ইসলাম ডেস্ক : মানুষের চিরস্থায়ী বাসস্থান জান্নাত। মুমিন ব্যক্তি মাত্রেরই রয়েছে জান্নাতের বাসনা। পক্ষান্তরে এমন কোনো মানুষ পাওয়া যাবে না যে, স্বেচ্ছায় জাহান্নামে যেতে চায়। তারপরও মানুষ জান্নাতে যাওয়ার পাশাপাশি অগণিত অসংখ্য মানুষ জাহান্নামের দিকে ধাবিত হবে। এ ব্যাপারে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অসংখ্য হাদিস থেকে দু’টি তুলে ধরা হলো-
হজরত আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কাবার মালিকের শপথ করে বলছি, তারা অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত। আমি (আবু যর) আরজ করলাম, তারা কারা? তিনি বললেন, ‘সম্পদশালী লোকেরা। তবে তারা ব্যতিত যারা এভাবে-ওভাবে, সামনে-পেছনে এবং ডানে-বামে (বিরামহীনভাবে আল্লাহর জন্য) দান করতে থাকে। কিন্তু এমন লোকের সংখ্যা অনেক কম।’ (বুখারি ও মুসলিম।
আল্লাহ তাআলার জন্য এমন দানকারী লোকের সংখ্যা কম হলেও প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেমনিভাবে তাদের জন্য সর্বোত্তম সুসংবাদ; তেমনি এর ব্যতিক্রম ব্যক্তিদের জন্যও রয়েছে চরম হুশিয়ারি। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহ আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন, ‘দানশীলতা জান্নাতের একটি বৃক্ষের নাম (যার শাখাগুলো জান্নাতের বাইরে ঝুঁকে থাকে)।
অতএব যে ব্যক্তি জান্নাতের এ শাখাকে ধরে (তথা দান করে) ওই (বৃক্ষের) শাখা তাকে (দানকারীকে) জান্নাতের বাইরে থাকতে দেয় না (জান্নাতে টেনে নিয়ে যায়)।
আর কৃপণতা জাহান্নামের একটি বৃক্ষ (যার শাখাগুলোও জাহান্নামের বাইরে ঝুঁকে থাকে)। অতএব যে ব্যক্তি জাহান্নামের এ শাখাগুলোকে ধরে সে তাদের (কৃপণ ব্যক্তিদের) জাহান্নামের ভেতরে নিয়ে যায়।’ (বায়হাকি)
সুতরাং প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘোষণা থেকে বুঝা যায় শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভে তাঁর পথে দানকারী ব্যক্তিই দুনিয়া ও পরকালে সর্বোত্তম কল্যাণকামী। তবে লোক দেখানো দানে বা জাগতিক উদ্দেশ্য লাভে পরকালে কোনো কল্যাণ নেই।
দানের ক্ষেত্রে মনে রাখতে সর্বোত্তম ও গুণগত মান সম্পন্ন ভালো ও প্রিয় জিনিস দান করাই উত্তম। এ দানই মানুষকে দুনিয়ার যাবতীয় অকল্যাণ ও বিপদাপদ থেকে মুক্ত রেখে পরকালের চিরস্থায়ী জান্নাতের ফয়সালায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
পরিশেষে…
দানের ব্যাপারে আমলযোগ্য হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর একটি ছোট্ট ঘোষণাই চিন্তাশীল মানুষের জন্য যথেষ্ট। আর তাহলো-
‘দ্রুত দান-খয়রাত কর (দানে বিলম্ব করো না) কেননা বিপদাপদ (কখনো) দান-খয়রাতের দেয়াল টপকে তোমাদের কাছে আসতে পারে না।’ (তাফসিরে মাজহারি)
আর আল্লাহ পাক ঐসব ব্যক্তিদেরকে ক্ষমা ও কল্যাণের ঘোষণা দিয়েছেন, যাদেরকে শয়তান দানের ব্যাপারে ধোঁকা প্রদান করে। আল্লাহ বলেন-
‘শয়তান তোমাদেরকে অভাবের ভয় দেখায় এবং অন্যায় কাজের (জাকাত ত্যাগের) আদের্শ দেয়। আর আল্লাহ তোমাদেরকে (তাঁর পথে দানের কারণে) ক্ষমা এবং দানের অনুগ্রহের (রিজিকের বরকতের) প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছেন। আর আল্লাহ পাক (ক্ষমা এবং বরকতে) উদার এব মহাজ্ঞানী। (সুরা বাকারা : আয়াত ২৬৮)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জান্নাতে যাওয়ার এবং জাহান্নাম থেকে মুক্ত থাকার জন্য শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টিরে উদ্দেশ্যে তাঁর পথে দ্রুত দান করার তাওফিক দান করুন। লোক দেখানো বা জাগতিক উদ্দেশ্যে দান করা থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহ’র বিধি-বিধান যথাযথ পালনের তাওফিক দান করুন। আমিন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-