কক্সবাজার জার্নাল ডেস্ক:
পাঁচ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর বিএনপির নেতাকর্মীরা মাঠের রাজনীতিতে স্বস্তিতে রয়েছেন। কিন্তু গুটিকয়েক নেতাকর্মীর বিশৃঙ্খলায় অস্বস্তিতে রয়েছে দলটির হাইকমান্ড। তাদের এবার শৃঙ্খলায় আনতে আরো কঠোর হচ্ছে বিএনপি।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, পটপরিবর্তনের পর গত আট মাসে বিভিন্ন অভিযোগ ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য বিএনপি ও এর সহযোগী অঙ্গসংগঠনের প্রায় এক হাজার ৭শ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া হাজারের মতো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানা যায়।
বিভিন্ন অভিযোগে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পর দলকে শৃঙ্খলায় আনতে হিমশিম খাচ্ছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। গত ২০ মার্চ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, সংঘাত সৃষ্টি ও সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার কারণে ময়মনসিংহ উত্তর জেলাধীন নান্দাইল পৌর বিএনপির আহবায়ক এ এফ এম আজিজুল ইসলাম পিকুল-কে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ১৯ মার্চ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ বিভিন্ন অভিযোগে বরিশাল উত্তর জেলাধীন গৌরনদী পৌর বিএনপির সদস্য সচিব ফরিদ মিয়া, একই দিনে কৃষক দল-সিলেট মহানগর শাখার সহ-সভাপতি নেয়ার আলীকে বহিষ্কার করা হয়। এর আগে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙের অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদারের দলীয় প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ স্থগিত করে দলটি।
দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগে ১৯ মার্চ ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা যুবদলের সদস্য ইয়াছিন খানকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় যুবদল। তার একদিন আগে দলটির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে জানানো হয়, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং কেউ দখল বা চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত থাকলে তাকে যেন আটক রেখে কেন্দ্রীয় দপ্তরে জানানো হয়। এবং অভিযোগ অনুযায়ী সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেয় সংগঠনটি।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির আমার দেশকে বলেন, ছাত্রদল একটি সুসংগঠিত ছাত্রসংগঠন। কিন্তু পটপরিবর্তনের পর কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। পাশাপাশি প্রতিটি ইউনিটকে বলে দেওয়া আছে-ছাত্রদলের কেউ দলীয় শৃঙ্খলার বাইরে কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত হলে তার বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যুবদলের সভাপতি মোনায়েম মুন্না বলেন, সারা দেশে যা বিশৃঙ্খলা হচ্ছে তাতে আমরা তদন্ত করে দেখেছি এখানে যুবদলের গুটিকয়েক নেতাকর্মীর সম্পৃক্ততা রয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাদের সঙ্গে সঙ্গে আমরা বহিষ্কার করেছি। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের নীতি হবে জিরো টলারেন্স। আমাদের অনুরোধ থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একটু কঠোর ব্যবস্থা নিলে এ ধরনের পরিস্থিতি থাকবে না।
সূত্র জানায়, বিশৃঙ্খল নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলায় আনতে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কোনো নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে বহিষ্কারের পাশাপাশি সে যাতে দলে আর ফিরতে না পারে, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আজীবন বহিষ্কারের পাশাপাশি দলের পক্ষ থেকে মামলা করার চিন্তা করছে বিএনপি।
দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবীর রিজভী জানান, ফ্যাসিবাদী শাসনের সংস্কৃতি তৈরি করেছে হাসিনা সরকার। বিএনপি সেই দল নয়, যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। দলের শৃঙ্খলা রক্ষা ও অসঙ্গত কার্যকলাপের জন্য ছাত্রদল ও যুবদলের বহু নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অনেককে শোকজ বা পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আগামীতেও কেউ যদি দলের ভেতরে ও বাইরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, তার বিরুদ্ধেও কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। দলটিতে কয়েক কোটি নেতাকর্মী সমর্থক রয়েছে, তাদের মধ্য গুটিকয়েক নেতাকর্মী দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছেন। তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নিচ্ছে ও নেবে। তিনি আরো বলেন, অনেক নেতাকর্মী দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রামে নিষ্ক্রিয় ছিল, তারা হয়তো মনে করছে এখন দলের ভালো সময়। এলাকায় এক ধরনের প্রভাব বিস্তার করার কারণে কোথাও কোথাও বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করছে। এমন বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে দলের অবস্থান জিরো টলারেন্স।
সূত্র: আমার দেশ
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-