নিজস্ব প্রতিবেদক : উখিয়া ও টেকনাফের ২০টি রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে প্রতিদিন এক কোটি ষাট লাখ লিটার পানির প্রয়োজন। রোহিঙ্গাদের চাহিদার সমপরিমান পানি সরবরাহ করতে গিয়ে বিভিন্ন সেবা ও সাহায্য সংস্থাগুলোকে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের কারনে যত্রতত্র শত শত গভীর ও অগভীর নলকূপ স্থাপন করে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তলনের ফলে উখিয়ার সর্বত্র দিনের পর দিন পানি সংকট চরম আকার ধারন করছে। পানি সংকট মোকাবেলায় ভু-গর্ভস্থ পানির বিকল্প ভূ উপরিস্থ খাল, ছড়া, জলাশয়ের পানি ব্যবহারের উপর তেমন গুরুত্ব না দেয়ায় চলতি শুস্ক মৌসুমে পানি সংকট আরো ব্যাপক তীব্র হবে বলে আশংকা সংশ্লিষ্টদের।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্ব পানি দিবস উদযাপন উপলক্ষে সরকারের জন স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর উখিয়া রোহিঙ্গা শিবিরে দিবসটি বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালন করেছে। উখিয়া উপসহকারী প্রকৌশলী মোঃ ইকবাল হাসান জানিয়েছেন, বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কুতুপালং, লম্বাশিয়া ও মধুর ছড়া রোহিঙ্গা শিবিরে পানির সুষ্ঠু ব্যবহারের উপর রোহিঙ্গাদের নিয়ে আলোচনা সভা, র্যালী ও বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে ধারনা দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, উখিয়ার সর্বত্র প্রতিবছর এমনকি প্রতিদিন পানির সংকট তীব্র হচ্ছে। গত বছর উখিয়ার সর্বত্র গড়ে পানির স্তর ছিল ২৫-৩২ ফুট নিচে। অথচ এক বছরের ব্যাবধানে চলতি বছরের গত সপ্তাহের জরিপ অনুযায়ী বর্তমানে পানির স্তর গড়ে ৩০-৩৮ ফুট নেমে গেছে। গতবছর কুতুপালং এলাকায় পানির স্তর ছিল ৩২-৩৫ ফুট নিচে। অথচ গত সপ্তাহে জরিপ অনুযায়ী কুতুপালং সংলগ্ন রোহিঙ্গা শিবির এলাকায় বর্তমানে পানির স্তর ৪২-৫০ ফুট নিচে নেমে গেছে।
তিনি জানান, উখিয়া উপজেলায় স্থানীয় লোকালয়ে ২হাজার ৬৭৩টি অগভীর ও ৭১১টি গভীর নল কূপ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অগভীর ৭০ শতাংশ ও গভীল নল কূপের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশের বেশী নল কূপ ইতিমধ্যে অচল হয়ে গেছে। এছাড়াও উখিয়ায় চলতি বোরো চাষের অধিকাংশ ভূ-গর্ভস্থ পানি নির্ভরশীল। বর্তমানে উখিয়ার সর্বত্র বোরো চাষাবাদের পাশাপাশি স্থানীয় গ্রামীণ দরিদ্র জনগণের মাঝে চরম পানির সংকট বিরাজ করছে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নল কূপ থেকে পানি না আসায় ছাত্র-ছাত্রীরা বিশুদ্ধ সুপেয় পানি সংকটে পড়েছে। গ্রামের অসংখ্য লোকজনের মাঝে বিশুদ্ধ সুপেয় পানি সংগ্রহ করতে সীমাহীন কষ্টে পড়তে হচ্ছে।
এদিকে রোহিঙ্গা শিবির গুলোতে গতকাল বৃস্পতিবার পর্যন্ত আট হাজার ৫৩টি অগভীর নল কূপের মধ্যে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে রয়েছে ২ হাজার ১৯২টি। ৪০৩টি গভীল নল কূপের মধ্যে সরকারী নল কূপের সংখ্যা ২৫০টি। মোট অগভীর নল কূপের মধ্যে ৫০ শতাংশের মত নল কূপ অচল হয়ে পড়েছে বলে তিনি জানান। তাছাড়াও ১৮টি গভীর নলকূপ নানা সমস্যায় পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। যে গুলোর স্থাপন করেছে বিভিন্ন এনজিও অন্যদিকে বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জাতিসংঘ শরনার্থী বিষয়ক হাই কমিশন জানিয়েছে রোহিঙ্গা শিবির গুলোতে প্রতিদিন ১৬ মিলিয়ন লিটার বা ১ কোটি ৬০ লক্ষ পানির প্রয়োজন। রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে চাহিদার অনেক কম পানি সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে বলে জানা গেছে। জন স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে উখিয়া প্রকৌশলী ইকবাল হাসান বলেন, শুস্ক মৌসুমের কেবলই শুরু। সামনে আরো চরম সংকট অপেক্ষা করছে। জরুরী প্রয়োজনে পানি সংকট মেঠাতে সরকার উখিয়ায় ১২শ গভীর নল কূপ বরাদ্ধ দিয়েছে। তৎমধ্যে রোহিঙ্গা শিবিরের জন্য ৭২০টি ও স্থানীয় জনগনের জন্য ৪৮০টি বরাদ্দ রয়েছে। যেগুলো স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে। এছাড়াও জরুরী প্রয়োজনে পানি সমস্যা মেঠাতে ১১টি পানি বাহি গাড়ি ও ৩টি ওয়ার্টার প্লেন প্রস্তুত রয়েছে বলে তিনি জানান।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-