চকরিয়ায় বনবিভাগের জমিতে অবৈধ বাণিজ্যিক স্থাপনা

স্টাফ রিপোর্টার, চকরিয়া :

চকরিয়ার মালুমঘাট বাজারটি দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে ইজারা দিয়ে আসছেন উপজেলা প্রশাসন। পাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব। বনবিভাগের জমিতে বাজার হলেও প্রতিনিয়ত অবৈধ স্থাপনা তৈরী করছে দখলবাজরা। প্রশাসনের একাধিকবার অভিযানের পরও বনভূমি দখল বন্ধ হচ্ছে না।

অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর ইজারা দেওয়া চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাট বাজারটি কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের ২নম্বর খতিয়ানের রেকর্ডভুক্ত বিএস ৬৫৯ নম্বর দাগের সম্পত্তি।

খতিয়ানে জায়গাটি জঙ্গল লেখা থাকলেও বর্তমানে দুইশত থেকে আড়াইশ ছোট-বড় অবৈধ স্থাপনা (দোকানপাট) বাজারের চারদিকে গড়ে উঠেছে। একইভাবে বর্তমানে দিশারী সমবায় সমিতির সঙ্গে চুক্তিতে সেখানে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন সিন্ডিকেট চক্রের লোকজন।

স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, মালুমঘাট স্টেশন এলাকার বাজারটি উপজেলা প্রশাসন থেকে বেশ কয়েকবছর ধরে ইজারার নেয়ার নামে একটি চক্র কৌশলে পাশের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বিপুল জায়গা দখলে নিয়ে সেখানে অবৈধভাবে বাণিজ্যিক স্থাপনা তৈরি করে চলছে। অবশ্য বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগ একাধিকবার অভিযান চালালেও থামানো যাচ্ছে না অবৈধ জবরদখল তৎপরতা।

বন মন্ত্রীর দপ্তরে জমা দেওয়া লিখিত অভিযোগে আবেদনকারী চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ডুমখালী এলাকার নুরুল আজমের ছেলে মোহাম্মদ সেলিম দাবি করেন, ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাট বাজারটি দীর্ঘ বছর ধরে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ইজারা দিয়ে আসছেন। এ সুযোগে স্থানীয় একটি চক্র সিন্ডিকেট করে প্রতিবছর চড়ামূল্যে বাজারটি ইজারা নিয়ে কৌশলে বাজার লাগোয়া স্থানীয় ফাঁসিয়াখালী বনরেঞ্জের অধীন সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বেসুমার জায়গা দখলে নিয়ে বিভিন্ন বনজ গাছ কেটে অবৈধভাবে বাণিজ্যিক স্থাপনা তৈরি করে যাচ্ছেন। পরে এসব বাণিজ্যিক স্থাপনা (দোকানপাট) সংশ্লিষ্টরা প্লট আকারে বিক্রি করে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

অন্যদিকে সরকারি আদেশে বাজারটি সপ্তাহে দুইদিন টোল আদায়ের নিয়ম থাকলেও সংশ্লিষ্ট ইজারাদার নীতিমালা লঙ্ঘন করে প্রতিদিন ব্যবসায়ীদের কাছ টোলের (হাছিল) টাকা লুটে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় লোকজন ও সাধারণ ব্যবসায়ীরা।

আবেদনকারী মোহাম্মদ সেলিম অভিযোগ করে বলেন, এভাবে বাজার ইজারার নামে বনভূমি জবরদখলে নিয়ে সেখানে অবৈধভাবে বাণিজ্যিক স্থাপনা তৈরির ঘটনাটি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে অভিযোগ করেও অধ্যবদি কোনধরনের প্রতিকার পাননি। এ অবস্থার কারণে ওই এলাকায় প্রতিনিয়ত যেমন বিপুল বনভূমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে, তেমনি পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হচ্ছে। এভাবে বনাঞ্চলের জায়গায় মালুমঘাট বাজারটি ইজারা দিতে থাকলে অদুর ভবিষ্যতে বনভুমির প্রকৃতি ধ্বংস হয়ে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটবে।

এই প্রেক্ষাপটে বাজারের বিষয়টি জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে মালুমঘাট এলাকায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জায়গায় বাজারটি ইজারা দেওয়া কার্যক্রম বাতিল চেয়ে বন ও পরিবেশ মন্ত্রী এবং প্রধান বনসংরক্ষকের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন আবেদনকারী মোহাম্মদ সেলিম।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, মালুমঘাট বাজারের জায়গাটি কক্সবাজার বনবিভাগের ২নম্বর খতিয়ানভুক্ত। বেশ কয়েকবছর ধরে স্থানীয় একটি চক্র বাজারটি ইজারা নিয়ে বনাঞ্চলের অনেক জায়গা দখলে নিয়ে সেখানে অবৈধ স্থাপনা তৈরি করেছে।

তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে অবশ্য আমরা ইতোপূর্বে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের দপ্তরে লিখিতভাবে জানিয়েছি। তবে এখনো কোন ধরনের সুফল পাওয়া যায়নি।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.ফখরুল ইসলাম বলেন, সরকারি বাজার কিংবা অন্য কোন সংস্থার জমিতে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কেউ অবৈধ স্থাপনা করতে পারেনা। আর জায়গা বনবিভাগের হলেও মালুমঘাট বাজারটি শুধু আজকে না, এটা সরকারিভাবে ইজারা দেওয়া হচ্ছে দীর্ঘ দেড়যুগের বেশি সময় ধরে।

তিনি বলেন, বাজারটি সৃষ্টির পর থেকে প্রতিবছরের আয়কৃত রাজস্ব সরকারের কোষাগারে জমা হচ্ছে। তাই আগের নিয়মে বাজারটি ইজারা দেওয়া হয়েছে। যদি এ মুহূর্তে বনবিভাগ বাজার লাগোয়া বেদখল বনভূমি উদ্ধারে সহযোগিতা চান, আমরা উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।

আরও খবর