তাহসানের শ্বশুর ক্রসফায়ারে নিহত যুবলীগ নেতা ‘পানামা ফারুক’

ডেস্ক রিপোর্ট :


তাহসানের শ্বশুর ক্রসফায়ারে নিহত যুবলীগ নেতা ‘পানামা ফারুক’
দেশের জনপ্রিয় অভিনেতা ও কণ্ঠশিল্পী তাহসান খানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মেকআপ আর্টিস্ট রোজা আহমেদের বিয়ে নিয়ে সরগরম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।

বিজ্ঞাপন

শনিবার সন্ধ্যায় রোজার সঙ্গে একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে বিয়ের গুঞ্জনে আনুষ্ঠানিক সীলমোহর দিয়েছেন তাহসান। যদিও তাদের বিয়ে, পরিচয় নিয়ে এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্যে দেননি দু’জনের কেউই।

এরই মধ্যে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে আরও একটি খবর। দাবি করা হচ্ছে, মেকআপ আর্টিস্ট রোজা আহমেদের বাবা হচ্ছেন ২০১৪ সালে বরিশালে ক্রসফায়ারে নিহত যুবলীগ নেতা ফারুক আহমেদ ওরফে ‘পানামা ফারুক’।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৪ জানুয়ারি) রাতে ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে রোজার একাধিক সহপাঠী, বন্ধু ও এলাকাবাসী।

বিজ্ঞাপন

তারা জানান, ‘পানামা ফারুক’-এর মেয়ে হচ্ছেন রোজা। প্রায় ৫ বছর আগেই যুক্তরাষ্ট্র চলে যান তিনি। এরপর থেকে সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। এর মধ্যেই শনিবার সকালে তাহসানের সঙ্গে তার বিয়ের খবর জানতে পারলাম।

এ বিষয়ে ফারুক আহমেদের ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ঢাকা পোস্টের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে, রোজা ও তাহসানের বিয়ের প্রসঙ্গ উঠতেই ফোনটি কেটে দেন তিনি।

জানা গেছে, তাহসান খানের শ্বশুর ফারুক আহমেদ বরিশাল নগরীর চকবাজার এলাকার বাসিন্দা। বাজার রোডে মেসার্স পানামা ট্রেডার্স নামে তার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। ছাত্রদলের রাজনীতি দিয়ে শুরু করলেও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি যুবলীগে যোগ দেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাই আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর অনুসারী হয়ে শুরু করেন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। সেই থেকে ‘পানামা ফারুক’ নামে তার পরিচিতি পান তিনি।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর মদদে বরিশাল নগরীতে যে আট খলিফা নামে সন্ত্রাসী বাহিনীর জন্ম হয় তার একটির নেতৃত্বে ছিল পানামা ফারুক। নগরীর উত্তর-পূর্বাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অপরাধের জগৎ গড়ে তোলেন। চাঁদাবাজী, হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে আধিপত্যের কেন্দ্রে চলে আসেন। নিহত হওয়ার আগে তার নামে অস্ত্র, হত্যা, চাঁদাবাজীর অভিযোগে দশটিরও বেশি মামলা ছিল থানায়। পানামা ফারুকের নেতৃত্বে বরিশাল প্রেসক্লাবেও হামলা হয়েছিল। তিনি একে-৪৭ রাইফেল নিয়ে প্রকাশ্যে নগরীতে মহড়া দিতেন।

আট খলিফার মধ্যে পানামা ফারুক ছাড়াও মো. জসিমউদ্দিন ওরফে ভিপি জসিম, কুতুব রানা, অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম ওরফে মামা খোকন, আবুল বাসার, মোয়াজ্জেম হোসেন চুন্নু, মোনায়েমের ছিল ভিন্ন ভিন্ন সন্ত্রাসী বাহিনী।

আরও পড়ুন

স্ত্রীর সঙ্গে ছবি প্রকাশ করলেন তাহসান
তাহসানের বিয়ের খবরের দিনে মেয়ের সঙ্গে দেখা মিলল মিথিলার
তাহসানের সঙ্গে বিয়ের গুঞ্জন : মোহনীয় লুকে রোজা আহমেদ
তাহসানের ‘চাঁদের আলো’ কে এই রোজা?
মূলত আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এসব বাহিনী দিয়ে নগরী নিয়ন্ত্রনে নেন। সেই সুবাদে অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে বরিশালে। রাজনীতিবিদরা এই সময়কে বরিশালের অন্ধকার যুগ বলেও অভিহিত করেন।

সে সময়ে এসব সন্ত্রাসীরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মোস্ট ওয়ান্টেড হিসেবে নথিভূক্ত ছিলেন।

এরপর ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার গঠন করলে এই ৮ বাহিনী ভারতে পালিয়ে যায়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসলে একে একে তারা দেশে ফেরেন। ২০০৯ সালের ৪ অক্টোবর ফারুক আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। কিছুদিন কারাভোগের পর জামিনে মুক্ত হন।

ওই সময়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন শওকত হোসেন হিরন। যে কারণে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে ত্যাগ করে শওকত হোসেন হিরনের হয়ে কাজ শুরু করেন শীর্ষ সন্ত্রাসী পানামা ফারুক। বিষয়টি ভালোভাবে নেননি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। রাজনৈতিক টানপোড়েনের মধ্যে নিজেকে থিতু করতে দুই নেতার কাছে নিয়মিত যাতায়াত শুরু করেন পানামা ফারুক।

তবুও শেষ রক্ষা হয়নি। একাধিক মামলার আসামি ‘পানামা ফারুক’ ২০১৪ সালের ১০ জানুয়ারি ভোরে বরিশালে নিজ বাড়িতে ফেরার পথে চকবাজারে র‌্যাবের কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

পানামা ফারুকের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তার ইতিহাস মুছে গেলেও সম্প্রতি রোজা ও তাহসানের বিয়েতে আবারো আলোচনায় উঠে এসেছে দুর্ধর্ষ সেই সন্ত্রাসীর নাম।

প্রসঙ্গত, তাহসানের স্ত্রী রোজা আহমেদ নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে কসমেটোলজির ওপর পড়াশোনা করেছেন। পড়াশোনা শেষ করে কসমেটোলজি লাইসেন্স গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে নিউইয়র্কের কুইন্সে রোজাস ব্রাইডাল মেকওভার প্রতিষ্ঠাতা করেন। রোজা একজন উদ্যোক্তা।

আরও খবর