ডেস্ক নিউজ – দেশজুড়ে মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর কক্সবাজারের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে মাদক পাচার কিছুটা কমেছিল। তবে সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সে অভিযান শিথিল হয়ে পড়ায় ফের এ জেলার টেকনাফসহ অন্য সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা ও অন্যান্য মাদকদ্রব্যের পাচার বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী বলছে, ইয়াবাসহ অন্য মাদকদ্রব্যের পাচার বাড়ায় তারা হার্ডলাইনে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের দেওয়া তথ্যমতে, গত জুলাই মাসে টেকনাফ বিজিবি ৬ কোটি টাকা ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ৩ কোটি টাকার ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্যের চালান জব্দ করেছে। এসময় আটক করা হয়েছে শতাধিক পাচারকারীকে।
বিজিবি ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্র জানায়, লোকবল সংকটের কারণে তারা মাদকের সব চালান জব্দ করতে পারে না। তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে নানা কৌশলে ইয়াবা ও অন্য মাদকদ্রব্যের চালান ঢুকছে কক্সবাজার দিয়ে। মাঝে কিছু দিন মাদক পাচার কিছুটা কমেছিল। তবে বর্তমানে আবার পাচার বেড়েছে। সেজন্য তারা হার্ডলাইনে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছে।
র্যাব সূত্র জানায়, জুলাই মাসে তারাও বেশ কিছু ইয়াবার চালান জব্দ করেছে। তবে টেকনাফ দিয়ে ইয়াবাসহ অন্য মাদকদ্রব্যের পাচাররোধে তাদের পাঁচটি নতুন ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একই সময়ে আলাদা আলাদাভাবে পুলিশ ও কোস্টগার্ডও বেশ কিছু বড় ইয়াবার চালান জব্দ করেছে।
ইয়াবাসহ মাদকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধ ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নড়েচড়ে বসেছিল। এরপর সারাদেশের মতো কক্সবাজারেও মাদকবিরোধী অভিযানে বেশ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী ধরা পড়ে; ৮ জনের মতো বন্দুকযুদ্ধে মারাও যায়। এসময় বেশিরভাগ শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মগোপনে চলে যায়। এতে সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা পাচার কমে আসে। কিন্তু সম্প্রতি মাদকবিরোধী অভিযান কিছুটা শিথিল হয়ে পড়ায় আত্মগোপনে থাকা ব্যবসায়ীরা এলাকায় ফিরেছে। তাদের নির্দেশ ও তত্ত্বাবধানে ফের টেকনাফসহ কক্সবাজারের অন্যান্য সীমান্ত দিয়ে দেশে মাদক প্রবেশের পরিমাণ বেড়েছে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সৌমেন মণ্ডল বলেন, ‘সীমান্ত ও সাগরপথে ইয়াবা পাচার কমেছে, এটা বলা যাবে না। কারণ, প্রতিদিনই বাংলাদেশে ঢুকছে ইয়াবার চালান। সম্প্রতি আমাদের জনবল সংকটের কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। পরে আরও ১০ জনকে টেকনাফ অফিসে নিয়োগ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে একটি গাড়িও দেওয়া হয়েছে। এখন ইয়াবা ও মাদকদ্রব্য পাচাররোধে শক্তভাবে নামতে হবে এবং সামাজিকভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সে চেষ্টাই চলছে। যে কোনও উপায়ে মাদক পাচার বন্ধ ও পাচারকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’
টেকনাফ ২নং বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আসাদুদ-জামান চৌধুরী বলেন, ‘সীমান্তে ইয়াবাসহ মাদকদ্রব্য ও চোরকারবারীদের ঠেকাতে বিজিবি সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরপরও নানাভাবে দেশে ঢুকছে ইয়াবা ও অন্যান্য মাদক। গত জুলাই মাসে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রবেশের সময় পাঁচ কোটি ৯১ লাখ টাকার ইয়াবা ও চোরাই পণ্য জব্দ করে টেকনাফ বিজিবির সদস্যরা। এসময় আটক করা হয় ৪৬ জন চোরকারবারীকে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে ১৬৪টি। এমনকি, গত ১ আগস্ট এককোটি ৪৯ লাখ ১৯ হাজার টাকার মূল্যের ইয়াবা চালান জব্দ করেছে বিজিবি। এসময় একটি মাইক্রোবাসসহ আটক করা হয় এক পাচারকারীকেও।
র্যাব-৭ কক্সবাজার ক্যাম্পের কোম্পানি অধিনায়ক মেজর মেহেদী হাসান বলেন, ‘ইয়াবাসহ মাদক পাচাররোধে নতুন করে আরও পাঁচটি ক্যাম্প বসানো হয়েছে। এতে ১৫ প্ল্যাটুন র্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ ও উখিয়াসহ জেলায় শুরু হয়েছে বিশেষ অভিযান। কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফ, আরকান সড়ক ও মেরিন ড্রাইভ সড়কে বসানো হয়েছে বিশেষ তল্লাশি চৌকি।’
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-