উখিয়া-টেকনাফের চালের কার্ড অন্য জেলায় হস্তান্তরের পায়তারা: ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী

ফারুক আহমদ :

রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ক্ষতিগ্রস্ত উখিয়া টেকনাফের হোস্ট কমিউনিটির জন্য বিশেষ বরাদ্দকৃত ৪০ হাজার ভানারেনল উইমেন বেনিফিট ( ভি ডব্লিউ বি) রেশন কার্ড কর্তন করে অন্যান্য জেলায় হস্তান্তরের খবর চাওর হলে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদে ফুসেফুসে উঠেছে এলাকাবাসী।

জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ও কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী উখিয়া টেকনাফের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য বিশেষ বরাদ্দকৃত ভি ডব্লিউ বি কর্মসূচি বহাল রাখার জন্য দাবি জানান। অন্যতায় সীমান্ত এলাকায় ৪০ হাজার পরিবারে খাদ্য সংকট দেখা দেবে।

এদিকে এ ধরনের অমানবিক ও হীন ষড়যন্ত্র অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য অন্তবর্তী কালীন সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ও সচেতন নাগরিক সমাজ। অন্যথায় উখিয়া টেকনাফ অচল সহ বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন তারা।

খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালে মিয়ানমারে বাস্তুচ্যুত হয়ে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা উখিয়া টেকনাফে আশ্রয় নেয়। প্রায় ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে মানবিক আশ্রয় দিতে গিয়ে স্থানীয় হাজার হাজার পরিবার চাষাবাদ সবজি ক্ষেত, হাস মুরগি গবাদি পশু পালন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। শুধু তাই নয় অসংখ্য পরিবার আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

দায়িত্বশীল সূত্রে প্রকাশ, স্থানীয়দের দাবির মুখে গত ২০২০ সালে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার সহযোগিতায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিশেষ কর্মসূচি আওতায় হোস্ট কমিউনিটি হিসেবে উখিয়া টেকনাফে ৪০ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ করে আসছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, উক্ত চলমান উখিয়া টেকনাফের ক্ষতিগ্রস্ত হোস্ট কমিউনিটির বিশেষ বরাদ্দকৃত ৪০ হাজার ভিডব্লিউবি রেশন কার্ড কর্তন করে অন্যান্য জেলায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে গত ১৭ মার্চ ২০২৫ সালে মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব এলিশ শরমিন স্বাক্ষরিত এক অফিস প্রজ্ঞাপনে একজন যুগ্ম সচিব কে প্রধান করে ১০ সদস্য বিশিষ্ট যাছাই বাছাই কমিটি গঠন করা হয়।

উক্ত তদন্ত কমিটি আজ (৮ এপ্রিল) মঙ্গলবার টেকনাফ ও কাল বুধবার উখিয়ায় সরজমিন পরিদর্শন করবেন।

এদিকে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ক্ষতিগ্রস্ত উখিয়া টেকনাফ হোস্ট কমিউনিটির জন্য বিশেষ ববরাদ্দ কৃত ভি ডব্লিউ বি রেশন কার্ড কর্তন করে অন্যান্য জেলায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া জানাজানি হলে পুরো এলাকা জুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। শত শত পরিবারের নেমে এসেছে অন্ধকার ভবিষ্যৎ।

জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ও কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী জানান, প্রায় ১২ লক্ষ রোহিঙ্গাকে মানবতার আশ্রয় দিতে গিয়ে উখিয়া টেকনাফের হাজার হাজার পরিবার মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হোস্ট কমিউনিটির জন্য বিশেষ বরাদ্দকৃত ভি ডব্লিউ বি কর্মসূচি আগের নিয়ম অনুযায়ী চালু রাখার জন্য অন্তবর্তী সরকারের নিকট দাবি জানিয়েছেন। অন্যতায় রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় খাদ্য সংকট দেখা দেবে। তখন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র – জনতা আন্দোলনের প্রতিনিধি ব্যারিস্টার ফারদিন জানান, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে স্থানীয়দের শ্রমবাজার হারাতে হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে নাফ নদীতে মাছ ধরা। নষ্ট হয়ে গেছে শত শত একর চাষাবাদের জমি । ক্ষতিগ্রস্ত হোস্ট কমিউনিটি জন্য বরাদ্দকৃত রেশন কার্ড কর্তন করে অন্যান্য জেলায় অন্তর্ভুক্ত করা হলে এটি মেনে নেওয়া হবে না। অচিরেই এর প্রতিবাদ জানিয়ে হাজার হাজার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সড়ক অবরোধ সহ বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মীর সাহেদুল ইসলাম রোমান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কমিউনিটির জন্য বরাদ্দকৃত ভি ডব্লিউ বি রেশন কার্ড কর্তন করে অন্যান্য জেলায় অন্তর্ভুক্ত করা হলে এটি হবে মারাত্মক ভুল। রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্থানীয়রা। সুতরাং এমন সিদ্ধান্ত নিলে তা কেউ মেনে নেবে না।

এদিকে সচেতন এলাকাবাসী ও উপকার ভোগী সদস্যরা উখিয়া টেকনাফ হোস্ট কমিউমিটির জন্য বিশেষ বরাদ্দকৃত কর্মসূচি চালু রাখার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানিয়েছেন।

আরও খবর