জুলাই বিপ্লবের পর ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি নবায়ন করা হয়েছে। এতে গুরুত্বপূর্ণ ১০টি পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের। এই তালিকা গত ২০ মার্চ অনুমোদন করেছেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মোজাদ্দেদ আলী বাবু। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর সমালোচনা ঝড় উঠেছে।
জানা গেছে, ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছেন বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি, কমিটিতে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ও ত্যাগী নেতাদের উপেক্ষা করে অর্থের বিনিময়ে গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন করা হয়েছে।
গত ২০ মার্চ দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মোজাদ্দেদ আলী বাবু স্বাক্ষরিত কমিটিতে খোরশেদ আলম জমিদারকে আহ্বায়ক ও সামিউল্লাহকে সদস্য সচিব করা হয়। ৩১ সদস্যের কমিটির সদস্য সচিবসহ ১০ জন আওয়ামী লীগ, যুবলী, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ সন্ত্রাসী। তাদের কয়েকজন এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও জুলাই বিপ্লবে হত্যা মামলার আসামি ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তেঘরিয়া ইউনিয়ন বিএনপি নেতাকর্মীরা বলেন, কমিটিতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রহত্যা মামলার একজন আসামিকেও রাখা হয়েছে উপদেষ্টা পদে । আরো আছে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। তেঘরিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিবন্ধী উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক গাজী জাহাঙ্গীরকে ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য করা হয়েছে।
তারা আরো জানান, গাজী জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের সক্রিয় নেতা ছিলেন। তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে নানা অপকর্ম করার অভিযোগ রয়েছে। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ আওয়ামী লীগ নেতা বিজয়শীলের ছেলে পলাশ শীলকে আহ্বায়ক কমিটির সদস্য করা হয়েছে। এ ছাড়া কামরুল মোল্লা দীর্ঘ ১৭ বছর আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী ও আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে লোকজন জোগান দিতেন। তাকেও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য করা হয়েছে। এতে স্থান পেয়েছেন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ইব্রাহিম কাদরীও।
কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক পদ পেয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা শরীফ মেম্বার, আউয়াল ভূঁইয়া ও কাশেম মেম্বার। নাম প্রকাশে ইচ্ছুক এক বিএনপি নেতা বলেন, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের পুনর্বাসন করা হয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা বেশি টাকা দিতে না পারায় কমিটিতে পদ পাননি। এ নিয়ে তৃণমূলের ক্ষোভ ক্রমেই বাড়ছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা বিএনপি সভাপতি অ্যাডভোকেট নিপুণ রায়ের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে কমিটিতে বিতর্কিতদের স্থান পাওয়ার কথা স্বীকার করে থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোজাদ্দেদ আলী বাবু বলেন, এ বিষয়ে তিনি অসহায় ছিলেন।
সুত্রঃ আমার দেশ অনলাইন
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-