নিজস্ব প্রতিবেদক :
নিজের উপজেলায় চাকরির সুবাধে অনিয়ম-দুর্নীতি করার অভিযোগ উঠেছে উখিয়া উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা আলী আহমদ প্রকাশ আলী আহমদ অনিকের বিরুদ্ধে।
বেতন ভাতা, পেনশন সহ সরকারি সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিল উত্তোলন সংক্রান্ত প্রয়োজনে গুনতে হয় টাকা, অভিযোগ উঠেছে অনৈতিক সুবিধা ছাড়া কোন ফাইল ছাড় করেন না তিনি।
চাহিদা পূরণ না করলে আপত্তি দাখিল অথবা বিল আটকে রাখা সহ নানা ভাবে হয়রানি করা হয় ভুক্তভোগীদের, একপ্রকার যাদের জিম্মি করে রেখেছেন নবম গ্রেডের এই কর্মকর্তা (নন ক্যাডার)।
এএন্ডএও ( অডিট এন্ড একাউন্টস অফিসার) পদে ২০২১ সালে পদোন্নতি পান আলী আহমদ। এর আগে, ২০০৪ সালের ৮ই নভেম্বর অডিটর হিসেবে যোগদান করে ২০১৮ তে পদোন্নতি নিয়ে ছিলেন এসএস সুপারিন্টেন্ডেন্ট।
তবে উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা (ইউএও) হিসেবে ২০১৯ সালের ২১ জুলাই উখিয়ায় যোগদান করেন তিনি। আলী আহমদের পৈতৃক নিবাস উখিয়ার রত্মাপালং ইউনিয়নে এবং রাজাপালং ইউনিয়নে তাঁর শশুড়বাড়ি।
১৯৯৪ সালে উখিয়া বহুমুখী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশের পর উচ্চ শিক্ষার জন্য চট্টগ্রামে চলে যান তিনি, পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে যোগ দেন সরকারি চাকরিতে।
অভিযোগ আছে, তদবিরের মাধ্যমে নিজ উপজেলায় হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা হয়ে আসেন তিনি। স্থানীয় হওয়ার কারণে ভয়ভীতি প্রদর্শন করায় তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পান না কেউ, নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে কাজের চেয়ে বেশিরভাগ সময়ই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে দেখা যায় তাকে।
উখিয়ায় যোগদানের দ্বিতীয় বছরেই ২০২১ সালে তাকে বদলির প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছিলো উপজেলা পরিষদের এক মাসিকসভায়, অদৃশ্য কারণে যা কার্যকর না হওয়ায় পাঁচ বছর ধরে স্বপদে বহাল থেকে তিনি নিজ দপ্তরকে পরিণত করেছেন দুর্নীতির আখড়ায়।
অনুসন্ধানে উঠে আসা ঐ সভার নথি বলছে, নিজ বাড়ি উখিয়া উপজেলাতে হওয়ায় বিভিন্ন সময় দাপট দেখিয়ে তিনি দুর্ব্যবহার করেন।
এছাড়াও উঠেছিলো হয়রানির পাশাপাশি সরকারি বিল ছাড়ে অসহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মকান্ডে ব্যাঘাত ঘটানোর মতো গুরুতর অভিযোগ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রশাসনের অন্য একটি গুরত্বপূর্ণ দপ্তরের কর্মকর্তা জানান, ” অর্থনৈতিক কারণে প্রশাসনের কাঠামোতে উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা’র গুরুত্ব অপরিসীম। অথচ এখানে বাড়ি হওয়ায় তিনি দাপট দেখিয়ে সেই গুরুত্বের অপব্যবহার করছেন, তার কারণে দুটি প্রকল্পের অর্থ হারিয়েছি।”
উখিয়ায় মুল দায়িত্বের পাশাপাশি রামু এবং টেকনাফে বিভিন্ন সময়ে তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছেন, সেখানেও অভিযোগের অন্ত ছিলো না তার বিরুদ্ধে।
২০২২ সালে টেকনাফে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের সময় অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে সেই দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেওয়া হয় বলে মুঠোফোনে প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন তৎকালীন টেকনাফের ইউএনও পারভেজ চৌধুরী।
বর্তমানে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা ৩০তম বিসিএস এর এই কর্মকর্তা জানান, ” উৎকোচ ছাড়া কাজ করতেন না তিনি, অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় তাকে টেকনাফ থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছিলো। ”
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেন বলেন, ” হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার বাড়ি এখানে বলে শুনেছি, তবে তার বিরুদ্ধে সুর্নিদিষ্ট কোন অভিযোগ থাকলে সে অনুযায়ী তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অভিযোগ প্রসঙ্গে আলী আহমদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ছুটিতে আছেন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-