- * ক্ষমতার দাপুটে চোরাই কারবারির প্রধান
- * করে দিয়েছে রোহিঙ্গাদের এনআইড়ি
- * রয়েছে হত্যা ও এনআইডি জালিয়াতি মামলা
এম ফেরদৌস – উখিয়া :
ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাধে দাপুটে দুই ক্ষমতাকে পুঁজি করে জাহাঙ্গীর আজিজ সীমান্তঘেষা ইউনিয়ন ঘুমধুমে তাঁর অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কাছে অসহায় করে তুলেন পুরো ইউনিয়নবাসীকে।
অন্যের জমি দখল, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অনিয়ম-দুর্নীতি, সীমান্ত চোরাই পন্য সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণসহ অসংখ্য অপরাধ জগতে নিজেকে জড়িয়ে কায়েম করেন ত্রাসের রাজত্ব। তাঁর হাত ধরেই ঘুমধুম সীমান্তের সকল অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা হতো।
অবৈধ চোরাই গরু-মহিষের ব্যবসা,প্রত্যায়ন বাণিজ্য, দখল বাণিজ্য, রোহিঙ্গা ভোটার, হত্যাকান্ডের মতো বর্বরতার ঘটনা, সীমান্ত চোরাই বানিজ্য সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণসহ পাহাড়সম অভিযোগ নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি এই জাহাঙ্গীর আজিজের বিরুদ্ধে।
জানা যায়, ২০১৪ ও ২০১৯ সালের দুই ইউপি নির্বাচনে প্রশাসন ও আওয়ামীলীগের ক্ষমতার অপ-ব্যবহার করে জাহাঙ্গীর আজিজ নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট কারচুপির মাধ্যমে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সেই থেকে তিনি জড়িয়ে পড়েন নানান অপরাধ কর্মকান্ডে। মুখ খুলার সাহস ছিল না কারো। সম্প্রতি আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর তার বিরুদ্ধে অনেকেই মুখ খুলছেন। উঠে আসছে ভয়ংকর তথ্যও।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, তিনি স্বৈরাচার সরকারের আমলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে একের পর এক দেশদ্রোহী ও অবৈধ কর্মকান্ডে নিজেকে জড়িয়ে গড়ে তুলেন অপরাধ জগতের বিশাল সিন্ডিকেট। মায়ানমার ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিকটবর্তী ইউনিয়ন হওয়ায় টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের জাতীয়তা সনদ প্রদান, পাসপোর্ট প্রত্যায়ন, জন্মনিবন্ধন সনদসহ ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সনদের সুযোগ সুবিধা করে দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।
শুধু তাই নই, অসংখ্য রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশী এনআইডি বানিয়ে দিতে উপজেলা নির্বাচন অফিসে কন্ট্রাক্ট করে পকেটে ভরেছেন লাখ লাখ টাকা। এসব বিষয় নিয়ে ঘুমধুমের এক ব্যাক্তি বাদী হয়ে মামলাও দায়ের করেন এই আওয়ামীলীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজের বিরুদ্ধে। যার মামলা নং সি আর ২৪/২১। এ মামলার তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় এই আওয়ামীলীগ নেতা ও চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজের বিরুদ্ধে সিআইডি বান্দরবান বিজ্ঞ আদালতে অপরাধী চিহ্নিত করে চার্জশীট প্রদান করেন।
এ অনুসন্ধানে আরো উঠে এসেছে, আওয়ামীলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আজিজ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সরকারি লীজ প্লটের নামে স্থানীয় অসংখ্য মানুষের দীর্ঘ দিনের ভোগ দখলীয় বসত ভিটা ও খাস জমি জোর পুর্বক দখল করে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিক্রি করে নিঃস্ব করে দিয়েছেন অনেক পরিবারকে। বিনিময়ে তিনি কামিয়েছেন মোটা অর্থ অন্যদিকে আওয়ামিলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের হয়ে উঠেন আস্থাভাজন। সেই কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে দৃশ্যমান ছিলেন বাহাউদ্দীন নাসিমের নাম।
সেই সুযোগে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির পদটিও ভাগিয়ে নেন জাহাঙ্গীর আজিজ। চেয়ারম্যান ও সভাপতি দুই ক্ষমতার দাপুটে মায়ানমার থেকে রাজঁস্ব ফাঁকি দিয়ে চোরাই পথে হাজার হাজার গরু-মহিষ এনে তুমব্রু গরু বাজারের ইজারাদারের মাধ্যমে গরুর রশিদ বানিয়ে মায়ানমারের গরু সারা দেশে পাচার করতো তার নিয়ন্ত্রিত একটি সিন্ডিকেট।
