মেসির কোলের এই শিশুটিই আজকের ইয়ামাল

স্পোর্টস ডেস্ক :

কখনও প্লাস্টিকের বাথটবে এক বাচ্চাকে দেখে হাসছেন লিওনেল মেসি। কখনও সেই বাচ্চাকে কোলে তুলে নিয়েছেন আর্জেন্টিনার মহাতারকা। এই সকল ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। লিওনেল মেসি তখন ২০ বছরের তরুণ। আর ওই বাচ্চার বয়স মাত্র ছয় মাস। গত কয়েকদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ছবি ভাইরাল হতেই খোঁজ পড়ে মেসির কোলের ওই বাচ্চাটি কে?

বর্তমানে লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে কোপা আমেরিকায় ব্যস্ত। আর সেই বাচ্চাটি? বড় হয়েছে সেও। এবং সে দিনের সেই বাচ্চা খেলছে এবারের ইউরো কাপে। কে তিনি? নেটদুনিয়া বলছে, ওই বাচ্চাটি হল লামিনে ইয়ামাল। স্পেনের জার্সিতে যে ইউরো কাপে ফুল ফোটাচ্ছে। এবার প্রশ্ন, সত্যিই কি মেসির সঙ্গে ভাইরাল হওয়া ছবির ওই বাচ্চা কি লামিনে ইয়ামাল?

হ্যাঁ, মেসির সঙ্গে যে বাচ্চার ছবি ভাইরাল হয়েছে, সেটি লামিনে ইয়ামালের। সেই সময় মেসির লম্বা চুল ছিল। ছবিটি ১৭ বছর আগের। মেসি এখনও লাজুক। কিন্তু তখন মেসি আরও লাজুক ছিলেন। জোয়ান মনফোর্ট ওই ছবি তুলেছিলেন। মেসি প্রথমে ওই ফটোশুটের জন্য অত্যন্ত ইতস্তত করেছিলেন। কারণ তিনি জানিয়েছিলেন, এত ছোট বাচ্চা কী ভাবে সামলাতে হয় তা তিনি জানেন না। কে জানত ২০০৭ সালের ওই ছবি নিয়ে এখন এত আলোচনা হবে!

Yep, that’s a six-month old Lamine Yamal with a 20-year-old Lionel Messi at a photoshoot in the Camp Nou.

At least now we know where the teenager gets his powers from ????????#ESPFRA #EURO2024 pic.twitter.com/ZpHVlElUBO

— DW Sports (@dw_sports) July 9, 2024
ছবিটি তখন যিনি তুলেছিলেন, সেই আলোকচিত্রী জোয়ান মনফোর্ট সেদিনের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেছেন, ‘মেসির তখন ২০ বছর বয়স। খুবই লাজুক ছিল। হঠাৎ ওকে লকার রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে দেখে একটা পানিভর্তি বাথটাব। তার মধ্যে একটি শিশু। ও থতমত খেয়ে গিয়েছিল। বাচ্চাটাকে কী করে ধরবে প্রথমে বুঝতেই পারছিল না।’

মনফোর্ট জানিয়েছেন, বার্সেলোনার ঘরের মাঠ ন্যু ক্যাম্পে একটি ফটোশুটের সময় প্রথম শিশু ইয়ামালকে দেখেছিলেন মেসি। সেসময় পুরো দল নিয়ে এক অনুষ্ঠানে যাওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছিল বার্সেলোনা। সঙ্গে ছিলেন মেসি। তখনই এই ছবিটি তোলা হয়।

লামিনে ইয়ামালের বাবা গত সপ্তাহে ইন্সটাগ্রামে এই ছবিগুলো পোস্ট করেন, সঙ্গে লেখেন ‘দ্য বিগিনিং অব টু লেজেন্ডস’। অর্থাৎ, ‘দুই কিংবদন্তির যাত্রা শুরু।’

কে এই লামিনে ইয়ামাল?

