লক্ষ টাকার উর্ধ্বে। সারা বছর পশুর হাট থেকে আয় কম হলেও শুধু কোরবান মৌসুমেই আয় করেন ৫০-৬০লক্ষ টাকা। জেলা জুড়েই বৃহত্তর ঈদগাঁওর পশুর হাটটির সুনাম রয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে জেলার বিভিন্ন লোকজন বৃহত্তর ঈদগাঁওর পশুর হাট থেকে তাদের পছন্দের পশুটি কিনতে আসে।
সদরের বৃহত্তম পশুর হাট ঈদগাঁও বাজারে রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার তৎপরতা শুরু করেছে ভুমি অফিসের সহকারী ও উপ-সহকারী জেসমিন আক্তার,খালেদা বেগম ও খাস প্রতিনিধি রমজানের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ চক্র। কোন রকম ইজারা ব্যতিরেখে খাস কালেকশনের নামে চলছে হরিলুট।
এতে সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব। জানা যায়, পূর্বের ইজারাদার রাশেদুল হক চৌধুরী রিয়াদের দায়েরকৃত মহা-মান্য হাইকোর্টের একটি রিটের প্রেক্ষিতে ঈদগাঁও বাজারটি সরকারি ভাবে ইজারা দেওয়ার আইনী জটিলতায় পড়ে। যার ফলে ইজারা বন্ধ রেখে খাস কালেকশন শুরু ঈদগাঁও ভুমি অফিস। পরবর্তীতে সরকারী ভাবে ইজারা দেওয়ার কথা বললে পূর্বের ইজারাদার রিয়াদ মহামান্য হাইকোট থেকে রিটের আবেদনটি প্রত্যাহার করে নেন। তখন সরকারি ভাবে ইজারা দেওয়ার আর কোন বাধাই ছিলনা। ভুমি অফিসের খাস প্রতিনিধি বিগত দু’সন পূর্বের ইজারাদার স্বচতুর রমজান সুকৌশলে খাস হিসেবে বাজারটি তার আয়ত্বে রাখার জন্য অন্য একজনকে দিয়ে হাইকোটে ফেরীর কথা বলা আরেকটি রিট আবেদন করে। রমজান যাকে দিয়ে হাইকোটে রিট আবেদনটি করিয়েছে তার রিট করার কোন এখতিয়ার আছে বলে মনে হয় না। ঐ রিটের প্রেক্ষিতে আবারো আইনী জটিলতায় পড়ে ঈদগাঁও বাজারের ইজারা।
উল্লেখ্য, কক্সবাজার সদর উপজেলার অধীন সমস্ত বাজার ইজারা দেওয়া হলেও কি অজানা কারণে বা উদ্দেশ্যে বৃহত্তর ঈদগাঁও বাজারটি বার বার সংঘবদ্ধ চক্রের কবলে পড়ছে তা জানতে চাই ঈদগাঁওর সচেতন মহল। এতে খাস প্রতিনিধি রমজানের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ চক্র আর্থিক ভাবে লাভবান হলেও সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। সূত্রমতে, রমজান সিন্ডিকেটের করা হাইকোটের আবেদনটি শুনানী ছিল গত ১৮/০৮/২০১৮ইং। মহামান্য আদালত আবেদনটি খারিজ করে দেন বলে জানা যায়। এতে বাজারটি নিয়মিত ইজারা দিতে আইনী জটিলতা আছে বলে মনে হয় না।
সরেজমিনে তদন্ত করে দেখা যায়, বৃহত্তর ঈদগাঁও বাজারের মাছ বাজার,বাঁশঘাটা গাছ বাজার, ছাগলের বাজার,মুরগি বাজার,পাইপ বাজারখ্যাত গাছ বাজার,লাকড়ি বাজার,দৈনিক তরকারী বাজার,লাইডুলা বাজার ইত্যাদির প্রতিনিধি থেকে রমজানুল আলম খাস প্রতিনিধির নাম করে কিভাবে এক বছরের জন্য বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা আদায় করে? ছাগল বাজারের ইজারা দেওয়া হয় মোহাম্মদ আলমকে ১১মাসের জন্য ১০ লক্ষ টাকায় তার কাছ থেকে অগ্রীম ৭লক্ষ টাকা নেওয়া হয়।
খাস প্রতিনিধি রমজান বিনা রশিদে কিভাবে সমস্ত বাজার থেকে ১১ মাসের জন্য অগ্রীম টাকা আদায় করে।
