সুগন্ধায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে আওয়ামী লীগের অর্থ যোগানদাতারা

বার্তা পরিবেশক :


সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে পৌর যুবদল জয়নালের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ নেতাদের অর্থ যোগানদাতা পৌর ১২ নং ওয়ার্ডের জাকির হোসেন, নুরুল হুদা ওরফে গুরাইয়া নামক কথিত দুই হকার নেতা ও নুরুল আলম ।

সিন্ডিকেটটি দীর্ঘদিন ধরে সুগন্ধা পয়েন্ট ঝুপড়ি দোকান বসানো, অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া, সমুদ্র সৈকতে বালিয়াড়ির হকারদের থেকে চাঁদাবাজি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া জাকির গুরামিয়া আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটি কর্মসূচিতে তাদের অর্থ ও শত শত নারী পুরুষের অংশগ্রহণ ছিল।

এমনকি ১২ নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সমস্ত প্রোগ্রামের দায়িত্বও পালন করেছে ওরা। গেল ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকার পরিবর্তনের পর এসব অপকর্মে জড়িতরা গা ঢাকা দিলেও আস্তে আস্তে নানা কৌশল অবলম্বন করে আবারও সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের এসব অর্থ যোগানদাতারা। কিন্তু এই দুই জনের কারও দলের পোস্ট পদবি নেই, আওয়ামী লীগের অর্থ যোগানদাতা ও সুবিধাভোগী হিসেবে পরিচিতি রয়েছে লোকমুখে। কিন্তু ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের ক্ষমতাচ্যুত হলে কয়েকদিন আড়ালে চলে যায় জাকির ও গুরামিয়া,রুবেল।

এক সময় শহরের ১২নং ওয়ার্ডের কলাতলী এলাকার নজীর আহমেদের ছেলে জাকির হোসেনের উত্থান শুরু হয় ২০১৭ সালের দিকে, প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা কাজী রাসেল আহাম্মদ নোবেলের হাত ধরে। আওয়ামী লীগের মিছিল-মিটিং, শাহাদাত বার্ষিকী ও বিভিন্ন সভা-সমাবেশে মিছিল সহকারে ‘জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে জেলা শহরের রাজপথ মুখরিত করা কাজী রাসেলের ডান হাত খ্যাত সেই জাকির হোসেন ও সহযোগী নুরুল হুদা প্রঃ গুরা মিয়া ছিল তখন আলোচনায়।

কিন্তু ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ নেতা কাজী রাসেলের পরিবর্তন এখন পৌর যুবদল নেতা জয়নাল আবেদিনকে অভিভাবক বানিয়ে পুনরায় সুগন্ধা বিচ এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। রুবেল আত্মগোপনে চলে গেলেও যুবদল নেতা জয়নালের ছত্রছায়ায় আওয়ামী লীগের অর্থের যোগানদাতা জাকির গুরামিয়া আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে দিন দিন।

এখন তাদের একটা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে প্রায় দুই শতাধিক ঝুপড়ি দোকান থেকে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, নুরুল হুদা প্রঃ গুরা মিয়া হলো শহরের ১২নং ওয়ার্ডের সৈকত পাড়ার মৃত আলী আকবরের ছেলে।

তৎকালীন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ভাগ্নে’ পরিচয়ে পর্যটন এলাকার অপরাধ নিয়ন্ত্রক কাজী রাসেল আহম্মেদ নোবেল। তার বড় ভাই ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই পৌর নির্বাচনে ১২নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিল মরহুম কাজী মোর্শেদ আহম্মেদ বাবু নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে কাজী রাসেল ও তাঁর সাথে সাথে তারই ডান হাত খ্যাত জাকিরসহ নুরুল হুদা প্রঃ গুরাইয়া! হোটেল-মোটেল জোনে কটেজ দখল করে মাদক ও পতিতা ব্যবসাসহ চাঁদাবাজি, মাসোহারা, বিচার-সালিশ এবং পর্যটন হয়রানির মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন কাজী রাসেল ও তার সহযোগী সন্ত্রাসীরা।

জানা যায়, ২০২০ সালের (২৪ ফেব্রুয়ারী) সদর মডেল থানা পুলিশের বিশেষ অভিযানে নারীসহ আটক হয় কাজী রাসেল। নারীসহ গ্রেফতারের পর অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ে তাঁর ডান হাত খ্যাত সুগন্ধার আলোচিত জাকির ও সহযোগীরা। পরে রাজনৈতিক অভিভাবক পাল্টিয়ে শুরু হয় জাকির হোসেন ও এম.এ মনজুরের দ্বিতীয় অধ্যায়ের সূচনা।

সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক উপ-প্রচার সম্পাদক এম.এ মনজুর ২০২১ সালের (২৮ নভেম্বর) পৌরসভার উপ-নির্বাচনে ১২নং ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হলে কৌলশ বদলিয়ে নতুন অধ্যায়ন শুরু করেন জাকির।

পরে মনজুরের একান্ত বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে ১২নং ওয়ার্ডে একতরফা রাজত্ব শুরু করে জাকির হোসেন ও তার সহযোগীরা। ধীরে ধীরে এম.এ মঞ্জুরের আস্থাভাজন হিসেবে আওয়ামী লীগের সমস্ত প্রোগ্রামের দায়িত্ব তার উপর অর্পণ হয় জাকিরের উপর এবং সঠিকভাবে পরিচালনাও করে সফল হয়েছেন। নির্বাচন কেন্দ্রিক সুগন্ধা এলাকায় উঠান বৈঠকের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, তৎকালীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এডঃ সিরাজুল মোস্তফা ও জেলা আওয়ামী লীগের মকুল এবং কাজী রাসেলের বড় ভাই শামীমের উপস্থিতিতে নৌকা মার্কার সমর্থনে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জাকির হোসেন। আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার আগমন উপলক্ষে শেখ হাসিনার আগমন শুভেচ্ছার স্বাগতম, শেখ হাসিনার সরকার বারবার দরকার স্লোগানে বিশাল মিছিল করেন জাকির।

আরও জানা যায়, এম.এ মনজুরের মাধ্যমে কক্সবাজার-৩ আসনের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের সাথে পরিচয় হয় জাকির হোসেনের। পরিচয় হওয়ার কিছু দিন পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-৩ আসনে নৌকা মাঝি হউন সাইমুম সরওয়ার কমল। পরে একটি গুঞ্জন ওঠে জাকির হোসেন সাইমুম সরওয়ার কমলের নির্বাচনী মাঠে তার পক্ষ থেকে খরচ করেন প্রায় (১২ লক্ষ) টাকারও বেশি বলে শুনা যায়।

সে নির্বাচনে কক্সবাজার-৩ আসনে নৌকার মাঝি হিসাবে জয় পায় কমল। কমলের জয়ের পর আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন জাকির ও তার সহযোগীরা। সংসদ সদস্যের বিশ্বস্ত সহযোগী হয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা, টেন্ডারবাজী, নির্বাচনে প্রভাব খাটানো, ত্রাস সৃষ্টি করে প্রতিদ্বন্দ্বী ও বিভিন্নজনকে পেটানোসহ নানা অপকর্ম করছেন বলে অভিযোগ জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে।

স্থানীয়রা জানান, কমল এমপি হওয়ার পর কলাতলী এলাকায় ক্রমেই ভয়ংকর হয়ে উঠেছিল জাকির। তিনি নিজেকেই সংসদ সদস্য ভাবতেন। পুরো এলাকা নিজের মত করে চালাতে চেয়েছিলেন আঙুলের ইশারায়। তার পথে যারা বাধা হয়েছিল, তাদেরই শায়েস্তা করেছেন জাকির। এসব অপকর্ম আঞ্জাম দেওয়ার জন্য হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কিছু বেপরোয়া নেতাকর্মী ও সন্ত্রাসী।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জাকির হোসেন বলেন- আমি কোন দল করি না, কোন দলে ছিলাম না। কোন কমিটিতে আছি দেখাতে পারবেন না। আমার লাইভে আওয়ামী লীগ করি নাই, কিন্তু আমি ব্যবসা করেছি। কাজী রাসেল আমাদের সমিতির উপদেষ্টা ছিল, তার সাথে ছিলাম, ঠিক আছে তো। তাই মানুষ তার ডান হাত বাম হাত বলতেছে।

নুরুল হুদা ওরফে গুরা মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন- আমিতো কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত নাই। আমার বিরুদ্ধে কেন লিখছেন? শহরের ১২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুর্শেদের বিরুদ্ধে কেন লিখছেন না? লাবনী পয়েন্টের ছাতা মার্কেটের সভাপতির বিরুদ্ধে কেন লিখছেন না? লাইটহাউজ পাড়া এলাকার জনৈক ব্যক্তির বিরুদ্ধে কেন লিখছেন না?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর কক্সবাজারের অন্যতমও ছাত্র প্রতিনিধি শাহেদ মোহাম্মদ লাদেন বলেন- আমাদের পরিষ্কার কথা হচ্ছে, যে যতটুকু অন্যায় করেছে-সে ততটুকু শাস্তি পাবার যোগ্য। এবং ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে আমাদের যা যা করার আছে আমরা তা অবশ্যই করবো।