কয়েক মাস আগেই বার্সেলোনা দলের সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে লা লিগায় খেলেছেন লামিনে ইয়ামাল। স্পেনের বাসিন্দা হলেও তার সম্পর্ক রয়েছে আফ্রিকার সাথেও, ইয়ামালের বাবা মরোক্কান এবং মা ইকুয়েটরিয়াল গিনির নাগরিক।

২০২২ সালে স্পেনের কিংবদন্তি জাভির চোখে পড়ে যান এই ক্ষুদে ফুটবলার, এরপর সিনিয়র দলের সাথে তাকে অনুশীলন শুরু করান জাভি। লামিন ইয়ামাল নিজের ফুটবল ক্যারিয়ারের শুরুতে ছিলেন পজিটিভ স্ট্রাইকার, কিন্তু বর্তমানে ডানপ্রান্তিক মিডিও বা উইঙ্গার হিসেবে খেলেন। ১৫ বছর ৯ মাস ১৬ দিন বয়সে বার্সলোনার জার্সিতে লা লিগায় রিয়াল বেতিসের বিপক্ষে মাঠে নেমে ক্লাবের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে সিনিয়র দলে খেলার নজির গড়েন তিনি।

লিওনেল মেসির সঙ্গে লামিন ইয়ামালের তুলনা করেছিলেন এলএমটেনের এক সময়ের সতীর্থ জাভি হার্নান্দেজ। বাবা মরোক্কান হওয়ায় এবং নিজে স্পেনের নাগরিক হওয়ায় লামিন ইয়ামাল চাইলে দুই দেশের হয়েই প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন, এছাড়াও ইকুয়েটরিয়াল গিনির হয়েও চাইলে খেলতে পারতেন তিনি। তবে তার বাবা এবং মায়ের দেশ, কোনোটিতেই তিনি খেলেননি। শেষ পর্যন্ত স্পেনের জার্সিতেই তিনি মাঠে নামেন। এরই মধ্যে, মাত্র ১৬ বছর বয়সে লামিনে ইয়ামাল স্পেন এবং বার্সেলোনা উভয়ের জন্যই একজন তারকা হয়ে উঠেছেন।

মেসির মতোই বার্সেলোনার অ্যাকাডেমি লা মাসিয়ায় ফুটবলে পায়ে খড়ি স্পেনের ১৬ বছরের উইঙ্গারের। স্পেনের অনূর্ধ্ব ১৫, ১৬, ১৭, ১৯ সব দলের হয়ে খেলেছেন। জাতীয় দলের হয়েও খেলে ফেললেন ১৩টি ম্যাচ।

Dear Gentle Reader,

Prepare your teacups and settle in, for Lady Whistledown has a veritable feast of gossip from the past day.

Euro 2024 Drama
Spain has booked their spot in the Euro 2024 final by knocking France out. The 16-year-old wonderkid, Yamal, scored a wonder goal that… pic.twitter.com/UPwddxTewS

— Lady Whistledown (@Lad7Whistledown) July 10, 2024

শুধু ভাল ফুটবলার নয়, ফুটবলের জাদুকর হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে ইয়ামালের মধ্যে। ইউরো সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে তার গোলই প্রমাণ। ম্যাচের বয়স তখন ২১ মিনিট। ফ্রান্সের বক্সের বাইরে বল পান ১৬ বছরের ফুটবলার। প্রতিপক্ষের দুই ডিফেন্ডারকে নাস্তানাবুদ করেই গোলের গন্ধ পেয়ে যান। তার বাঁ পায়ের বাঁক খাওয়ানো শট আটকাতে পারেননি ফ্রান্সের গোলরক্ষক মাইক মাইগানান। এই গোল করেই ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নিলেন ইয়ামাল। ইউরোর ইতিহাসে সর্বকনিষ্ট ফুটবলারের রেকর্ড গড়লেন তিনি। শুধু তাই নয়, ইউরো এবং বিশ্বকাপ মিলিয়ে সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে গোল করার পেলের রেকর্ড ভাঙেন তিনি।