অভিযোগ উঠেছে কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও ইউনিয়ন ভুমি সহকারী ও উপ-সহকারী কর্মকর্তা জেসমিন-খালেদার নেতৃত্বে স্থানীয় প্রাক্তন ইজারাদার, ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতৃবৃন্দের সক্রিয় অপতৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
ঈদগাঁও পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি পশুর (গরু,মহিষ) ক্রেতা, বিক্রেতার কাছ থেকে বে-আইনী ভাবে আদায় করা হচ্ছে ১হাজার ৫শত টাকা।
প্রতিটি পশুর ক্রেতার কাছ থেকে ৫শ’ বিক্রেতার কাছ থেকে ১হাজার টাকা। ক্রেতা-বিক্রেতাকে লোক দেখানো একটি রশিদ দেয়া হলেও ওই রশিদে টোল আদায়ের টাকা উল্লেখ নেই। এতে করে সরকারের বিপুল রাজস্ব হারানোর আশংকা দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে সচেতন মহল অনেকেই প্রতিবাদ করেন। পশুর হাটে বিনা রশিদে খাস কালেকশনের নামে রমজান নিজে দাড়িয়ে থেকে ক্রেতা বিক্রেতার কাছ থেকে ১৫০০টাকা আদায় কালে যুবলীগ নেতা মিজানুল হকের দৃষ্টিগোচর হয়। এতে সচেতন ঐ যুবনেতা রমজানের কাছ থেকে রশিদ বিহীন কেন টাকা নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে মিজানকে এক পাশে নিয়ে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করলে এতে মিজান ক্ষিপ্ত হয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবে বলে জানান।
জানা যায়, প্রতি বছর ঈদগাঁও বাজার ইজারা বাবৎ ১কোটি ২০লাখ টাকা সরকারী কোষাগারে জমা হলেও চলতি সনে আইনি জটিলতার কারণে ইজারা স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে ঐ সুযোগে স্থানীয় ভূমি অফিসের নেতৃত্বে গড়ে উঠে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। হাট-বাজার ইজারা নীতিমালা অনুযায়ী পশুর হাটে দৃশ্যমান স্থানে টোল আদায়ের তালিকা টাংঙ্গানো,পশু চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কার্যত তার কোনটাই দেখা যায়নি। হাট-বাজার নীতিমালা অনুযায়ী ইজারাহীন অবস্থায় আপদকালীন সময়ের জন্য নির্দিষ্ট কমিটির মাধ্যমে খাস কালেকশনের বিধি থাকলেও বাস্তবে কোন আইনী জটিলতা না থাকা স্বত্বেও বছর জুড়ে ইজারা না দিয়ে খাস কালেকশন করা হচ্ছে। এ ভাবে খাস কালেকশন করা সম্পূর্ণ ভাবে বে-আইনী ও হাটবাজার ইজারা বর্হিভুত।
তথ্য মতে জানা যায়, বিগত ১০-১২দিন পূর্বে ঈদগাঁওবাসীর পক্ষে বাজার নিয়মিত ইজারা দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর একটি আবেদন করেন। মাননীয় জেলা প্রশাসক তাৎক্ষনিক সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে ইজারার ব্যাপারে তড়িৎ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেন। যাহা অদ্যবধি কার্যকর হয়নি।
