রোহিঙ্গারা জড়াচ্ছে অবৈধ নানা পেশায়ঃ বিপাকে স্থানীয়রা

পিএন২৪ : মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা ব্যবসা-বাণিজ্য ছাড়াও নানা বৈধ-অবৈধ পেশায় জড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে স্থানীয় অপরাধীদের সঙ্গে যোগসাজশে অস্ত্র ও মাদক পরিবহন, মানব পাচার, চুরি, ডাকাতি, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়সহ নানা কাজে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে।

তারা রিকশা-ভ্যান চালানো, শাকসবজি, তরকারি বিক্রি, মাছ, মুরগির দোকানসহ বিভিন্ন স্টেশনারি দোকান পরিচালনা করছে। তাদের অধিকাংশ পুরুষ সদস্যের হাতে মোবাইল ফোন। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের অনেকে অপরাধ নেটওয়ার্কে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল খায়ের বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জানান, নতুন রোহিঙ্গারা আসায় বিভিন্ন ক্যাম্প এলাকার আশপাশে চুরি-ডাকাতি বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, তারা যত পুরনো হবে তত অপরাধে সম্পৃক্ততা বাড়তে থাকবে।

পানের দোকান অসংখ্য : উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঢোকার মুখে চোখে পড়ে অনেকগুলো পান-সুপারির দোকান। আশ্রিত রোহিঙ্গারাই এসব পান-সুপারির ক্রেতা ও বিক্রেতা। যুবক থেকে বুড়ো, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই প্রচুর পান খায়। ক্যাম্পে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করা অসংখ্য রোহিঙ্গা যুবকের সঙ্গে দেখা যাদের সবারই দাঁত লাল হয়ে আছে নিয়মিত পান খাওয়ার ফলে।

স্থানীয়রা জানান, রোহিঙ্গাদের মাঝে পান খাওয়াটা অনেকটা আসক্তির পর্যায়ে রয়েছে।

হাতে হাতে মোবাইল : আশ্রিত রোহিঙ্গাদের হাতে হাতে মোবাইল ফোন। হাজার হাজার রোহিঙ্গার হাতে রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই পৌঁছে গেছে মোবাইল ফোনের সংযোগ। ছবি ও বৈধ পরিচয়পত্র ছাড়া রোহিঙ্গাদের কাছে এসব সিম বিক্রি করার কথা নয়। কিন্তু স্থানীয় অধিবাসী এবং পুরনো রোহিঙ্গা ক্যাম্পের স্বজনদের সহায়তায় রোহিঙ্গারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে। এসব মোবাইল ফোন ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের অনেকে মাদক চোরাচালানসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। বিভিন্ন অপরাধের নেটওয়ার্কেও ব্যবহূত হচ্ছে রোহিঙ্গাদের মোবাইল ফোনগুলো।

শতাধিক মসজিদ, রাতে ওয়াজ বন্ধ : রোহিঙ্গাদের মধ্যে ধর্মীয় তৎপরতা অনেক বেশি। নারীদের অধিকাংশই সর্বাঙ্গ ঢাকা বোরকা-হিজাব পরে চলাচল করেন। তারা ধর্মীয় নসিহত শুনতে পছন্দ করেন। এজন্য নিজেদের উদ্যোগে ২৪টি ক্যাম্প এলাকায় শতাধিক মসজিদ এবং অসংখ্য মক্তব-মাদ্রাসা গড়ে তুলেছেন। এসব মসজিদ-মাদ্রাসায় তারা নিয়মিত নামাজ পড়েন। বাচ্চাদের ধর্মীয় শিক্ষা দেন। নিজেরাই এসব মসজিদ-মাদ্রাসায় ইমাম, শিক্ষক মনোনীত করেছেন। রাতে এসব মসজিদ-মাদ্রাসায় ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হতো। কিন্তু ধর্মীয় উসকানি কিংবা জঙ্গিবাদ বিস্তারের আশঙ্কা থেকে ক্যাম্পের মসজিদগুলোতে রাতের বেলা ওয়াজ মাহফিল বন্ধ করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের তরফ থেকে বলা হয়েছে, ওয়াজ মাহফিল যা করার দিনের বেলা করতে হবে। রাতের অন্ধকারে ঘুমানো ছাড়া কোনো তৎপরতাই থাকবে না।

রোহিঙ্গা বাজার : কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাওয়ার রাস্তায় মুরগি বিক্রির দোকান দিয়েছেন মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত যুবক সৈয়দ নূর। রাখাইনেও তিনি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করতেন। স্থানীয় একজনের সহায়তায় কুতুপালং বাজার থেকে বাকিতে মুরগি এনে বিক্রি করেন রোহিঙ্গাদের কাছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সৈয়দ নূর জানান, বাকিতে চার হাজার টাকার মুরগি এনেছেন। প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ কেজি মুরগি বিক্রি হয়। শুধু সৈয়দ নূরই নন, তার মতো অনেক রোহিঙ্গা বিভিন্ন পণ্যের দোকান নিয়ে বসেছেন। কেউ মাছ বিক্রি করছেন, কেউ শাক, সবজি, তরকারির দোকান দিয়েছেন। কেউবা টংঘর বানিয়ে স্টেশনারি পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন। হিজাব পরা এক রোহিঙ্গা নারীকে দেখা গেল চুলা জ্বালিয়ে তেলের পিঠা বানিয়ে বিক্রি করছেন। রোহিঙ্গারা ক্যাম্প এলাকায় রীতিমতো বাজার বসিয়ে ফেলেছেন।    বর্তমানে রোহিঙ্গাদের ত্রাণের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শুধু নন ফুড আইটেম বিতরণের দায়িত্ব পালন করছে। সাধারণভাবে ছয়জনের একটি পরিবারের জন্য প্রতি ১৫ দিনের রাউন্ডে ৩০ কেজি চাল, ৯ কেজি ডাল, ৩ লিটার তেল, লবণ, চিনিসহ অন্যান্য আইটেম দেওয়া হয়। তবে এর বাইরেও মাছ, মাংস, শাক, সবজি, তরকারি তাদের কিনে খেতে হয়। বাইরে থেকে তারা এসব কেনেন। কুতুপালং ক্যাম্পে কথা হয় মিয়ানমারের মংডু থানার বড়ছড়া গ্রামের অধিবাসী বারেক মিয়ার সঙ্গে। মা-বাবা, ভাই-বোনসহ ১২ জনের জীবন নিয়ে পালিয়ে এসেছেন বাংলাদেশে।

তিনি বলেন, আমাদের মধ্যেও অনেক খারাপ লোক আছে। এখানে এসেও প্রতি রাতে অত্যাচারের শিকার হতে হয়েছে। চুরি, ডাকাতি, অপহরণসহ নানা অপরাধ হতো এখানে। মেয়ে-ছেলেরাও আতঙ্কে থাকত। এখন রাতে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সদস্যরা যদি নিরাপত্তা না দিতেন তাহলে এখানে থাকতে পারতাম না। এখন সব অত্যাচার বন্ধ হয়েছে। রাত জেগে রোহিঙ্গাদের পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আরও খবর