নিজস্ব প্রতিবেদক:
সেন্টমার্টিন ও সোনাদিয়া দ্বীপের ইসিএ রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হলেও কক্সবাজারের পর্যটন জোন খ্যাত কলাতলীর সমুদ্রতীরবর্তী এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণ বন্ধের কঠোরতার লক্ষণ নেই। ফলে ইসিএ-তে স্থাপণা নির্মাণে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও তোয়াক্কা করছেন না লোভী ব্যবসায়ীরা। স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান (এসটিপি) বিহীন ভবন নির্মাণ হলেও তাদের পরিবেশ বিধংসী কাজে বাঁধা দেয়ার পরিবর্তে ‘নজরানা’ পেয়ে নিরব সহযোগীতা দেয়া হচ্ছে বলে প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে।
তথ্যমতে, সৈকত এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে ১৯৯৯ সালের ১৯ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে সরকার। এ গেজেট অনুযায়ী সৈকতের বেলাভূমির নির্দিষ্ট এলাকায় স্থাপনা নিষিদ্ধ। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) দায়ের করা রিটের সূত্র ধরে ইসিএ’তে স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। এরপরও প্রশাসনকে ম্যানেজ কিংবা ফাঁকি দিয়ে উঠছে দালান।
লাবণী পয়েন্ট হতে কলাতলী ও আশপাশের বেলাভূমি তীরে থেমে থেমে চলা অপরিকল্পিত স্থাপনা ও ভয়াবহ দূষণের ঝুঁকিতে পড়তে যাওয়া পর্যটন নগরীকে রক্ষায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে গত নভেম্বরে আবেদন দেয় ‘উই ক্যান কক্সবাজার’ নামে একটি পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন। তারা ইসিএ আইন ও এসটিপি বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের আন্তরিক কর্মতৎপরতা কামনা করেন। এটি গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে ভবন নির্মাণকারিরা কিছুদিন হাতগুটিয়ে রাখে। কিন্তু গত সপ্তাহ হতে আবারো পুরোদমে নির্মাণ কাজ চালানো হচ্ছে একাধিক স্থাপণায়। রোজার শেষ দশক ও ২৬ মার্চ হতে ঈদের টানা বন্ধের সুযোগ কাজে লাগিয়ে দ্রুত নির্মাণ সম্পন্ন করতে সেসব স্থাপণায় আবারো তোড়জোড় করে কাজ চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন উই ক্যান নেতৃবৃন্দ। রাতেও এসব স্থাপনায় চলছে নিরবিচ্ছিন্ন কাজ।
উই ক্যান কক্সবাজারের প্রধান নির্বাহী ওমর ফারুক জয় বলেন, অসচেতনতা ও আইন অমান্যের কারণে দূষিত হচ্ছে কক্সবাজারের পরিবেশ। যা পর্যটকদের মাঝে কক্সবাজার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করছে। আগে যেমন-তেমন ভাবে ভবন উঠেগেছে ইসি এলাকায়। কিন্তু পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষার তাগিদে উচ্চ আদালত ইসিএতে স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে নির্দেশনা দিলেও প্রশাসনিক নির্লিপ্ততায় তা কার্যকর হচ্ছে না। বরং লোভী ব্যবসায়ীদের নিরবে সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজারের সভাপতি এইচ এম এরশাদ বলেন, ইসিএতে স্থাপনা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞায় গেজেট ও আদালতের নির্দেশনা থাকলেও কলাতলীর ডিভাইন ইকো-রিসোর্টের পূর্বে লাগোয়া এবং মধ্যকলাতলীতে অসংখ্য স্থাপনা উঠছে। গত কয়েক মাস নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকলেও ঈদুল ফিতরের টানা ছুটিকে টার্গেট করে আবারো ছাদ ঢালাইয়ের তোড়জোড় করছে ডিভাইন এলাকার নির্মিতব্য স্থাপণায়। গত এক-দু’দশক আগে গড়া হোটেলে এসটিপি নেই, কিন্তু প্রশাসনিক তদারকিহীনতায় চলমান সময়ে গড়ে ওঠা অবৈধ এসব স্থাপনাতেও হচ্ছে না এসটিপি। ফলে শহরের পরিবেশ সামনের দিনে আরো দূষিত হবে। ভয়াবহ দূষণে পড়ছে পর্যটন জোনও।
পরিবেশকর্মী আমান উল্লাহ আমান বলেন, কক্সবাজারে আসা পর্যটকদের আবাসন সেবায় এখানে গড়ে উঠেছে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউস-কটেজ। রয়েছে তিনশোর বেশি রেস্তোরাঁ-কুলিং কর্ণার। এরই মাঝে অনুমতিহীন বিনাবাঁধায় ইসিএ-তে ভবন উঠছে। পরিবেশ আইন না মানায় ধীরে বাস অনুপযোগী হয়ে উঠছে পুরো শহর। ছাড়পত্রহীন ভবন নির্মাণ বন্ধ করা জরুরী।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (ডিডি) জমির উদ্দিন বলেন, ইসিএতে ভবনকারিদের ইতোপূর্বে নোটিশ দেয়া হয়েছিল। এখন কেউ লুকোচুরি করে কাজ চালানোর চেষ্টা করলে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, পরিকল্পিত কক্সবাজার গড়তে মাস্টারপ্ল্যানকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আগে কি হয়েছে জানি না। তবে, এখন পরিচ্ছন্ন কক্সবাজার করতে যা দরকার তা-ই করা হবে। ঈদটা চলে যাক, যারা কউকের নির্দেশনা মানছে না- তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উদ্যোগ হিসেবে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) ইকোট্যুরিজম পার্ক করতে দেওয়া সোনাদিয়া দ্বীপের প্রায় সাড়ে ৯ হাজার একর বনভূমি আট বছর পর আবার বন বিভাগকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। গত ১৭ মার্চ দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপকে রক্ষিত এলাকা হিসেবে সংরক্ষণের পরিকল্পনা নিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-