সূত্র মতে, প্রতিবছর কোরবানীর মৌসুমে শুধু ঈদগাঁও পশুর হাট থেকে ইজারাদাররা টোল আদায় করে থাকে ৬০লাখ টাকার উর্ধ্বে। সে ক্ষেত্রে নামে মাত্র টোল আদায় দেখিয়ে শুধু পশুর হাট থেকে আনুমানিক ৬০লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ঐ সংঘবদ্ধ চক্রটি। ঈদগাঁও পশুর হাট থেকে গরু কিনে ফেরার পথে মোহাম্মদ আলী জানান, তিনি গরু কিনেছেন ৫১হাজার টাকায়। তার কাছ থেকে টোল আদায় করা হয়েছে ৫শত টাকা। তার অভিযোগ ৫শত টাকা টোল দিলেও তাকে কোন প্রকার রশিদ দেয়া হয়নি।
আরেক মহিষ বিক্রেতা জসিম উদ্দিন জানান, ৮২হাজার টাকায় তিনি একটি মহিষ বিক্রি করলে তার কাছ থেকে বিনা রশিদে আদায় করা হয় ২হাজার টাকা। তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, ঈদগাঁও পশুর হাট ইজারা না হওয়া সত্বেও কি ভাবে এ টাকা আদায় করা হচ্ছে। খাস কালেকশনের নামে এত বেশি টাকা আদায়ের অধিকার স্থানীয় ভুমি প্রশাসনের নেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, ৯০হাজার টাকার গরু মহিষ ক্রয় বিক্রয়ে ক্রেতা বিক্রেতার কাছ থেকে ১৫০০টাকা আবার ৩৫হাজার টাকা দামের গরু মহিষের কাছ থেকেও ১৫০০টাকা বিনা রশিদে খাস প্রতিনিধি রমজানুল আলম ও তার লোকজন আদায় করছে। যাহা সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভুত। মুলত অসাধু, দূর্নীতিবাজ ভুমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা জেসমিন-খালেদা ও রমজানের নেতৃত্বে সক্রিয় সংঘবদ্ধ চক্রটি খাস কালেকশনের নামে সাধারণ মানুষের গলায় ছুরি বসিয়ে লুটপাট করছে।
বাজারে গরু কিনতে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ক্রেতা প্রশ্ন তুলেন, দীর্ঘদিন ধরে ঈদগাঁও বাজার ইজারা স্থগিত থাকলেও গাড়ী ব্যবসায়ী রমজান কোম্পানী নামে জনৈক ব্যক্তি কিভাবে খাস কালেকশনের প্রতিনিধি হতে পারে? অবৈধ টোল আদায়ের বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভুমি) নাজিম উদ্দিনের কাছ থেকে ইজারা বিহীন পশু হাট থেকে ক্রয় বিক্রয়ের উপর শতকরা কত ভাগ খাস কালেকশন করার বিধান রয়েছে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকলেও এটি সহকারী কমিশনার (ভুমি) কার্যালয়ের অধিভুক্ত নয়।
এটি স্থানীয় তহশীলদারের নেতৃত্বে টোল আদায়কৃত টাকা উপজেলা ভুমি অফিসে জমা দেয়া হয়। সচেতন মহল দাবী করেন, খাস কালেকশনের নামে বিনা রশিদে আদায়কৃত টাকা পরিমাণ কত? বা কি ভাবে কোথায় জমা হয়! সরকারি তহবিলে যথাযথ আদায়কৃত টাকা গুলি রাজস্ব ফান্ডে জমা হচ্ছে কিনা তা রহস্য থেকে যায়।
বিনা রশিদে খাস কালেকশনের বিষয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় তহশীলদারকে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য তিনি নিদের্শ প্রদান করবেন। নীতিমালা অনুযায়ী হাট বাজারের খাস আদায় কমিটিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত একজন সদস্য, সংশ্লিষ্ট হাটের নিকটবর্তী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সমন্বয়ে একটি খাস আদায় কমিটি করার বিধি থাকলেও এ ক্ষেত্রে তার কোনটাই মানা হয়নি। পশুর হাটে গরু,মহিষ,ছাগল বিক্রির উপর সুনির্দিষ্ট হারে খাস কালেকশন করার বিধি থাকলেও বাস্তবে আদায় করা হচ্ছে চার গুণ টাকা। যাহা খাস কালেকশন বিধির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
