আলোচনায় কক্সবাজার জেলা আ’লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি : উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় নেতা কর্মীরা

বিশেষ প্রতিবেদক :

উৎসবমুখর পরিবেশে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে ২০২২ সালের ১৩ই ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছিল কাউন্সিল ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন।

নানা নাটকীয়তা, প্রতিবন্ধকতা ও উত্তেজনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে কেবল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।

সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার প্রায় ২ বছর ৭ মাস পার হতে চললেও এখনো হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। কবে কমিটি হবে তারও কোন স্পষ্ট খবর নেই।

সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রের সাথে কথা বলে জানা গেছে সম্প্রতি চূড়ান্ত অনুমোদন হওয়ার মূহুর্তেই আবারো ঝুলে গেলো কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাংগ কমিটি ঘোষণা।

গত সপ্তাহে জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল শীর্ষ নেতারা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে আলাদাভাবে সাক্ষাৎ করেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সাথে।

অনেক নেতা এ সাক্ষাৎ কে স্রেফ সৌজন্য সাক্ষাৎ বলে চালিয়ে দিতে চেষ্টা করলে ও তা শুধুই সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিলো না বলে অভিমত দলীয় অগুণিত নেতা- কর্মী ও রাজনৈতিক সচেতন মহলের।

২০২২ সালের ১৩ই ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়া জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কোনো কাউন্সিল ছাড়া সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও মুজিবুর রহমান।

তাদের দু’জনের নেতৃত্বে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম ঢিলেঢালাভাবে চলে আসছিলো। এরমধ্যে কিছুদিন আগে অনুষ্ঠিত হয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন।

ওই নির্বাচনে ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও মুজিবুর রহমান দুইজনই চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। নির্বাচনে মুজিবুর রহমানের জামানত রক্ষা হয়। ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী চৌধুরী জামানত হারান।

তাদের এ পরাজয়ে তারা দু’জন তো বটেই এমন কী অনেকের কাছে দলের ভাবমূর্তি ও সংকটে পড়ে।

দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।

এমন অবস্থায় সময়কে কাজে লাগিয়ে দলের একটি প্রভাবশালী পক্ষ ফরিদ-মুজিবকে মাইনাস করে জেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটি গঠন করার জন্য তৎপর হয়।

এমন কিছু আঁচ করতে পেরে ফরিদ-মুজিব ও তাদের অনুসারী নেতা-সংগঠকদের নিয়ে কোমর বেঁধে মাঠে নামে।

তাদের লক্ষ্য একটিই- ফরিদ-মুজিবের নেতৃত্বে জেলা আওয়ামী লীগের ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাংগ কমিটির অনুমোদন।

দলীয় একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ফরিদ- মুজিব বলয়ের বাহিরের নেতারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তৎপর হওয়ায় কিছুটা হলে ও ধাক্কা খেয়েছে ফরিদ-মুজিব।

এখন একচেটিয়াভাবে তাদের অনুসারীদের নিয়ে এক পক্ষীয় কমিটি অনুমোদন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

আগামীতে জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাংগ কমিটি হবে ফরিদ-মুজিব অনুসারী নেতা এবং তাদের আপাতত বিপক্ষ স্রোতের নেতাদের সমন্বয়ে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে ভারসাম্যপূর্ণ একটি কমিটি হবে জেলা আওয়ামী লীগের।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি খসড়া কমিটির তালিকা নিজের স্বাক্ষর করে কক্সবাজার জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন তৈরি করেছেন।

তিনি ওই তালিকাটি কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফকে হস্তান্তর করে লন্ডনে গেছেন।

মাহবুব উল হানিফ ওই তালিকা যাছাই-বাছাই করে জমা দিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এর কাছে।

বর্তমানে ওবায়দুল কাদের ওই ৭৫ জনের তালিকাটি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ এবং যাছাই-বাছাই করছেন।

তিনি চূড়ান্ত করার পর তালিকাটি দলীয় প্রধানের কাছে দেওয়া হবে চূড়ান্ত সম্মতির জন্য।

বর্তমানে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী চীনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে দেশে অবস্থান করছেন।

সারাদেশে কোটা বিরোধী আন্দোলন এবং পাবলিক (সরকারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ধর্মঘটজনিত কারণে ওবায়দুল কাদেরসহ দলের দায়িত্বশীল শীর্ষনেতারা ব্যস্ত রয়েছেন।

তাই কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাংগ কমিটি ঘোষণা কয়েকদিন বিলম্বিত হতে পারে- এমন মন্তব্য অনেকের।

সর্বশেষ খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, নতুন কমিটিতে প্রায় ৩০ জন নতুন মুখকে দেখা যাবে। বিদায়ী কমিটির অনেকেই সংগত কারণে বাদ পড়ছেন। তাই কমিটি ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত পদপ্রত্যাশী অনেকেই দিন পার করছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ১৩ই ডিসেম্বর কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী সভাপতি ও মুজিবুর রহমানকে জেলার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর শুরু হয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের। সময়ক্ষেপনরে পরও কেন্দ্রে তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটিও জমা দেন।

কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটির প্রস্তাব কেন্দে গেলে তৃণমূল থেকে তা নিয়ে নানা অভিযোগ ওঠে। পদ বঞ্চিতরা প্রস্তাবিত কমিটিতে থাকা বিতর্কিতদের আমলনামা কেন্দ্রে পাঠান। স্বজনপ্রীতি, ত্যাগী ও যোগ্যদের বঞ্চিত করার অভিযোগ করেন তারা।

এ পরিপ্র্রেক্ষিতে কেন্দ্র কমিটি ছেঁকে পূণরায় একটি ভারসাম্য তালিকা’ তৈরি করে। কিছু দিনের মধ্যেই জেলা কমিটির অনুমোদন ও ঘোষণার আশা করছেন নেতা কর্মীরা।