প্রশাসনের রেডবুকে ‘বিতর্কিত’ এনজিও বিএনপিএস, কার্যক্রমে নজরদারি

নিজস্ব প্রতিবেদক :


বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস), রোহিঙ্গা মানবিক সহায়তা কর্মসূচিতে কাজ করা এই এনজিও বিব্রত করছে দাতা সংস্থা এবং প্রশাসনকে।

ক্যাম্প এলাকায় কার্যক্রম তদারকির প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের (আরআরআরসি) পক্ষ থেকে সংস্থাটির জন্য “সতর্কীকরণ” বার্তা দিয়ে দেয়া হয়েছে বিজ্ঞপ্তিও।

“উইম্যানস লিডারশীপ অন ইম্প্রুভিং পিস, সোসিও ইকোনমিক স্ট্যাবিলিটি এন্ড পার্টিসিপেশন ইন পাওয়ার করিডোর ইন কক্সবাজার ” শীর্ষক প্রকল্পটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জাতিসংঘের নারী বিষয়ক সংস্থা ইউএন উইমেনের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছে বিএনপিএস।

তথ্য এবং কারণ স্পষ্ট না করে এই প্রকল্পের স্থান (ক্যাম্প) পরিবর্তন করায় গত গত ২১ আগস্ট আরআরআরসির সিনিয়র সহকারী সচিব পরিমল কুমার সরকার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিএনপিএস এর কাছে চাওয়া হয় ব্যাখ্যা।

সংস্থাটির দেওয়া ব্যাখ্যার প্রেক্ষিতে নির্দেশনা ব্যতিরেকে অবহিত না করার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় ফিরতি চিঠিতে গত ২৯ আগস্ট বিএনপিএসকে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বনের জন্য নির্দেশ দেয় আরআরআরসি।

এবিষয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব পরিমল কুমার সরকার জানান, “ক্যাম্প পরিবর্তন করে অন্য ক্যাম্পে কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে পরিবর্তিত অনুমোদন গ্রহণে আরআরআরসিকে স্পষ্ট করা হয়নি। সরকারী নির্দেশনা পরিপন্থী এরুপ কর্মকান্ডের জন্য সংস্থাটির কার্যক্রমে “সতর্কীকরণ” বলবৎ করা হয়েছে।”

নারী অধিকার নিয়ে কাজ করলেও বিএনপিএসের হয়ে প্রকল্পটির সমন্বয়কারী (প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন একজন পুরুষ।

বিস্কুট ফ্যাক্টরির মান নিয়ন্ত্রণক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করা শফিকুল ইসলাম ফরাজী বর্তমানে পালন করছেন প্রকল্প সমন্বয়কারীর দায়িত্ব, যিনি আরআরআরসির কাছে তথ্য স্পষ্ট না করে মনগড়া প্রতিবেদন জমা দেন তার পরিচালিত প্রকল্প নিয়ে।

পতন হওয়া স্বৈরাচার সরকারের আমলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন দুর্নীতির কারণে বিতর্কিত একটি মেয়াদী প্রকল্পের জেলা ফ্যাসিলিটেটরের দায়িত্বে ছিলেন ফরাজী।

ঐ দায়িত্ব শেষে প্রযোজ্য অভিজ্ঞতা না থাকা স্বত্ত্বেও রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক চাকরিতে কালো ছায়া খ্যাত “স্বজনপ্রীতি ভিত্তিক সিন্ডিকেট” এর আর্শীবাদে প্রকল্প সমন্বয়কারীর মত গুরুত্বপূর্ণ পদ ভাগিয়ে নেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপিএসে কর্মরত তিন জনের অধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানিয়েছেন, ” ফরাজী তার ইচ্ছে মতো কার্যক্রম চালান সংস্থার উপরের মহল কে ম্যানেজ করে। তার স্বেচ্ছাচারিতায় অতিষ্ঠ কর্মরতরা।”

সম্প্রতি বিএনপিএসের সন্দেহজনক ও বিভ্রান্তিকর কার্যকলাপ প্রসঙ্গে জাতীয় দৈনিক সহ কক্সবাজারে স্থানীয় পর্যায়ের ডজনখানেক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় প্রতিবেদন।

প্রতিবেদন’কে কেন্দ্র করে প্রতিবাদলিপি দেন বিএনপিএস এর পরিচালক শাহনাজ বেগম সুমী৷

যেখানে তিনি সুস্পষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে সংবাদ প্রকাশ করা গণমাধ্যমগুলোর স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন, এবং প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে বিস্তারিত তথ্যের জন্য বিএনপিএস কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগের কথা বলে প্রকল্প সমন্বয়কারীর দায় এড়িয়ে যান তিনি।

যদিও প্রতিবেদন তৈরির সময় প্রকল্প সমন্বয়কারী ফরাজির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অসহযোগিতামূলক আচরণ করেন এবং বলেন, ”
বিষয়টি আমাদের আভ্যন্তরীণ, আপনি পেলেন কোত্থেকে?”।

কি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে সেটি জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে তিনি সেসময় বলেন, ” আরআরআরসি যা জানতে চেয়েছে, আমরা তা জানিয়েছি। বেশি কিছু জানার থাকলে কক্সবাজার অফিসে আসেন, সরাসরি কথা বলবো। ”

মুঠোফোনে বিষয়টি পরিস্কার না করে সাংবাদিক পরিচয় নিয়ে সন্দেহ করার পাশাপাশি বারবার অফিসে আসতে বলে কু-ইঙ্গিত করতে থাকেন তিনি।

কোন সংস্থা ক্যাম্পে কার্যক্রম পরিচালনায় প্রশাসনিক নির্দেশনা না মেনে সন্দেহমূলক কার্যক্রম চালালে সে সংস্থাকে সতর্ক করে করা হয় রেডবুক ভুক্ত। আরআরআরসি, নিয়োজিত গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ঐ সংস্থার কার্যক্রম বিশেষভাবে নজরদারি করে থাকে।

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ শামসুদ্দৌজা নয়ন জানান, ” ক্যাম্পের অভ্যন্তরে পরিচালিত যেকোনো সহযোগী সংস্থার কার্যক্রম আমরা নিয়মিত মনিটরিংয়ে রাখি। যদি কোনো অনিয়ম বা অভিযোগ পাওয়া যায় সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়।”

বিএনপিএসের দাতা সংস্থা ইউএন উইমেনের আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য না মিললেও জাতিসংঘের একটি সংস্থায় কর্মরত নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ” সহযোগী সংস্থা কোনো প্রকল্পের শর্ত না মানলে ছাড় নেই। ক্যাম্পে প্রশাসনিক কাঠামোর বাইরে গিয়ে কিছু করার সুযোগ নেই এবং করলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া নিয়ম আছে প্রশাসন এবং দাতা সংস্থা উভয়ের ক্ষেত্রে।”

আরও খবর