পিএন২৪ ডেস্ক : মরন নেশা ইয়াবার ভয়াবহ আগ্রাসন থামানো যাচ্ছে না কিছুতেই। কক্সবাজারের শুধু শহর নয় গ্রামাঞ্চলেও পাড়ায মহল্লাহ ব্যাপক ভাবে বিস্তার ঘটেছে ইয়াবার।এমনকি রাজধানী সহ সারা দেশেই প্রায় সময় আটক হচ্ছে বড় বড় ইয়াবার চালান।
যেদিকে দিকেই খোঁজ নেওয়া হয় দেখা যাবে হয় ইয়াবা ব্যবসায়ি না হয় পাচারকারী না হয় সেবনকারী। সম্প্রতি বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যাক রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ার পরে ইয়াবার ব্যাপকতা আরো বেড়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ঠরা।
সচেতন মহলের দাবী মিয়ানমার পরিকল্পিত ভাবে বাংলাদেশের যুব সমাজকে ধ্বংস করার জন্য বাংলাদেশ সিমান্তে ৪০টি ইয়াবার কারখানা গড়ে তুলেছে। অথচ তাদের নিজ দেশে এই মরন নেশার কোন বিস্তার নেই। আর টাকার লোভে আমাদের দেশের অনেক প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা এই ইয়াবা ছড়িয়ে দিচ্ছে সারা দেশে। ইয়াবার এই ভয়াবহ আগ্রাসন ঠেকাতে প্রশাসনও অনেকটা জবুথবু হয়ে পড়েছে। সচেতন মহলের দাবী সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে কঠিন সিন্ধান্ত নিয়ে এই ইয়াবার আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে।
উখিয়া টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যপাক মোহাম্মদ আলী বলেন,আমাদের জানা মতে প্রায় সময় বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়ও এসেছে মিয়ামনার সিমান্তে ৩৮ থেকে ৪০ টি ইয়াবার কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে,যেখানে প্রতিদিন কয়েক কোটি ইয়াবা তারা তৈরি করছে আর সে গুলোর এক মাত্র গ্রাহক বাংলাদেশ,মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এই ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত,আমাদের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ সহ সব জায়গায় এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করা দরকার মিয়ানমারের ইয়াবা কারখানা বন্ধ করার জন্য। এবং তাদের সাথে বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক করে দ্রুত ইয়াবা ভয়াবহতা বন্ধ করা না গেলে সামনে আমাদের জন্য কঠিন দিন অপেক্ষা করছে।
টেকনাফ উপজেলা সুজন সাধারণ সম্পাদক এবিএম আবুল হোসেন রাজু বলেন, প্রতিদিন টেকনাফ এবং নাইক্ষছড়ির দূর্গম সিমান্তের ৩৮ টি পয়েন্ট দিয়ে ঢুকছে এসব ইয়াবা।
মিয়ারমারের দীর্ঘ মিয়াদি পরিকল্পনা অংশ হিসাবে তারা চাইছে বাংলাদেশের যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাক, এতেই তাদের লাভ। আর আমাদের দেশের সিমান্ত দিয়ে যদিও কাটা তারের বেড়া দেওয়া হয়েছে বলা হচ্ছে সেটা বাস্তব সম্মত না এখনো অনেক অংশ খালী আছে। এর মধ্যে টেকনাফের সেন্টমার্টিন, স্থলবন্ধর, শাহপরীরদ্বীপ, মাঝিরপাড়া, জালিয়াপাড়া, ট্রানজিট ঘাট, নাইট্যংপাড়া, সাবরাং এর লেজি পাড়া,বার্মাপাড়া সব বেশ কয়েকটি পয়েন্ট দিয়েই ঢুকছে বেশি ইয়াবা। ইয়াবা বন্ধ করার জন্য সর্বপ্রথম কাজ হবে নৌপথে মিয়ানমারের কোন ট্রলার যাতে বাংলাদেশে আসতে না পারে আর বাংলাদেশের কোন ট্রলার যাতে মিয়ানমারে যেতে না পারে সেই ব্যবস্থা করা। তাছাড়া ৪/৫ লাখ ইয়াবা আটক হলেও মামলা হচ্ছে শুধু শ্রমিকদের বিরুদ্ধে আসল গডফাদারদের কিছুই করা হচ্ছে না এটা খুবই দুঃখজনক।
