উখিয়ায় সরকারি প্রকল্পের অর্থ নয়ছয়!

ইমরান আল মাহমুদ, কক্সবাজার জার্নাল :


উখিয়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের আওতাধীন পাঁচটি কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সদস্যদের নাস্তা বাবদ বরাদ্দকৃত অর্থ নয়ছয় করে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকার সারাদেশে কিশোর কিশোরীদের চিত্তবিনোদন ও মনস্তাত্ত্বিক উন্নয়নের লক্ষ্য কিশোর কিশোরী ক্লাব স্থাপনের উদ্যোগ নিয়ে তা বাস্তবায়ন করছে।

উখিয়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে উপস্থিতি ও নাস্তার বরাদ্দ বিষয়ে তথ্য চাইলে মোছাম্মৎ হাবিবা জাহান স্বাক্ষরিত কাগজে প্রেরিত তথ্য থেকে জানা যায়,২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই ও আগস্ট এ দুই মাসে ক্লাবের সদস্যদের নাস্তা বাবদ সরকারিভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৭২হাজার টাকা(ভ্যাট ও আয়করসহ)।

বরাদ্দকৃত অর্থ ক্লাবের সদস্যদের নাস্তার জন্য ব্যয় করা হয় বলে লিখিত তথ্যে জানা যায়। এছাড়া ক্লাবের প্রত্যেক সদস্যের জন্য জনপ্রতি নাস্তা বাবদ বরাদ্দ রয়েছে ২৬টাকা হারে।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। গত ১৩ জুলাই থাইংখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কিশোর-কিশোরী ক্লাবের কার্যক্রমে ৩০জনের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ১১জন। উপস্থিত সদস্যদের দেওয়া হয় জনপ্রতি একটি কেক ও একটি কলা। যার বাজারমূল্য ১০-১২টাকা। গত ১৯ জুলাই শুক্রবার মরিচ্যাপালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন ১২জন। জনপ্রতি নাস্তা দেওয়া হয় একটি সিংগারা ও দুটি পিয়াজু। যার বাজারমূল্য ১০-১২টাকা। গত ১৩জুলাই থাইংখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্লাবের উপস্থিতি দেখানো হয় ২৭ জন। যা বাস্তবে উপস্থিতির সংখ্যা ছিলো ১১জন এবং জনপ্রতি নাস্তা দেওয়া হয় একটি কেক ও একটি কলা। যার বাজারমূল্য ১০-১২টাকা। ঐদিন ১৬জন অতিরিক্ত উপস্থিতি দেখিয়ে আত্মসাত করা হয়েছে নাস্তা বাবদ বরাদ্দকৃত ৪১৬টাকা। উপস্থিত সদস্যদের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত ২৬টাকার নাস্তার পরিবর্তে দেওয়া হয় ১০-১২টাকার নাস্তা। সেখান থেকেও আত্মসাত করা হয়েছে ১শ ৫৪টাকা।

অন্যদিকে, গত ১৯ জুলাই মরিচ্যাপালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাবের উপস্থিতি দেখানো হয় ২৫জন। জনপ্রতি নাস্তা দেওয়া হয় ১২টাকার। কিন্তু বাস্তবে উপস্থিত ছিলেন ১২জন সদস্য। হাজিরা খাতায় অতিরিক্ত ১৩জন উপস্থিতি দেখিয়ে ঐদিন আত্মসাত করা হয়েছে ৩শ ৩৮টাকা। উপস্থিত সদস্যদের নাস্তা বাবদ বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে আত্মসাত করা হয়েছে ১শ ৬৮ টাকা।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় কর্তৃক প্রেরিত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ১৩ জুলাই থাইংখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কিশোর-কিশোরী ক্লাবের ২৭ জন উপস্থিতির জন্য নাস্তা বাবদ খরচ দেখানো হয় ৭০২টাকা এবং ১৯ জুলাই মরিচ্যাপালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাবের ২৫জন উপস্থিত সদস্যদের নাস্তা বাবদ খরচ দেখানো হয় ৬৫০ টাকা। এ দুদিনের মোট ব্যয় দেখানো হয় ১হাজার ৩শ ৫২টাকা। যা প্রকৃতপক্ষে ব্যয় করা হয় ২শ ৫২টাকা। দুটি ক্লাবের দুদিনের নাস্তা খরচ ১হাজার ৩শ ৫২টাকা দেখিয়ে আত্মসাত করা হয়েছে ১হাজার ১শ টাকা।

প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে জেন্ডার প্রমোটর অন্তু চৌধুরী মুঠোফোনে জানান,”প্রত্যেক ক্লাবের আবৃত্তি শিক্ষক ও সঙ্গীত শিক্ষক যেদিন ক্লাস করাবেন সেদিন ৫০০টাকা হারে সম্মানি পাবেন। ক্লাবের সদস্যদের জনপ্রতি নাস্তা বাবদ অফিস থেকে ২০টাকা করে দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।”

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোছাম্মৎ হাবিবা জাহান স্বাক্ষরিত কাগজে প্রেরিত তথ্যে জানান,”জনপ্রতি নাস্তা বাবদ বরাদ্দ রয়েছে ২৬টাকা। এ বরাদ্দ শুধুমাত্র সদস্যদের নাস্তা বাবদ ব্যয় করা হয়।”
কিন্তু প্রকল্পের জেন্ডার প্রমোটর জানিয়েছেন তাদেরকে জনপ্রতি ২০টাকা করে নাস্তা বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয়। তাহলে বাকী ৬টাকা গেলো কোথায়? এটি নিয়ে ফের অনুসন্ধান শুরু হয়। বেরিয়ে আসে মিলেমিশে অর্থ আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর তথ্য। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী গত জুলাই ও আগস্ট দুইমাসে পাঁচটি ক্লাবে ক্লাস হয়েছে ৮০টি। সম্পন্ন হওয়া ক্লাসে উপস্থিত ছিলেন ১হাজার ৯শ ৯৬জন সদস্য।

ক্লাবের জেন্ডার প্রমোটর অন্তু চৌধুরীর নিকট জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে জানিয়েছিলেন প্রত্যেক সদস্যদের নাস্তা বাবদ অফিস থেকে ২০টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত প্রেরিত তথ্যে উল্লেখ করা হয় জনপ্রতি নাস্তা বাবদ বরাদ্দ ২৬টাকা করে।

মধ্যখানে ৬টাকা করে আত্মসাত করা হচ্ছে নিরবেই। যা গত জুলাই ও আগস্ট মাসে মোট ১হাজার ৯শ ৯৬জন উপস্থিতির নাস্তা বাবদ বরাদ্দ থেকে আত্নসাত করা হয়েছে ১১হাজার ৯শ ৭৬ টাকা।