পরিচয় দেয় প্রশাসনের সোর্স

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ত্রাসের রাজত্বে ৫ ভাইয়ের মনিয়া সিন্ডিকেট!

এম ফেরদৌস, উখিয়া :

  • ক্যাম্প কেন্দ্রীক যাবতীয় অপকর্ম তাদের হাতে
  •  তাদের এক সময় নুন আনতে পান্তা ফুরানো অবস্থা, অবৈধ আয়ে গড়ে তুলেছেন অটেল সম্পদ
  • রোহিঙ্গাদের সাথে আঁতাত করে মাদক কারবার,অপহরণ বাণিজ্য, সন্ত্রাসী কায়দায় ডাকাতি,পাহাড় কাটাসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত তারা
  • তাদের রয়েছে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র,কন্ট্রাক্ট নিয়ে করেছে রোহিঙ্গা হত্যাও
  • সিন্ডিকেটে ভাইগ্রুপসহ জড়িত রয়েছে রোহিঙ্গা আরসা সদস্য
  • তাদের পুর্বপুরুষ রোহিঙ্গা হলেও তারা এখন বাংলাদেশি নাগরিক
  • মাদক, হত্যা, ডাকাতি, বন সহ তাদের রয়েছে ডজনখানেক মামলা

উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের সাথে আঁতাত করে মাদক কারবার,অপহরণ বাণিজ্য, দেশদ্রোহী কর্মকান্ড, অস্ত্র ঠেকিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় ডাকাতি ,পাহাড় কেটে মাটি বিক্রিসহ অসংখ্য অপরাধ কর্মকান্ডে নিজেদের জড়িয়ে থ্যাংখালী ক্যাম্প কেন্দ্রীক এলাকায় গড়ে তুলেছেন ত্রাসের রাজত্ব। প্রশাসনের সোর্স পরিচয় দিয়ে এসব অপকর্ম চালাচ্ছে তারা এমন অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

জানা যায়, উখিয়া থ্যাংখালী ঘোনারপাড়া এলাকার মৃত আব্দু শরীফের ছেলে নুরুল হাকিম প্রকাশ মনিয়া ডাকাত,নুরুল আকতার,নুরুল আমিন, নুরুল বশর,খাইরুল বশর তারা ৫ ভাই। তারা সকলেই এসব অপকর্মে কোন না কোনভাবে জড়িত হয়ে ক্যাম্প ভিত্তিক এলাকায় নিয়মিত নৈরাজ্য সৃষ্টি করে আসছে ৪/৫ বছর যাবৎ। তাদের সহযোগী হিসাবে কাজ করছে একই এলাকার জাফর মিয়ার ছেলে নুরুল কবির প্র:আববুইয়া ও মিতুর ছেলে ইব্রাহিম।

তাদের রয়েছে,মার্ডার,মাদক, দেশদ্রোহী, ডাকাতি,বনসহ ডজনখানেক মামলা। দেশের প্রচলিত আইনের প্রতিটি ধারায় তাদের বিরুদ্ধে অপরাধীর চিহ্নিত দাগ রয়েছে।

আইনের শাসন ও দায়িত্বরত প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা বহাল তবিয়াতে এসব নৈরাজ্যের রাজত্ব কায়েম করেছে এই এলাকায়।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, এইখানে অনেকের পূর্বপুরুষ ছিল রোহিঙ্গা। কৌশলে তারা বাংলাদেশী নাগরিক হয়ে মায়ানমার কেন্দ্রীক বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কায়দায় বিভিন্ন কিলিং মিশনের কন্ট্রাক্ট নিয়ে অবৈধ উপায়ে আয় করেছেন কোটি কোটি টাকা।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গ্রুপে গ্রুপে বিভিন্ন সংঘর্ষের ঘটনাতেও তারা কোন পক্ষপাত হয়ে অপর পক্ষকে অপহরণ ও হত্যা করার কন্ট্রাক্ট নিতেন। এমন এক ঘটনার তথ্যেও অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ২০২১ সালে ১৯নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-৩ ব্লকের মো: জাবের নামে এক রোহিঙ্গাকে মোটা অংকের টাকায় কন্ট্রাক্ট নিয়ে নৃশংশভাবে হত্যা করেছিল তারা। এসব হত্যাকান্ডের পর থেকে তারা আরো বেপরোয়াভাবে অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে ১৯নং ক্যাম্পে ভয়ংকর রুপে চলাপেরা করতো বলে জানিয়েছেন সেখানকার রোহিঙ্গারা।

স্থানীয়রা বলছে, মনিয়া ডাকাতের গ্রুপটি খুন খারাবি, মাদক কারবার ছাড়াও নতুন করে শুরু করেছে অস্ত্র ঠেকিয়ে মানুষের জমি জবর দখল করা। এলাকায় অনেক স্থানীয় মানুষের জমি জবরদখল করেছে সন্ত্রাসী কায়দায়। কেউ মুখ খুললে তাকে হত্যার হুমকি ও অপহরণ করে নেওয়ার শর্ত জুড়ে দেয়।

জীবন চাইলে জায়গা ছাড়তে হচ্ছে জায়গা চাইলে জীবন দিতে হচ্ছে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে তাদের হাতে রয়েছে দেশি বিদেশী অস্ত্র। তাছাড়া এই গ্রুপের সদস্যরা অনেক মার্ডার করেছে এমন খবরও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এলাকায়। তাই ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলে না। তাদের এসব অপকর্ম নিয়ে ১৯নং পুলিশ ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন অনেকেই।

