প্রয়োজন দেখিয়ে দ্বিগুন তেল নিয়ে সস্তায় বিক্রি: মাসে লাখ লাখ টাকা আয় আরিফের!

  • এনজিও ফোরামে যোগসাজশে চলছে হরিলুট 

দায় এড়াচ্ছেন প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর, “জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস তাঁর”

———————————

এম ফেরদৌস, উখিয়া :

সংবাদ প্রকাশ করে পেটে লাথি না মারার অনুরোধে অভিযুক্ত আরিফের!

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত এনজিও ফোরাম’ ওয়াশ প্রজেক্ট এ চলছে যোগসাজশে হরিলুট। ডোনারদের চাহিদা দেখিয়ে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাজের সম্পদ মেরে দিচ্ছেন এনজিও ফোরামের কর্মকর্তারা। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে ‘এনজিও ফোরাম’ ওয়াশ প্রকল্পে দায়িত্বরত প্রকৌশলী আরিফের বিরুদ্ধে।

জানা যায়, মায়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সহায়তায় কাজ করছে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো। তাদের মধ্যে এনজিও ফোরাম নামের একটি সংস্থা কাজ করছে বিভিন্ন ক্যাম্পে।

এনজিওটির কয়েকটি প্রজেক্টের মধ্যে বেশিরভাগই কাজ করছে ক্যাম্পে ওয়াটার, স্যানিটেশন ও হাইজিন প্রকল্প বা ওয়াশ প্রকল্প নিয়ে।

এই ওয়াশ প্রকল্পের কর্মকান্ড পুরো ক্যাম্প জুড়ে নিরাপদ পানি সাপ্লাই দেয়ার জন্য এবং স্যানিটেশন বা স্বাস্থ্যব্যবস্থা চলমান রাখতে ব্যবহৃত হচ্ছে বিভিন্ন বিদ্যুৎ চালিত মোটর এবং বিদ্যুৎতের বিকল্প তেলের জেনারেটর।

বিদ্যুৎ না থাকলেই এসব মোটর ও বৈদ্যুতিক মেশিন সক্রিয় রাখতে ব্যবহার করতে হয় অকটেন তেলের জেনারেটর। এসব কাজ সম্পাদনা করার দায়িত্ব পালন করেন এনজিও ফোরামের এসিস্ট্যান্ট ইন্জিনিয়ার আরিফ।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, প্রকৌশলী আরিফ বিদ্যুৎ না থাকার অজুহাত ব্যবহার করে বেশি পরিমান অকটেন তেলের চাহিদা দেখিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় দ্বিগুন তেল সংগ্রহ করে নিতেন ডোনার থেকে। এসব প্রসেসিং এ কাজ করতো উর্ধতন কর্মকর্তারাও।

সেই অকটেন তেল সংশ্লিষ্ট কাজে আংশিক ব্যবহার করে অবশিষ্ট তেল জমা করে ১দিন পর পর ১০০/১৫০ লিটার করে উখিয়ার বিভিন্ন তেলের দোকানে বিক্রি করে দিতেন। সপ্তাহে ৮শ বা ৯শ লিটার মতো হতো।

গত ৬ মাস যাবৎ এনজিও ফোরামে দায়িত্বরত আরিফসহ অন্যান্যরা যোগসাজশে এই তেলের কারচুপি করে গেছেন একটি টমটম ড্রাইভারের মাধ্যমে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উখিয়ার এক ব্যবসায়ী জানান, আরিফ নামে এক এনজিও কর্মকর্তা প্রতি সপ্তাহে আমাদেরকে ৮শ থেকে ১ হাজার লিটার তেল বিক্রি করতেন। সে সপ্তাহে ১ লক্ষ টাকা করে ক্যাশ টাকা বুঝে নিতেন। মাঝে মধ্যে একটা ড্রাইভার এসে টাকা নিয়ে যেতো।

সরকারি অনুমোদিত কোন প্রতিষ্ঠান থেকে তেল না কিনে চোরা তেল কেন নিতেন এমন প্রশ্নের উত্তরে এই ব্যবসায়ী জানায়, সরকারি অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানে তো সরকারি বাজার মূল্যে দিয়ে নিতে হবে। এখন তো বাজার মূল্য থেকে প্রতি লিটারে ২৫ টাকা কম দামে পাচ্ছি। এরকম সস্তা পেলে আমি না কিনলেও তো অন্য কেউ কিনে নিতো।

অভিযুক্ত অরিফের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, চাকরীতে টুকটাক ভুল থাকতেই পারে। আপনারা সংবাদ প্রকাশ করে আমার পেঠে লাথি মারিয়েন না। তাছাড়া আমার আওয়াতাধীন প্রজেক্টটি শেষ হয়েছে। আমার এখন চাকরী নাই। আমি বাড়িতে চলে আসছি।

অভিযুক্ত আরিফের এমন কথা শুনে তার চাকরি আছে কি নাই সত্যত্য নিশ্চিত করতে কুতুপালং এনজিও ফোরামের ক্যাম্প ফোকাল আবিদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, প্রজেক্টটি ডিসেম্বর পর্যন্ত রয়েছে এবং আরিফের চাকরিও আছে। তবে সে একদিনের ছুটি নিয়ে বাড়িতে গেছিলেন।

এ ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত আরিফের উর্ধতন কর্মকর্তা প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর আবু রাফাত সিদ্দিকি’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তেল চুরির অভিযোগ কখনো শুনেননি বলে জানান।

অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত কমিটি করে সত্যতা পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি ।

প্রজেক্ট শেষ এবং আরিফের চাকরি নাই এমন কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আরিফের চাকরি আছে, প্রজেক্টটিও ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকবে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি।