স্টাফ রিপোর্টার, চকরিয়া :
একদিন পরই শুরু হচ্ছে ২০২৫ সাল। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। এরইমধ্যে নতুনরূপে সেজেছে জেলার পর্যটন স্পটগুলো। নতুন বছরের আনন্দ ভাগাভাগি করতে চায় সকলে। গোলাপের সুবাসে দূর হোক সকল দুর্বৃত্তপনা ও সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তি।
প্রিয়জনকে উপহার হিসেবে ফুলকে বেচে নেন অনেকে। তবে প্রিয়জনকে ফুল উপহার পুরনো রীতি হলেও স্বরণীয় করে রাখতে কমবেশি সবাই চেষ্ঠা করেন।
ডিজিটাল প্রযুক্তির এই যুগে প্রিয়জনকে ভালোবাসার শুভেচ্ছা জানানোর নানা মাধ্যম তৈরি হলেও এখনো সবার কাছে ভালোবাসার অন্যতম অনুভূতি হিসেবে কাজ করছে ফুল উপহার। নতুন বছরকে বরণ করতে তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সি মানুষ সাজগোজ করে ভিড় জমান ফুল কিনতে।
কেউবা প্রিয়জনের জন্য ফুল কিনছেন, কেউবা কিনছেন নিজের জন্য। সাধারণ ক্রেতার পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যবসায়ীরাও আসছেন ফুলের দোকানগুলোতে। সব মিলেয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিক্রেতারা। যেনো কারোরই বসে থাকার ফুসরত নেই।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর ফুলের ফলন ভালো হয়েছে। চাহিদাও রয়েছে বেশ। নতুন বছরের পাশাপাশি সবমিলিয়ে সামনের ভালোবাসা দিবসের দিন অনেক ফুল বিক্রির প্রত্যাশা করছেন সবাই। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়ে অতিরিক্ত ফুলের চাষাবাদ করছেন অনেকে।
এই প্রেক্ষাপটে নতুন বছরে ফুলের চাহিদা ঘিরে ফুল সংগ্রহ, সংরক্ষণ, ডিজাইন কাটা, প্যাকেটজাত থেকে শুরু করে গন্তব্যে পৌছানো নিয়ে বেশ সরগরম হয়ে উঠেছে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ‘গোলাপ নগর’ খ্যাত বরইতলী ও হারবাং এলাকার শতাধিক বাগানে।
চাহিদা অনুসারে বরইতলী ও হারবাং ইউনিয়নের ফুলের বাগান থেকে কয়েক লাখ গোলাপ ফুল ও রজনীগন্ধা কক্সবাজার শহর, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠিয়েছেন চাষিরা। পাইকারি ও খুচরা অর্ডারে এবারের কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করেছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মহল।
স্থানীয় ফুল চাষিরা জানান, গোলাপ নগর বরইতলী ও হারবাং ইউনিয়নে শতাধিক বাগানে পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ শ্রমিক বাণিজ্যিকভাবে রকমারি ফুলের বাগানে পালাক্রমে কাটার কাজ করছেন। নতুন বছরকে ঘিরে ফুল বেচাকেনার ধুম পড়েছে এখানে। গোলাপ ও গ্লাডিওলাস ফুল বিক্রি হচ্ছে বেশি। এতে লাভের মুখ দেখছেন এখানকার চাষিরা।
বরইতলী থেকে পাইকারি কিনে চট্টগ্রাম শহরের চেরাগি পাহাড় এলাকায় বিক্রি করতে নিয়ে যাচ্ছিলেন শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রতিদিন গড়ে কয়েক হাজার পিস ফুল কেনা হয় চকরিয়ার বরইতলী থেকে। বিশেষ দিবসগুলোতে তা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে আগাম অর্ডার দেয়া হয় প্রায় ২০ হাজার গোলাপ ও গ্লা ডিওলাস ফুলের।