স্থানীয় হোস্ট কমিনিউটির সভাপতি বলছে , ১৩ এবং ১৯নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাটাতাঁরের ঘেরাওর ভেতরে প্রায় ৪০০+ পরিবার রয়েছে। তারা এমনিতেই রোহিঙ্গাদের বর্বরতা ও গ্রুপে গ্রুপে সংঘর্ষের ঘটনায় আতংকে দিনযাপন করে। তার মধ্যে ঘোনাপাড়ার নুরুল হাকিম প্রকাশ মনিয়া ডাকাতের গ্রুপে কাটাঁতারের ঘেরাওর ভিতর এসে বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাচ্ছে। তাদের মূল পেশা মাদক কারবার ও ডাকাতি, এর মধ্যে এখন শুরু করেছে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় বসতির পার্শ্ববর্তী লাগোয়া বনাঞ্চলের পাহাড়গুলো কেটে মাটি পাচারের কাজ।
এসব ঘটনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানার পরেও কোন কর্ণপাত করছে না কেউ। অথচ মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার সময় এপিবিএন পুলিশের চেকপোস্টও আছে। ক্যাম্পের ভিতর থেকে এমনি অন্যন্য গাড়ি বা মানুষ বের হলে তাদের তল্লাশী করা হয় অথচ মাটি নিয়ে যাওয়া গাড়ি তল্লাশীও হয় না তাদের কেউ বাধাও দেয়না। এসব কি টাকার জোরে নাকি মনিয়া ডাকাতকে ভয়ে সেটা এখনো স্থানীয়দের অজানা।

মনিয়া ডাকাত সিন্ডিকেট নির্বিচারে বনাঞ্চলের পাহাড় কেটে কি মূলে মাটি পাচার করছে এমন প্রশ্নে উখিয়া রেঞ্জের থ্যাংখালী বিট কর্মকর্তা বিকাশ দাস বলেন, ক্যাম্পের ভিতর বনাঞ্চলের সব জায়গাগুলো সিআইসি ( ক্যাম্প ইনচার্জ) দেখাশোনা করেন। তারপরও আমরা চেষ্টা করি যাতে কেউ পাহাড় না কাটে। ক্যাম্পের ভিতরে যারা পাহাড় কাটতেছে তাদের বিরুদ্ধে অলরেডি মামলা রয়েছে এদের মধ্যে নুরুল হাকিম,নুরুল আকতার,নুরুল বশর তারা সকলেই আসামী হয়েছে।

তাছাড়া নুর হাকিম প্রকাশ মনিয়ার একটা ড্রাম্পগাড়ি এখনো রেঞ্জ অফিসে আটক আছে। তারা পাহাড় কাটতেছে আমরা অবগত হয়েছি। এ বিষয়ে সিআইসি মহোদয়ের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

এসব বিষয়ে ১৯ নং ক্যাম্পের সিআইসি (সহকারী সচিব) আল ইমরানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পাহাড় কাটছে রাত ১২ টার পর থেকে ভোর ৫ টা পর্যন্ত। এখন অই সময়ে তো আমি একা মুবাইল কোট করতে পারছি না তারপরেও আমি আমার উর্ধতন কর্মকর্তাদের এসব জানিয়েছি এবং ব্যবস্থা নিতে দাপ্তরিক নোটিশও ইস্যু করেছি।

ক্যাম্পের ভিতরে ডুকতে ও বাহির হতে এপিবিএন পুলিশের চেকপোস্ট রয়েছে, পাহাড় কাটতে আসার সময় এবং মাটি নিয়ে যাওয়ার সময় তো এপিবিএন পুলিশ দেখার কথা?

এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যয় তারা চাইলে মাটি নিয়ে যাওয়ার সময় মাটিসহ গাড়ি আটক করতে পারে। আমি এপিবিএন পুলিশকেও বেশ কয়েকবার অবগত করেছিলাম কিন্তু কোন প্রতিক্রিয়া মিলেনি।

ক্যাম্পে মনিয়া গ্রুপটা কি অনেক বড় শক্তিশালী গ্রুপ, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এই গ্রুপের বিষয়ে খোজ নিচ্ছি। যতবড় শক্তিশালী হউক না কেন সকল অপরাধীকে আইনের আওতায় আসতেই হবে।

এসব ঘটনা ও অপরাধীদের বিষয়ে কথা বলতে ১৯নং ক্যাম্পের দায়িত্বরত ৮এপিবিএন পুলিশের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেও মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

তাদের রোহিঙ্গাদের বংশধর ও ডাকাত গৌষ্ঠী তকমা দিয়ে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সেলিম উদ্দিন বলেন, নুরুল হাকিম প্রকাশ মনিয়া, নুরুল বশর এদের ভাইগ্রুপ্টা ক্যাম্পের ভিতরে এবং বাহিরে বিভিন্ন অপকর্ম করে চালিয়ে যাচ্ছে প্রকাশ্যে । তারা এইখানে চিহ্নিত সন্ত্রাস ও মাদক কারবারি হিসাবে পরিচিত।তাদের বিরুদ্ধে আদালতে দেশের প্রত্যেক অপরাধের ধারায় মামলা রয়েছে। তারপরও তারা বহাল তবিয়াতে এসব কর্মকান্ড করে বেড়াচ্ছে। এসবের পিছনে কিছু স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যাক্তিও জড়িত রয়েছে। ২০২২ সালে তাদের আস্তানায় প্রশাসন যৌথ অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান অস্ত্র উদ্ধার করছিল। এখনো তাদের গ্রেফতারপুর্বক অভিযান পরিচালনা করলে বিপুল পরিমান দেশি বিদেশী অস্ত্র মিলতে পারে।