উখিয়া উপজেলার রত্না পালং ইউপি চেয়ারম্যান খায়রুল আলম চৌধুরী বলেন,বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা আসার পর থেকে ইয়াবা আসার সংখ্যাও অনেক বেড়েছে। সম্প্রতি যে ইয়াবার ভয়াবহতা বেড়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই, আর ইয়াবার ছোবল এখন পাড়া মহল্লায় মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু কক্সবাজার নয় সারা দেশে ইয়াবার ব্যাপক বিন্তার ছড়িয়ে পড়েছে। এটা খুব দ্রুত বন্ধ করতে হবে না হলে বাংলাদেশের যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে।
এদিকে কক্সবাজার শহরের এক ইয়াবা পাচারকারীর সাথে কথা বলে জানা গেছে ইয়াবা ট্যাবলেটের স্বাধ যে কাউকে আকৃষ্ট করতে পারে, এবং সেবনের পরে ধরা পড়ার আশংকা ও থাকে না, বাজারে ইয়াবা ব্রান্ডের মধ্যে
এসওওয়াই,এনওয়াই,এবং ডব্লিও্ওয়াই নামের ৩ টি ট্যাবলেট পাওয়া যায়।তবে রাজধানীতে এখন ৪ রকমের ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে এর মধ্যে গাঢ লাল রঙের চম্পা, প্রতিপিচ টেকনাফ থেকে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় কিনতে হয় আর ঢাকাতে বিক্রি হয় ২০০ থেকে ২৩০ টাকা, হালকা গোলাপি রঙের আর সেভেন ইয়াবার দাম সব চেয়ে বেশি এটি ঢাকাতে ৫০০ টাকার বেশি কিনতে হবে। এর মধ্যে আরেকটি আছে জেপি সেটি ৩৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই পাচারকারী বলেন,আমাদের কাছে শুধু ফোন আসে মাল নিতে, কার মাল কি হবে সেগুলো আমরা কিছু জানিনা।
এদিকে কক্সবাজার শহরের সব কটি পাড়ায় মহল্লায় ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে ইয়াবার আগ্রাসন,টেকপাড়া এলাকার হাজী মোঃ ইউচুপ বলেন,আমরা সারা জীবন ব্যাবসা বানিজ্য করে কোন জমিজমা কিনতে পারলাম না একটি দামী মোবাইল ব্যবহার করা আমাদের স্বপ্নছিল। কিন্তু বর্তমানে প্রতি ঘরে ঘরে ছেলেরা দামী মোটরসাইকেল দামী মোবাইল, গাড়ী বাড়ি সব কিছু করছে। খোঁজ নিলে জানা গেছে সব ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জিপি এড,মোহাম্মদ ইসহাক বলেন, অনেক সময় দেখি ৪ লাখ ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে কিন্তু মালিক নাই এটা কোন কথা ? আবার দেখা যাচ্ছে ৫ কোটি টাকার ইয়াবা নিয়ে পুলিশ মামলা দিয়ে দিনমজুর শ্রমিককে অপরাধী বাকী সব গায়েব। এভাবে ইয়াবা বন্ধ করা যাাবে না।
কক্সবাজারের মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সোমেন মন্ডল বলেন,শুধু যুব সমাজ নয় অনেক ছোট বয়সের ছেলেরা ইয়াবা সেবন, পাচারের সাথে জড়িত হয়ে পড়ছে। সব চেয়ে ভয়ংবর বিষয় হচ্ছে অনেক স্কুল কলেজেও ইয়াবা ঢুকে পড়ছে। আমাদের পক্ষ থেকে সব সময় সচেতনতা মূলক কর্মসূচী করে থাকি। এছাড়া অভিযানতো আছেই। তবে অভিবাবকদের সচেতনতা বেশি প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
কক্সবাজার র্যাব-৭ এর কোম্পানী কমান্ডার মেজর রুহুল আমীন বলেন গত ২ মাসে (৮ মার্চ) পর্যন্ত আমরা প্রায় ৬৩ লাখ পিচ ইয়াবা আটক করেছি আর এর সাথে সংশ্লিষ্ঠ ২৪ জনকে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন,এই মরন নেশা ইয়াবাকে চিরতরে নির্মুল করা না গেলে আমাদের পরবির্ত প্রজন্ম অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হবে যেটা কোন ভাবেই কাম্য নয়।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, এক সময় কক্সবাজারের যে সুনাম ছিল সেটা এখন ইয়াবার কারনে অনেকটা ম্লান হয়ে পড়েছে। এই বদনাম গুছাতে হবে। ইয়াবার আগ্রাসন থেকে বাচঁতে রাজনৈতিক, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি সহ সর্বস্তরের মানুষকে এক সাথে কাজ করতে হবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-