বরইতলী ইউনিয়নের উপরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ফুলচাষি আনোয়ার হোসেন বলেন, এবার একশত একর জমিতে গোলাপ চাষ করেছি। সবমিলিয়ে এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন দৈনিক ৮০০ পিস গোলাপ ফুল বাগান থেকে কাটা হচ্ছে। মাসে ১৫ বার ফুল কাটা হয়।
তিনি আরও বলেন, নিয়মিত একটি গোলাপ ফুল বাগান থেকে তিন অথবা চার টাকা দামে বিক্রি করতাম। বিশেষ দিবসে চাহিদা থাকায় একটি গোলাপ ফুল ৭-৮ টাকা দামে বিক্রি করেছি। এভাবে বছরে কয়েকটি দিনে ফুলের চাহিদা বেড়ে যায়। গোলাপ নগরখ্যাত বরইতলীেএবং হারবাং ইউনিয়নের শতাধিক বাগানে এলাকার বিপুল পরিমাণ বেকার নারী-পুরুষ কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। এখানে গরীব মানুষের জন্য একটি স্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমানে প্রযুক্তির যুগ হলেও কাঁচা ফুলের চাহিদা আগের মতোই আছে। তাই শতাধিক বাগানে উৎপাদিত ফুল বিক্রিতে চাষিদের কোনো বেগ পেতে হয় না। সকালে বাগান থেকে ফুল তোলার পর বিকালের মধ্যে কক্সবাজার-চট্টগ্রামের পাইকাররা সরাসরি এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
ফুল চাষিরা জানান, প্রতি পিস গোলাপ মানভেদে পাইকারি আট থেকে দশ টাকা ও রকমারি রঙয়ের গ্লাডিওলাস ফুল ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তুলনামূলক দাম ভালো পাওয়ায় বেশ খুশি চাষিরা, ফুল কাটায় নিয়োজিত ফুল শ্রমিক ও নারী-পুরুষ মৌসুমি শ্রমিকরা কাজ করছেন।
চাষিরা আরও জানান, সারাবছরের মধ্যে গোলাপের চাহিদা সব থেকে বেশি থাকে ভালোবাসা দিবসে। প্রতিবছর বছরের প্রথম দিনে এবং ফেব্রুয়ারি মাসে হলেই ব্যবসায়ীরা গোলাপ চাষিদের ফুল কেনার জন্য আগাম অর্ডার দিতেন। অনেক সময় ফুল কেনার জন্য অগ্রিম টাকাও দিতেন ফুল ব্যবসায়ীরা। তবে এবার ব্যবসায়ীদের ফুল কেনায় আগ্রহের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।
বরইতলী ফুল বাগান মালিক সমিতির আহ্বায়ক মো.মইনুল ইসলাম বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় ফুল চাষে সুদিন ফিরে এসেছে বলে মনে হচ্ছে। এখানকার চাষীরা নির্ভয়ে ফুল চাষে নেমেছেন। তাই আশা করছি, এবারের ভালোবাসা দিবসে গোলাপ ও গ্লাডিওলাসসহ রকমারি ফুল বিক্রি করে চাষিরা ভালো লাভবান হচ্ছেন।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবারের থার্টি ফার্স্ট নাইট তথা ইংরেজি বছরের প্রথম দিনকে বরণ উপলক্ষে ফুলের ব্যবহার, অনুষ্ঠান ও আয়োজনে কিছুটা মলিন বা থমকে থাকা মনে হলেও নতুন বছর ২০২৫কে আপন করে নিতে প্রস্তুত বর্তমান প্রজন্মের ছাত্রসমাজ ও শিক্ষার্থীবৃন্দ।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম নাসিম হোসেন বলেন, বরইতলী ও হারবাং ইউনিয়নে চলতি বছর ৬৬ হেক্টর জমিতে গোলাপ, ২৮ হেক্টরে গ্লাডিওলাস ও ১৬ হেক্টরসহ মোট ১১০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ করছেন পাঁচ শতাধিক চাষি।
উৎপাদন ভালো হওয়ায় এবারের বছরের প্রথম দিনকে বরণ করে নিতে এবং আগামী ভালোবাসা দিবসসহ সবকটি দিবসে ফুল বিক্রিও ভালো হবে। এতে আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হবেন চাষিরা এমনটাই জানিয়েছেন ফুল ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট মহল।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-