টেকনাফে পুলিশের অভিযানকালে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে জুয়েলার্স মালিকের মৃত্যু!

বিশেষ প্রতিবেদক :

কক্সবাজারের টেকনাফে বৃদ্ধা নারীকে হত্যার পর বস্তাবন্ধি করে খালে ফেলে দেয়ার ঘটনার প্রধান আসামি ছৈয়দ হোসেন মামুনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে মামুনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে জুয়েলার্সে বিক্রি করা বৃদ্ধা নারীর লুন্ঠিত স্বর্ণালংকারও উদ্ধার করা হয়েছে।

তবে লুন্ঠিত স্বর্ণালংকার উদ্ধার অভিযানে যাওয়া পুলিশের ভয়ে ৪ তলা ছাদ থেকে লাফ দিয়ে মৃত্যু বরণ করেছেন চম্পা জুয়েলার্স নামের প্রতিষ্ঠানের মালিক দোলন ধর।

গত সোমবার (১ জুলাই) দিবাগত রাতে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের রুহুল্যার ডেবা এলাকার খাল থেকে বস্তাবন্ধি অবস্থায় জাহেদা খাতুন (৮২) নামের বৃদ্ধা নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত নারী সাবরাং ইউনিয়নের রুহুল্যার ডেবা গ্রামের বাসিন্দা ছৈয়দ আহমদের স্ত্রী। গ্রেপ্তার ছৈয়দ হোসেন মামুন ওই এলাকার হোসেন আহমদের ছেলে।

ছাদ থেকে লাফ দিয়ে নিহত দোলন ধর (৩২) রামু উপজেলার রাজারকুল এলাকার সোনারাম ধরের ছেলে এবং টেকনাফ বাজারের চম্পা জুয়েলার্সের মালিক।

টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি বলেন, গত সোমবার (১ জুলাই) দিবাগত রাতে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের রুহুল্যার ডেবা এলাকার খাল থেকে বস্তাবন্ধি অবস্থায় জাহেদা খাতুন নামের এক বৃদ্ধা নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার সূত্র ধরে পুলিশ ওই এলাকার এজাহার নামীয় মামলার আসামি মাইমুনা আক্তার, হাফেজ মিয়া, আব্দুল মোতালেব নামের ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করে।

এই ৩ জনের বক্তব্যের সূত্র ধরে পুলিশ মামলার প্রধান আসামি মামুনকে গ্রেপ্তারে তৎপরতা অব্যাহত রাখে। এরপর টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মহেশখালীয়াপাড়া এলাকা থেকে প্রধান আসামি ছৈয়দ হোসেন মামুনকে বুধবার মধ্যরাতে গ্রেপ্তার করা হয়।

টেকনাফে বৃদ্ধা নারী হত্যার প্রধান আসামি

গ্রেপ্তারের পর মামুন স্বীকার করে তার স্ত্রী মাইমুনা এবং অন্যান্য সহযোগী আসামিরা মিলে বৃদ্ধা জাহেরা খাতুনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার পর স্বর্ণালংকার লুট করে। এরপর বস্তাবন্দি করে খালে ফেলে দেয়। লুন্ঠিত স্বর্ণালংকার টেকনাফের লামার বাজারস্থ অংছিং মার্কেটে অবস্থিত চম্পা জুয়েলার্স নামক দোকানে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে।

মামুনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ চম্পা জুয়েলার্স নামক দোকানে অভিযান পরিচালনা করে বৃদ্ধার ব্যবহৃত ১২ আনা ওজনের ১টি স্বর্ণের চেইন, ৬ আনা ওজনের এক জোড়া কানের দুল, ১টি ০৫ রত্তি ওজনের নাকফুল এবং ৩ আনা ওজনের কানের চেইন সহ ১ ভরি ৭ আনা ৫ রত্তি স্বর্ণ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে বলে জানান ওসি।
ওসি বলেন, মামুনকেও সংশ্লিষ্ট মামলায় আদালতে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, নিহত বৃদ্ধা নারীর লুন্ঠিত স্বর্ণালংকার উদ্ধার অভিযানে যাওয়া পুলিশের ভয়ে ৪ তলা ছাদ থেকে লাফ দিয়ে চম্পা জুয়েলার্সের মালিক দোলন ধরের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

আহতাবস্থায় চকরিয়া উপজেলার মালুমঘাট মেমোরিয়াল খ্রিস্টান হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজারকূল ইউপি চেয়ারম্যান মুফিজুর রহমান।

স্বজনদের বরাতে তিনি বলেন, দোলন ধর ও তার ভাই রতন ধর মিলে টেকনাফ পৌর এলাকার বাজারে স্বর্ণের দোকান করতেন। বুধবার রাতে দোলন কোন এক কারণে আহত হয়েছেন। পরে তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এসময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। কিন্তু স্বজনরা তাকে সেখানে না নিয়ে চকরিয়া উপজেলার মালুমঘাট মেমোরিয়াল খ্রিস্টান হসপিটাল নিয়ে যান। এসময় হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক দোলনকে মৃত ঘোষণা করেন।

স্থানীয় এ ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘পরে দোলনের মরদেহ রাজারকূলে নিজের বাড়ীতে আনা হয়। এসময় স্বজনরা বিষয়টি আমাকে অবহিত করলে আইনগত জটিলতা এড়াতে লাশের ময়নাতদন্তের জন্য পরামর্শ দিয়েছি।’

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) মো. আশিকুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রেরণ করা দোলন ধর নামের এক যুবককে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। কিন্তু হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা প্রতিবেদন এবং নিহতের শরীরের আঘাতের ধরণে বলা যায়, দোলন ধর উঁচু কোন স্থান থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন। নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে বলে জানান আশিকুর রহমান।

টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি বলেন, দোলন ধর মৃত্যুর বিষয়টি বৃহস্পতিবার দুপুরের পর জানা গেছে। প্রাপ্ত তথ্য মতে বৃদ্ধা নারীর লুন্ঠিত স্বর্ণালংকার উদ্ধারে পুলিশ অভিযানে যায় চাম্পা জুয়েলার্সে। এই সময় জুয়েলার্স সমিতির নেতারা সাথে ছিলেন।

অভিযানে রতন ধর স্বর্ণ কিনে নেয়ার সত্যতা স্বীকার করে পুলিশকে সহযোগিতা করেন। স্বর্ণগুলো পুলিশে ফিরিয়েও দেন। এর মধ্যে পুলিশের অজান্তে দোলন ছাদে গিয়ে দরজা বন্ধ করে ছাদ থেকে লাফ দেন। এতে আহত হওয়ার পর চিকিৎসাধিন অবস্থায় মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে।

আরও খবর