খাগড়াছড়িতে দিনে সংঘর্ষের পর রাতে কী হচ্ছে?

বাংলা ট্রিবিউন :

খাগড়াছড়িতে মো. মামুন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময়ে অগ্নিসংযোগে পুড়ে গেছে ৬০টি দোকান। বিষয়টি নিয়ে এখনও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে দীঘিনালায়।

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সারা দিন এসব ঘটনা ঘটার পর রাতেও উপজেলার কয়েকটি স্থানে দুর্বৃত্তরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সব স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে আছে। এর মধ্যেও কয়েকটি স্থানে যাতায়াত করতে গিয়ে রাতে দুর্বৃত্তদের বাধার মুখে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন কেউ কেউ। আবার এসব বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। তবে বড় ধরনের কোনও সংঘাতের খবর পাওয়া যায়নি।

পানছড়ির কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, রাত ১১টার দিকে পানছড়ি কলেজ গেট এলাকায় টহল দিতে গেলে দুর্বৃত্তদের বাধার মুখে পড়ে সেনাবাহিনীর টহল দল। এ ঘটনার ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে পোস্ট করে অজ্ঞাত যুবকরা পাহাড়ি বাসিন্দাদের কলেজ গেট এলাকায় জড়ো হওয়ার জন্য উসকানি দিয়ে আহ্বান জানায়। পাশাপাশি কলেজ গেট এলাকার পাশে অবস্থিত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়ের গেট ও গাড়ি ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তদের আরেক দল। দুর্বৃত্তরা নিজেদের পাহাড়ি দাবি করে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পাহাড়ি কয়েকজন বাসিন্দা।

রাত ১০টার দিকে খাগড়াছড়ি শহরের নারাণখাইয়া এলাকায় গোলাগুলির শব্দে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন এখানকার বাসিন্দা সুমন চাকমা।

দীঘিনালার কলেজ গেট এলাকার বাসিন্দা সুনয়ন চাকমা বলেন, দীঘিনালায় আমরা আতঙ্কে আছি। রাতে পাহাড়ি এই এলাকায় কী হচ্ছে, বা প্রকৃত ঘটনা কী ঘটছে, তা বোঝা যাচ্ছে না। পুরো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

দীঘিনালার লারমা স্কয়ার এলাকা সংলগ্ন বোয়ালখালী বাজারের ব্যবসায়ী শরীফ হোসেন বলেন, আমরা সবাই আতঙ্কে আছি। নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি। কেন আতঙ্কে আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাহাড়ের সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন এলাকায় হানা দিচ্ছে, স্থানীয়দের মারধর করছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি স্থানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে তারা। এ জন্যই আতঙ্কে আছি।

বোয়ালখালী বাজারের আরেক ব্যবসায়ী দিদারুল ইসলাম বলেন, কোনও কারণ ছাড়াই একটি পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ছাত্রদের ওপর হামলা চালালে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সূত্রপাত হয়। বাড়িঘর ও দোকানপাটে আগুন দেওয়া হয়। এখন সন্ত্রাসীরা যাকে যেখানে পাচ্ছে মারধর করছে। তবে সাধারণ পাহাড়িরা এসব ঘটনায় জড়িত নয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের সভাপতি মো. লোকমান হোসেন বলেন, এসব ঘটনার জন্য পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়ী। চোর সন্দেহে মামুনের হাত পা বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করেছিল পাহাড়ি কয়েকজন যুবক। হত্যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় তারা। সেই সঙ্গে উসকানি দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে তারা। এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে সেখানেও হামলা করেছে। হামলায় অন্তত ১০ জন ছাত্র আহত হয়েছে। এখন নিজেরাই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, স্থানীয় মানুষকে হয়রানি করছে। এসব বন্ধ করা জরুরি।

জেলার বাঙালি পরিষদের নেতা আবদুল মজিদ বলেন, আমাদের মেরে ফেললে আমরা প্রতিবাদও করতে পারবো না। এ কোন সমাজে বসবাস করছি?

দীঘিনালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল হক বলেন, অবশ্যই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

এসব ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি জেলার মুখপাত্র নিরন চাকমা বলেন, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি আমরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মামুনকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন দীঘিনালা সরকারি কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সমাবেশের একপর্যায়ে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ওপর কয়েক রাউন্ড গুলিও ছুড়েছে তারা। একপর্যায়ে সেনাবাহিনী ও স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে অবস্থান নিলে উপজেলার লারমা স্কয়ারসংলগ্ন পাহাড়ি ও বাঙালিদের মিশ্রিত দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আগুন লাগিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, ‘পাহাড়িদের সঙ্গে বাঙালিদের উসকে দিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল একটি পক্ষ। সেখান থেকেই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ সুযোগে দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।’