রফিকুল ইসলাম :
রোহিঙ্গা ইস্যুর সুযোগ পুরোপুরি ভাগে নিচ্ছে স্থানীয় ভূমি দস্যু জবর দখলকারারী সিন্ডিকেট ও বনকর্মীরা। প্রতিদিন উখিয়ার কোথাও না কোথাও ঘটছে শত শত একর সরকারী বন ভূমির জবর দখল। জবর দখলকৃত বন ভূমির উপর প্রতিদিন নতুন ভাবে গড়ে উঠছে অসংখ্য পাকা, আধাপাকা ভবন।
অভিযোগ উঠেছে বনকর্মীরা এসব জবর দখল প্রতিরোধের পরিবর্তে অবৈধ সুবিধা নিয়ে আত্মরক্ষা মূলক অকেজো বন অইনে মামলা দিয়ে দখল পাকা পোক্ত করতে সাহায়তা দিয়ে আসছে বলে জানা গেছে।
কক্সবাজার দক্ষিন বন বিভাগের উখিয়া বন রেজের সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে রোহিঙ্গা নাগরিকদের আশ্রয় দেওয়ার কারণে।
উখিয়া বন রেঞ্জের উখিয়া সদর, উখিয়ার ঘাট রিজার্ভ ও থাইংখালী বন বিটের আওতাধীন সাড়ে ৫ হাজার একর বন ভূমি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় স্থলের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। প্রতিদিন আরও নতুন নতুন বন ভূমি রোহিঙ্গারা আশ্রয় শিবিরে জন্য দখলে নিচ্ছে।
উখিয়া উল্লেখিত তিনটি বন বিটের সরকারী বন ভূমির পাহাড়, টিলা ও সমতল ভূমির উপর প্রায় নয় লক্ষধিক রোহিঙ্গাদের জন্য গড়ে তোলা হয়ছে ১৬ টি আশ্রয় শিবির। সরকারীভাবে বরাদ্দের বাহিরে রোহিঙ্গারা দখল করেছে আরও অন্তত ৫শত একরের মত বন ভূমি। বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তু রোহিঙ্গা জ্বালানী খাটের সংস্থান হচ্ছে সংলগ্ন বিলুপ্ত প্রায় প্রকৃতিক ও সামাজিক বনায়ন।
ইতিমধ্যে অন্তত ১০ হাজার একর বন বাগানের গাছ পালা, শিকড় জ্বলানী কাঠ হিসাবে উজাড় হয়েছে বলে পরিবেশ বাদীদের দাবি। উখিয়া বন রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক তারিকুর রহমান রোহিঙ্গাদের কর্তৃক বনের বন ও বনজ সম্পদের ব্যপক ক্ষতির কথা স্বীকার করেন। এসব বনের অন্তত ৮০ ভাগ রক্ষিত ও ২০ ভাগ সংরক্ষিত বনাঞ্চল বলে জানা গেছে।
উখিয়া বন রেঞ্জের আওতাধীন ৭ টি বন বিট ও ১ টি বন টহল ফাঁড়ির মধ্যে ইতি র্পুবে হলিদিয়া পালাং, ওয়াল পালং, ভালুখিয়া পালং বন বিটের সংরক্ষিত ও রক্ষিত বনাঞ্চল ও বন ভূমি স্থানীয় প্রভাবশালী বন ও ভূমিদুস্যুদের জবর দখলের কারণে অস্থিত্ব সংকটে পড়েছে। উখিয়া সদর, উখিয়ার ঘাট রিজাভ ও থাইংখালী বন বিটের রক্ষিত ও সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও বন ভূমি বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় প্রভাবশালী জবর দখল কারীদের অবৈধ দখলের মহোৎসব চলছে।
বিশেষ করে উখিয়া সদর বন বিট কর্মকতা মোঃ আবছার এইসব জবর দখল কারীর সাথে অনৈতিক লেনেদেন করে বনভূমি জবর দখল ও বে আইনি স্থাপনা নির্মানের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রাজাপালং ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য বকতিয়ার আহমদ সহ অনেক লোকজন জানান, স্থানীয় প্রভাবশালীদের পাশাপাশি রোহিঙ্গা টাকা ওয়ালাদেরও বন ভূমি জবর দখল ও স্থাপনা, ঘরবাড়ি নির্মাণে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে তিনি।
এব্যাপারে উক্ত বন বিট কর্মকর্তা বন ভূমির দখল হস্তান্তর করে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের কথা অস্বীকার করে গতানুগতিক জনবল সংকটের কথা বলে এড়িয়ে যান।
উখিয়া সদর বন বিটের মধুর ছড়া, মোঃ আলীর ভিটা, টিএনটি, হাজামের রাস্তা, কুতুপালং বুড়ি ঘর, কুতুপালং বাজার, উখিয়া টিভি রিলে কেন্দ্র, উখিয়ার ঘাট রিজাভ বন বিটের তেলিপাড়া, জুমের ছড়া, পশ্চিম বালুখালী, বালুখালী পানবাজার, থাইংখালী বন বিটের বাঘঘোনা, থাইংখালী বাজার, রহমতের বিল, ধামনখালী, চোরাখোলা, তাজমিমার খোলা, হাকিমপাড়ায় অসংখ্য পাকা ঘরবাড়ি, মার্কেট সহ অবৈধ স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। এসব স্থাপনা নির্মাণ ও জবর দখল অব্যাহত থাকলেও সংশ্লিষ্ট বন কর্মকর্তারা যেন দেখেও না দেখার ভান ধরে অবৈধ সুবিধা নিয়ে থাকে বলে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের অভিযোগ।
উখিয়ার ঘাট রিজার্ভ বন বিট কর্মকর্তা মোবারক আলী বলেন, এ বন বিটের প্রায় ২ হাজার ৫শ একরের মধ্যে ২৩শ একরের মত রিজার্ভ বনায়ন রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের কারণে ধংস হয়েছে। অবশিষ্ট কিছু সংরক্ষিত বন ভূমি স্থানীয়দের জবর দখলে চলে গেছে। এসব জবর দখলকারীদের বিরুদ্ধে মান্দ্বতা আমলের অচল বন আইনে অজ্ঞাত ও নিরপরাধ লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে দায় ছাড়ছে।
তিনি বলেন, এ বিটে এখন আর কোন বন ভূমি অবশিষ্ট নেই। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই উখিয়ার বনাঞ্চল ও বন ভূমি নিঃশেষ হয়ে যাবে বলে স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-