পূণরায় ক্ষমতায় আসতে মরিয়া সোনারপাড়ার দুই “ফ্যাসিস্ট নেতা”

উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর আস্থাভাজন দুই ব্যবসায়ী নেতা শাহ আলম ও শাহাজাহান

বার্তা পরিবেশক :

অন্ধের চোখে পট্টি বেঁধে বর্তমান কমিটির হাত ধরে নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণায় সোনারপাড়া বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমবায় সমিতি লি. সদস্যদের মাঝে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এছাড়াও অত্র সমিতির সদস্য তালিকায় ব্যবসায়ী ছাড়াও নিজেদের আত্মীয়স্বজন অন্তর্ভূক্তির অভিযোগ রয়েছে সমিতির সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে।

সোনারপাড়া বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমবায় সমিতি লি. এর অধিকাংশ সদস্যদের অভিমত, গেল ২৪ সালের ১৫ই ডিসেম্বর সমিতির কার্যালয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা সভা ডেকে আগামী ২২ই ফেব্রুয়ারী নির্বাচন ও সাধারণ সভার ঘোষণা দেন। অথচ উক্ত কমিটির মেয়াদ শেষ হবে ২১ ফেব্রুয়ারী। মেয়াদ শেষ হওয়ার পরের দিন কিভাবে নির্বাচন হবে তা নিয়ে সাধারণ সদস্যপদের মাঝে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। কারণ আগের কমিটিকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচন দেওয়ায় তাদের প্রভাব থাকবে সর্বোচ্চ লেভেলের। তারা সদস্যদের জিম্মি করে পূণরায় ক্ষমতার চেয়ারে বসার চেষ্টা করবে।

বিগত দিনের কমিটির সদস্যের বিরোধে অভিযোগ উঠেছে, তারা গেল নির্বাচনের পর ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে সভাপতি-সম্পাদক মিলে সমিতিতে নয়ছয়, খেয়ালখুশি মত সমিতি পরিচালনা এবং বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে সীমাহীন দুর্নীতি করেছেন।

এছাড়াও নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য ব্যবসায়ী নই এমন ব্যক্তি, শিক্ষার্থী, রাজমিস্ত্রী, নিজেদের আত্মীয়স্বজন, স্বামী-স্ত্রী এবং বিভিন্ন নারীদের সদস্য করে নিজেদের ভোট ব্যাংক তৈরি করেছেন। যার কারণে তাদের হাত ধরে নির্বাচন দিলে প্রভাববিস্তার এবং সুযোগ-সুবিধা তাদেরই থাকবে ও একচ্ছত্র রাজত্ব করবে এমন চিন্তা তাদের।

নৌকার বিজয় কামনায় সোশ্যাল মিডিয়ায় পোষ্ট ব্যবসায়ী নেতা শাহাজাহান

এছাড়াও বর্তমান কমিটির সভাপতি শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতির ছেলে মো. শাহাজাহান উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর আস্থাভাজন ছিলেন এবং তার হয়ে সোনারপাড়া এলাকার অঘোষিত ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজ করতেন এবং তারই নির্দেশে ওই সময়ে বিএনপি পন্থী সদস্যদের সমিতি থেকে কোনো কারণ ছাড়াই বহিষ্কার করেছেন। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়ী মনে করতেন না বলে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।

তাছাড়াও বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীসহ আন্দোলনকারীদের উপর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ দ্বারা হামলার অর্থযোগানদাতা-পরিকল্পনাকারী হিসেবে কাজ করে গেলেও সরকার পতনের পরেও এখনও দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বীরদর্পে। অদৃশ্য কারণে রয়ে গেছেন অধরা।

এদিকে, শাহ আলম ও শাহাজাহান আওয়ামী লীগের এজেন্ট দাবি করে গড়ে তুলেছেন উখিয়া উপজেলা দোকান মালিক সমিতি নামে আরও একটি আওয়ামী লীগ অনুসারী সংগঠন। বিএনপি অফিস ভাংচুর, সাধারণ মানুষ হত্যা সহ একাধিক মামলার প্রধান অভিযুক্ত বহু অপকর্মের হোতা জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীকে এই সংগঠনের করা হয় প্রধান উপদেষ্টা। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের দলীয় কর্মকাণ্ড চালানো জন্য এবং সদ্য সম্পন্ন হওয়া উপজেলা নির্বাচন ব্যয় নির্বাহের জন্য জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী নাম ভাগিয়ে স্টেশন থেকে দোকান মালিক সমবায় সমিতির নিকট থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই শাহ আলম ও শাহাজাহান। যাদের আশ্রয় প্রশ্রয়দাতা ছিলেন জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী।

অন্যদিকে, তারা সভাপতি- সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পরে আওয়ামী লীগের এজেন্ডা ও দলীয় কার্যক্রম বাস্তবায়নে মরিয়া ছিলেন। নির্বাচিত হওয়ার পরপরই আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফুল দেওয়ার হিড়িক পড়ছিলো। অথচ সেসময়ে তারা বিএনপি নেতার দ্বারে কাছেও যায়নি। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ সর্বত্র সমালোচনার ঝড় বইছে দীর্ঘদিন থেকে। গেল ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকার পরিবর্তনের পর এসব অপকর্মে জড়িতরা গা ঢাকা দিলেও আস্তে আস্তে নানা কৌশল অবলম্বন করে আবারও সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এ অর্থ যোগানদাতারা। তাই এতো কিছুর পরেও তারা কিভাবে ক্ষমতার চেয়ার বসে নির্বাচনের স্বপ্ন দেখে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, এখানে ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার, স্বার্থের জন্য তাদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের পা চাটার জন্য ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাজিরা দেওয়ার জন্য নয়। সুযোগ বুঝে বিএনপি নেতাদের বাড়ি বাড়ি হাজিরা দেওয়া তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য যায়। যা ব্যবসায়ীদের কোনো কল্যাণে আসছেনা মনে করছেন তারা। অবিলম্বে, বহু অপকর্মের হোতা শাহ আলম-শাহাজাহান সহ তাদের সহযোগীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি এবং ব্যবসায়ীদের স্বার্থে সোনারপাড়া সোনারপাড়া বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমবায় সমিতি লিমিটেডকে ঢেলে সাজানোর জন্য বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হলে নতুন আহবায়ক কমিটি গঠন করে নির্বাচন দেওয়ার অনুরোধ জানান সাধারণ ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে জানতে উখিয়া উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোহাম্মদ সলিম উল্লাহর নাম্বারে কল দিলে ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

আরও খবর