খাস প্রতিনিধি রমজানুল আলমের কাছে মুঠোফোনে রশিদ বিহীন প্রতি গরু মহিষ থেকে ১৫০০টাকা করে ক্রয়-বিক্রয়ের লক্ষ লক্ষ আদায়কৃত টাকা কি পরিমাণ সরকারী ফান্ডে কোথায় কিভাবে জমা হচ্ছে ও অগ্রীম ১১মাসের জন্য সাফ বাজারের অগ্রীম টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জানান, রশিদ বিহীন টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও এ ব্যাপারে উপজেলা কমিশনার (ভুমি) ও স্থানীয় ঈদগাঁও ভুমি অফিস কর্তৃপক্ষের কথা বলে এড়িয়ে যায়। জানা যায়,খাস কালেকশনে তিনস্থর বিশিষ্ট গোপন আতাতের সংঘবদ্ধ যোগসূত্র রয়েছে। যাতে ভুমি অফিসের কর্মকর্তা স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতা, বিভিন্ন সময়ের বাজার ইজারাদারসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র সক্রিয় আছে। ওই চক্রের অপতৎপরতায় সরকার হারাতে বসেছে কোটি টাকার রাজস্ব।
গেল দু’সন আগের ইজারাদার আবদুর রাজ্জাকের মতে,পশুর হাট থেকে ক্রেতা-বিক্রেতার কাছ থেকে রশিদ বিহীন আদায়কৃত সমুদয় টাকা যথাযথভাবে সরকারী কোষাগারে জমাদানে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হউক।
তিনি আরো জানান,বৃহত্তর ঈদগাঁও বাজার কোটি টাকার উপরে ইজারা হলেও মুল টাকার অর্ধেকের ও বেশি আয় হয় কোরবানী মৌসুমের গরু বাজার থেকে, তিনি আরো জানান,বৃহত্তর ঈদগাঁও বাজারের পশুর হাটটি জেলাজুড়ে জনপ্রিয়তা থাকায় গরু ব্যবসায়ীরাই মুলত বাজারটি নিয়ে থাকেন। কোরবান মৌসুমে খাস কালেকশনের নামে রশিদ বিহীন আদায়কৃত কি পরিমাণ টাকা সরকারি রাজস্ব ফান্ডে জমা হচ্ছে তা খতিয়ে দেখতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের মতে, স্থানীয় চেয়ারম্যান হিসেবে খাস কালেকশন কমিটিতে চেয়ারম্যান. ইউনিয়নের ঐ ওয়ার্ডের মেম্বার ও সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার থাকার কথা। এ বিষয়ে আমাদেরকে কিছুই জানানো হয়নি। রশিদ বিহীন খাস কালেকশনের নামে টাকা আদায়ের বিষয়ে তিনি উর্ধ্বতন কর্তপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
বৃহত্তর ঈদগাঁওর সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন সচেতন নাগরিক শক্তির প্রধান সমন্বয়ক কাফি আনোয়ারের মতে, অনিয়ম, দূর্নীতি ও অনৈতিক যোগসাজসের মাধ্যমে খাস কালেকশন করা হলে প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। বিনা রশিদে পশুর হাট থেকে দৈনিক লক্ষ লক্ষ টাকা টোল আদায় করা বন্ধ না হলে জন সচেতনার্থে মাইকিং করে বিনা রশিদে টোল না দেওয়ার জন্য জনসাধারণকে অবহিত করা হবে।
এ বিষয়ে মাননীয় জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এলাকার সচেতন লোক জন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-