উখিয়ায় চাঁদাবাজিতে যুবদল, যুব-শ্রমিকলীগ নেতা!

নিজস্ব প্রতিবেদক :


উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনারপাড়া এলাকায় যুবদল, যুবলীগ এবং শ্রমিকলীগ নেতার বিরুদ্ধে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তারা হলেন, জালিয়াপালং ইউনিয়ন উত্তর শাখা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি জসিম উদ্দিন, শ্রমিকলীগ নেতা মোহাম্মদ হাসেম এবং যুবলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম সাগর।

এরা রাজনীতিতে বিপরীতমুখী অবস্থানে থাকলেও মিলেমিশে চাঁদাবাজি করছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভুগীরা।

জানা যায়, ২০০৬ সালে তৎকালীন ইউএনও শামীম আল রাজী সোনারপাড়া বাজারের যানযট নিরসনের লক্ষে উখিয়া উপজেলার পাঁচ চেয়ারম্যানকে সাথে নিয়ে রেজুলেশনের মাধ্যমে সুশৃঙ্খলভাবে গাড়ি পার্কিং এবং যানযট মুক্ত রাখার জন্য কোটবাজার সিএনজি সমিতি (যার রেজিষ্ট্রেশন নং:১২৩২) কে দায়িত্ব অর্পণ করেন। এরপর থেকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই তা পরিচালিত হয়ে আসছে। কিন্তু ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে যুবলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম দলীয় প্রভাব দেখিয়ে জোরপূর্বক ভাবে নিজেকে শ্রমিকদের নেতা বানানোর আশায় সোনারপাড়া সিএনজি ও টমটম পার্কিং দখল করে নেয়।

এসময় তিনি কোটবাজার সিএনজি সমিতির অধীনে লাইন পরিচালনা করা লাইন ম্যানদের উপর বর্বর হামলা চালিয়ে সোনারপাড়া স্টেশন থেকে তাড়িয়ে দেন। পরবর্তীতে সাইফুলের সাথে যোগ দেন শ্রমিকলীগ নেতা হাসেম।

এরপর থেকে সাইফুল ও হাসেমের নেতৃত্বে শুরু হয় চাঁদাবাজী। তারা যুবলীগ ও শ্রমিকলীগের প্রভাব দেখিয়ে লুটতরাজ শুরু করে দেন। তাদের নির্যাতনে ওই সময়ে কেউ মুখ খোলারও সাহস পাইনি।

কফিল উদ্দিন নামের এক ড্রাইভার অভিযোগ করে বলেন, সাইফুল ও হাসেম লাইন পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আমাদের উপর শুরু হয় নির্যাতন। তারা দৈনিক প্রতি গাড়ি থেকে ৫০ টাকা করে চাঁদা নেওয়ার পাশাপাশি মাস শেষে ৩ হাজার টাকা নেওয়া শুরু করে। এতে যে ড্রাইভার টাকা দিতে অপারগতা দেখাতো ওইদিন তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে চালানো হতো নির্যাতন।

কিন্তু কোটবাজার সমিতির দায়িত্বে যারা ছিলেন তারা মাস শেষে টাকা না নিলেও দৈনিক নিতো ১০ টাকা। যা আমাদের জন্য সমস্যা হতো না এবং আমরা খুশিমনে দিতাম।

উসমান নামের এক ড্রাইভার বলেন, ছাত্রজনতা আন্দোলন এবং আমাদের শিক্ষার্থী ভাইদের রক্তের বিনিময়ে নতুন দেশ পাওয়াতে ভেবেছিলাম সাইফুল ও হাসেম সিন্ডিকেটের হাতে থেকে রক্ষা পেয়ে গেছি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ৫ই আগস্টের পরে বিএনপির পরিচয় দিয়ে আমাদের উপর জুলুমে নামেন জালিয়াপালং উত্তর শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি জসিম উদ্দিন।

তিনি যুব ও শ্রমিকলীগ নেতার সাথে আঁতাত করে আরও ভয়ংকর হয়ে শুরু করেন শ্রমিকদের রক্তশোষণ।

বেলাল উদ্দিন নামের এক ড্রাইভার অভিযোগ করে বলেন, জসিম যুবদলের প্রভাব কাটিয়ে পার্কিংয়ে ভর্তির নামে চারশো সিএনজি এবং তিনশো টমটম গাড়ি থেকে জোরপূর্বক ৬ হাজার টাকা করে নেওয়া শুরু করে দেন।

এছাড়া একাধিক ইজিবাইক ও সিএনজি চালক অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা চাঁদা দিতে না চাইলে তারা লাঠি নিয়ে কখনো গাড়ির গ্লাস ভাঙে আবার কখনো-বা মারতে আসে আর অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। সারা দিন যতবার গাড়ি বের করা হয়, ততবারই এই চাঁদা দিতে হয়। এভাবে চাঁদাবাজি চললে আমরা এর বিচার চাইব কোথায়’?

তাই এ চাঁদাবাজি বন্ধ করে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন কোটবাজার,সোনার পাড়া সিএনজি ও টমটম গাড়ির শ্রমিকরা।

কোটবাজার সিএনজি সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাফর আলম মেম্বার বলেন, তৎকালীন সময়ে আমাদেরকে বিএনপির দালাল আখ্যায়িত করে তারা আ’লীগের ক্ষমতার প্রভাব কাটিয়ে অবৈধভাবে আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব কেড়ে নিয়ে শ্রমিকদের উপর যা ইচ্ছে তাই শোষণ শুরু করে।

কক্সবাজার জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জিসান উদ্দীন জিসানের কাছ থেকে জসিমের চাঁদাবাজির কথা জানতে চাইলে বলেন, যদি যুবদলের কোন সদস্য চাঁদাবাজি, মাদকের সাথে জড়িত প্রমান পাওয়া যায় তাহলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।

এ বিষয়ে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আরিফ হোসেন বলেন, কেউ যদি পরিবহন থেকে চাঁদাবাজি করে এমন তথ্য প্রমাণ পেলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে, সিএনজি ও টমটম ড্রাইভারদের থেকে চাঁদাবাজিসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত যুবদল নেতা জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে মানব পাচার, ইয়াবা, অন্যের জমি দখল করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া গেল ৫ই আগষ্টের পর প্রশাসনিক কার্যক্রম দূর্বল হয়ে পড়ার সুযোগে জসিম মায়ানমারে ট্রলার যোগে সোনার পাড়া রেডিয়েন্ট হ্যাচারির পশ্চিম পাশে অবস্থিত নৌকার ঘাঠ থেকে অকটেন, ডিজেল, পেট্রোল পাচার এবং ফিরতি ট্রলারে বাংলাদেশে নিয়ে আসছেন মরননেশা ইয়াবা ও আইস।

সূত্র জানিয়েছে, যুবদল নেতা জসিম সাগর পথে মায়ানমার থেকে ইয়াবা, আইস এনে বরিশাল, ঢাকা এবং চট্রগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে থাকেন। এতে তার নেতৃত্বে রয়েছে একটি বিশাল সিন্ডিকেট।