সেই সিন্ডিকেট মায়ানমার থেকে চোরাই পথে আনা গরু-মহিষের পাশাপাশি মরন নেশা ইয়াবা, আইস,বিভিন্ন আইটেমের বিদেশী মদ এমনকি স্বর্ণের চালানও এপারে এনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার করতো তারা।
সিন্ডিকেট প্রধান চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ হলেও সেখানে দৃশ্যমানভাবে নেতৃত্ব দিতেন ,চেয়ারম্যানের ভাই বারেক আজিজ, ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নুর হোছন প্রকাশ (কালা নুরুছন), রেজাউল করিম সহ অনেকেই।
ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যানের ক্ষমতা বলে এসব চোরাই কারবারি ও অবৈধ উপায়ে সকলেই হয়ে যায় কোটিপতি।
এর মধ্যে সিন্ডিকেট প্রধান চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ অবৈধ টাকায় বানিয়েছেন দুই কোটি টাকায় আলিশান বাড়ী। তুমব্রু বাজারে মার্কেট, বান্দরবান ও কক্সবাজারে জমি ক্রয় সহ বেশ কয়েকটি দামী গাড়ীর মালিকও বনে যান তিনি ।
এ ছাড়া বাইশপারী এলাকায় সাধারন মানুষের জমি জোর পুর্বক দখল করে গড়েছেন প্রায় ৫০ একরের বাগানাবড়ী। অন্যদিকে পাহাড়পাড়া এলাকায় দীর্ঘদিনের খেলার মাঠটি ও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তুলে দিয়েছেন একটি সংস্থার হাতে। সাধারণ জনগন অভিযোগ করলেও ক্ষমতার দাপট ও ভয় ভীতি দেখিয়ে পরিস্থিতি চুপচাপ করে যাবতীয় অভিযোগ সামাল দিয়ে থাকতেন তিনি।
সম্প্রতি ঘুমধুমে জায়গা-জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজের নেতৃত্বে দখল-বেদখল নিয়ে তমুল সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সে ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান কর্তৃক রতন বড়ুয়া নামে এক সংখ্যা লঘুকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়।
এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যানসহ প্রকৃত খুনিদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন নিহতের পিতা। যার মামলা নং জিএর ৪৮/২৪। এ মামলা থেকে আপোষ দিতে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বাদীকে ক্ষমতার প্রভাব কাটিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি ও বল প্রয়োগ করতে থাকে। বাদীকে এক পর্যায়ে জিম্মি করে আদালতে ধরে নিয়ে গিয়ে তিনি অপরাধী নই মর্মে অঙ্গিকারনামা দাখিল করতে বাধ্য করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে, আলোচিত রতন বড়ুয়া হত্যাকান্ডের ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে। তার ইন্ধনেই জমি নিয়া এত বড় ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। সে চাইলে উভয়পক্ষকে শান্তনা দিয়ে বিচারিক কাজের মাধ্যমে দ্বন্দ্ব নিষ্পত্তি করা যেতো। তিনি সেটা না করে উলটা দাঙ্গা হাঙ্গামায় লেলিয়ে দিয়েছেন উভয়পক্ষকে।
অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আজিজের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়েও সংযোগ না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যাক্তি জানায়, চেয়ারম্যান সাহেব আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন অনেক অন্যায় অবিচার করেছে মানুষের সাথে। স্বৈরাচার সরকারের পতন হলেও এই আওয়ামীলীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান এখনো বহাল তবিয়াতে। সকলকে ম্যানেজ করে ঠিকিয়ে রাখছেন ইউপি চেয়ারম্যানের পদটি।
নাইক্ষ্যংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল মান্নান জানান, ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ রতন বড়ুয়া হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামী। বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করার সুযোগ নেই। এনআইডি জালিয়াতি মামলার বিষয়ে সিআইডি আদলতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। আদালত থেকে নির্দেশনা আসলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ জাকারিয়া জানান, ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজের বিরুদ্ধে এনআইড়ি জালিয়াতি ও হত্যা মামলা রয়েছে বলে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আদালত বা ডিসি মহোদয় থেকে নির্দেশনা পেলেই তার বিরুদ্ধে জনপ্রতিনিধিত্ব বা অপরাধ দমনে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-